Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস হলে ‘ছায়া প্রশাসন’ চালায় ছাত্রলীগ

হলে ‘ছায়া প্রশাসন’ চালায় ছাত্রলীগ

41

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের মূল ভবনের সামনে গত সোমবার রাতে একদল শিক্ষার্থী ‘এক দফা এক দাবি, সিট চাই সিট চাই’, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, সিট আমার অধিকার’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। হলের মূল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেওয়ার কারণ, সেই ভবনে বাস করেন ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

শিক্ষার্থীরা হলের প্রাধ্যক্ষ বা প্রভোস্টের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো স্লোগান দেননি। আবাসিক শিক্ষকদের বাসভবনের সামনেও তাঁরা যাননি। কেন তাঁরা হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে দাবি তুলে ধরলেন, তা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, হলটির তিনটি ভবনের ৩০৫টি কক্ষে ১ হাজার ২৮৮টি আসন আছে। এসব আসনের প্রায় সবই ছাত্রলীগের দুই নেতার নিয়ন্ত্রণে। তাই ছাত্রলীগ নেতাদের কাছেই দাবি জানিয়েছেন। এত দিন তাঁরা ‘গণরুম’-এ থেকে নিয়মিত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এর বিনিময়ে গণরুম থেকে তাঁদের ‘ভালো’ রুমে নেওয়ার কথা।

শুধু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল নয়, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১৩টি আবাসিক হলের সব কটির চিত্র কমবেশি একই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পরিচালনার জন্য প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সমন্বয়ে হল প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু হলের নিয়ন্ত্রক কার্যত ছাত্রলীগ। এই সংগঠনই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হলে কারা থাকবে, কে কোন আসনে থাকবে, তা ঠিক করে। অনেকটা ছায়া প্রশাসন গড়ে তুলেছে তারা।
ওদিকে হলের প্রাধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা থাকেন বাংলোয়। আবাসিক শিক্ষকেরাও বেশ কম ভাড়ায় আকর্ষণীয় বাসা পান। আছে বিশেষ ভাতাও। কিন্তু অভিযোগ আছে, তাঁরা নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করেন না।
এটি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের চিত্র নয়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও ঘটত একই ঘটনা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে দিনবদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, সেটা পরবর্তী সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরিণত হয় শুধু দলবদলে।

অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের দাবি, হলগুলো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণেই আছে। তিনি বলেন, ‘আমরাও হলের শিক্ষার্থী ছিলাম, প্রশাসনের মাধ্যমেই হল পরিচালিত হতে দেখেছি। এখনো সেভাবেই আছে। এর মধ্যে বড় আকারের পরিবর্তন তো চোখে পড়ে না।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যা ঘটছে, তা প্রকাশ্যেই ঘটছে। হলে ‘গেস্টরুম’-এর নামে নিয়মিত সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ নিয়ে অনেক ঘটনা গণমাধ্যমেও আসছে।
সেই সময়, এই সময়
১৯২১ সালে এই ভূখণ্ডের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও সামাজিক গবেষণা, পাঠদানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অগ্রণী। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ দেশের সব গণ-আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা ছিল অসামান্য। তবে এই ঐতিহ্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কী পরিস্থিতি ছিল জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের ছাত্রজীবনে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকেরাই আবাসিক হলের আসন বণ্টন করতেন। সেভাবেই আমরা হলে থাকতাম। আইয়ুব খানের এনএসএফ কখনো কখনো অসুবিধা সৃষ্টি করত, কিন্তু আসন বণ্টন প্রশাসনই করত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন হল আছে ১৮টি (স্যার পি জে হার্টগ আন্তর্জাতিক দল বাদে)। এর মধ্যে ৫টি মেয়েদের, ১৩টি ছেলেদের। মেয়েদের হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ আছে। তবে ছেলেদের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ কার্যত ছাত্রলীগের হাতে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের এ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা তৈরি হয়েছে আবাসন-সংকটের সুযোগ নিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের মতো। ছাত্রসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার, ছাত্রীসংখ্যা ১৬ হাজারের কিছু বেশি। ছাত্রদের জন্য ১৩টি হল ও ২টি হোস্টেলে আসন আছে ১১ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেলা, উপজেলা ও গ্রাম থেকে আসা বহু সীমিত আয়ের পরিবারের সন্তানেরা ভর্তি হন। তাঁদের পক্ষে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে সন্তানের পড়াশোনা করানো কঠিন। যদিও আসন সংকটের কারণে নথিপত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে পূর্ণ আবাসিকতা দেওয়া হয় না। দ্বৈতাবাসিক হওয়া যায়। অবশ্য ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না গেলে দ্বৈতাবাসিক হয়েও হলে থাকার সুযোগ নেই।

আবাসন-সংকটের কারণ অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ খুলে শিক্ষার্থী বাড়ানো। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ২২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার। হল বেড়েছে মাত্র তিনটি। আর কয়েকটি হলে নতুন ভবন হয়েছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার আসনসংখ্যা ১ হাজার ৪০টি কমিয়েছে। যদিও এসব উদ্যোগ আবাসন-সংকট কমাতে পারেনি।

