Home জাতীয় হোটেলে কাজ করে সংসার চালান এই জনপ্রতিনিধি

হোটেলে কাজ করে সংসার চালান এই জনপ্রতিনিধি

51

ডেস্ক রিপোর্ট: ঘর, জমি কিছুই নেই তাঁর। স্বামীকে নিয়ে খাসজমিতে টিনের চালাঘরে থাকেন। স্বামী পান বেচেন। সংসার চালাতে তিনি খাবার হোটেলে কাজ করেন। আবার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ডাক পড়লে ছুটে যান সেখানে। সরকারি কোনো সাহায্য–সহযোগিতা এলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি–বণ্টন করে দেন।

তিনি খোদেজা খাতুন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপেজলার বারুহাস ইউনিয়নের ৩ নম্বর সংরক্ষিত আসনের (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) দুবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী খোদেজার বয়স এখন ৭০। এই বয়সেও এক বেলার জন্যও ছুটি নেই তাঁর। হয় হোটেল–রেস্তোরাঁয়, নয়তো জনপ্রতিনিধির কাজ নিয়ে সারাক্ষণই ব্যস্ত তিনি। এলাকার অনেক মানুষের কাছে তিনি সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেকের কাছে রোল মডেল।

গত শুক্রবার সকাল ১০টায় তাড়াশ বাজারের হোটেলে সাহা অ্যান্ড সন্সে গিয়ে খোদেজাকে সবজি কুটতে দেখা গেল। এ সময় তিনি বলেন, সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে ১ হাজার ৭৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৬ ভোট। এর আগেরবারের নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন তিনি।

আজকের দিনে এমন সৎ জনপ্রতিনিধি বিরল বলে মনে করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের পরিচালক শরিফ খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এখনো এমন জনপ্রতিনিধি আছেন, তাঁকে না দেখলে জানতামই না। দেশে যেখানে প্রায় সব জনপ্রতিনিধি নিজের পদকে ক্ষমতা ও অর্থ বানানোর হাতিয়ার মনে করেন, সেখানে খোদেজা খাতুন আমাদের রোল মডেল। তিনি যেন সৎভাবে বেঁচে থাকতে পারেন, এ জন্য তাঁর পাশে দাঁড়ানো উচিত।’

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হোটেলে বাসন ধোয়া, মাছ-তরকারি কোটা ও মসলা বাটার কাজ করেন খোদেজা। এ জন্য দিনে পারিশ্রমিক পান ১৫০ টাকা। সঙ্গে দুই বেলা খাওয়া। হোটেলে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকজন ভালোবেসে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তাঁদের ডাকে সাড়া দিই। সরকারি যত সুবিধা আসে, গরিব জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দিই।’

ইউনিয়ন পরিষদে কাজ থাকলে খোদেজা আগে থেকে ছুটি নেন বলে জানিয়েছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, প্রায় ৬ কিলোমিটার দূর থেকে এসে কাজ করেন খোদেজা।

প্রতি তিন মাস পর একজন ইউপি সদস্য সম্মানী ভাতা হিসেবে ১০ হাজার ৮০০ টাকা পান বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার রায়। তিনি বলেন, তাঁর মতো এমন জনপ্রতিনিধি বিরল।

স্বামী আবু তাহেরের সঙ্গে উপজেলার বিনসাড়া বাজারের পশ্চিম পাশে মনিপুকুরপাড়ে সরকারি খাসজমিতে এক কক্ষের একটি টিনের ঘরে থাকেন খোদেজা। টিনের বেড়া ও মাটির মেঝের ঘরটিতে গরম–শীত সব ঋতুতেই কষ্ট হয় বয়স্ক এ দম্পতির। সেখানে নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী খোদেজা খাতুনের জন্ম ১৯৫২ সালের ২০ নভেম্বর। উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের কেতাব আলীর মেয়ে তিনি। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় খোদেজা ছোটবেলায় গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা শুরু করলেও তা আর এগোয়নি। অভাবের সংসারে কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। একসময় রাস্তায় মাটি কাটার কাজও করেন।

পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মনিপুকুরপাড়ে খাসজমিতে। এলাকার লোকজন তাঁকে পছন্দ করেন। তাঁরাই তাঁকে একসময় নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। প্রথমবার বিফল হলেও দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হন খোদেজা।

তাড়াশ সদরের খুঁটিগাছা গ্রামের আবু তাহেরের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও সেখানেই বসবাস করছেন এই দম্পতি। বিনসাড়া বাজারে পান-সুপারির দোকান আছে তাঁর।

তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীন তালিকায় খোদেজা খাতুনের নাম রয়েছে। তাঁর জন্য আর যা যা করা যায়, করা হবে। এ জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।-প্রথম আলো