‘গণরুম’ বনাম ‘মন্ত্রিপাড়া’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হলে ওঠার সুযোগ পাওয়ার পর তাঁর স্থান হয় গণরুমে। গণরুমে প্রথম বর্ষের অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কোনো কোনো গণরুমে এক কক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে দেড় শতাধিক গণরুম রয়েছে। বিপরীতে হলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্ষগুলোতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতারা। কিছু হলে রাজনৈতিক ব্লকও আছে, যা ‘মন্ত্রিপাড়া’ নামে পরিচিত। এর বাইরের সাধারণ কক্ষেও ছাত্রদের ওঠানো, থাকতে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ।
ছাত্রদের ১৩টি হলের ৮০ শতাংশের বেশি কক্ষ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। দুটি হলের উদাহরণ দেওয়া যাক: ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে ১০৪টি কক্ষের প্রায় সব কটিই হল শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে। ২. মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ৩৮৮ কক্ষের ৭৫ শতাংশই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের একটি কমিটি রয়েছে, যার নাম ‘প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি’। হলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই—এ কথা মানতেই রাজি নন প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির। তিনি গতকাল শনিবার বলেন, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। প্রতিটি হল প্রাধ্যক্ষদের নেতৃত্বে সুষ্ঠুভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।’
যে হলে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে আসন চেয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন, সেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেনও দাবি করেন, প্রশাসনিকভাবে অন্য কারও হল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনেকেই এলাকার “বড় ভাই” বা পরিচিতদের মাধ্যমে হলে আসন বরাদ্দ পাওয়ার আগেই থাকা শুরু করে দেন। অনেকের ঢাকায় থাকার সামর্থ্য থাকে না। তাঁদের তো বের করে দেওয়া যায় না। তাঁদের কে কোন সংগঠন করে বা কী করে, তা-ও তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’

কক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও ভাগাভাগি নিয়ে হলগুলোতে প্রায়ই বিরোধে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। গত ছয় মাসে স্যার এ এফ রহমান হলে দুবার, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে দুবার, মাস্টারদা সূর্য সেন হলে একবার, কবি জসীমউদ্‌দীন হলে একবার, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে একবার এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একটি ঘটনায়ও ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।

হলের আসন নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ মানতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হলগুলোতে আবাসন-সংকট আছে, গণরুমের বাস্তবতা আছে। ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিদ্যমান বাস্তবতায় সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যেন তারা লেখাপড়া করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করি।’ তিনি বলেন, আবাসিক হলে কারও থাকা না-থাকা, কে কোথায় থাকবে না থাকবে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়।

অবশ্য সাদ্দাম যেদিন এ বক্তব্য দেন, সেদিনই খবর আসে যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেওয়ায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে এক ছাত্রকে হলছাড়া করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের নিয়ম, বিচারেও তাঁরা
ছাত্রলীগের অধীনে হলে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের যেসব অলিখিত নিয়ম মানতে হয় তার মধ্যে রয়েছে হলের ভেতর ও বাইরে ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ সালাম দিতে হবে, সালাম দেওয়ার সময় ডান হাতে ভাইদের সঙ্গে করমর্দন করতে হবে, হাত মেলানোর সময় ঝাঁকি বা চাপ দেওয়া যাবে না, টিভি কক্ষের প্রথম সারির চেয়ারগুলোতে বসা যাবে না ও রিমোট হাতে নেওয়া যাবে না, ছাত্রলীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ মানতে হবে, নিয়মিত সব কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে, অসুস্থ বা পরীক্ষা থাকলে ‘ভাইদের’ কাছ থেকে ‘ছুটি’ নিয়ে কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকা যাবে, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন করা যাবে না ইত্যাদি। ছাত্রলীগের ভাষায় এগুলো হলো হলে থাকার ‘ম্যানার’। গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের এসব ম্যানার শিক্ষা দেওয়া হয়। কেউ এসব নিয়ম অমান্য করলে বিচারের ব্যবস্থাও আছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলগুলোতে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে ছয় দিন ছাত্রলীগের প্রতিটি পক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম করায়। সাধারণত হলের অতিথিকক্ষে এ কর্মসূচি হয় বলে এর নাম গেস্টরুম। তবে কখনো কখনো হলের অন্যান্য কক্ষেও গেস্টরুম বসে। কেউ ছাত্রলীগের নিয়ম না মানলে গেস্টরুমে তাঁর বিচার হয়।

গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এস এম হল) এক ছাত্রকে পরীক্ষার জন্য গেস্টরুমে যেতে না পারায় নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে হল শাখা ছাত্রলীগের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে।

গেস্টরুমে বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের ‘র‌্যাগ’ দেওয়ার শিক্ষাও দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে র‌্যাগ দিতে যেতে বলা হয়। অভিযোগ আছে, এই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে বসা দেখলে, ক্যাম্পাসের বাইরের কাউকে পেলে নানাভাবে হয়রানি করেন। অনেক সময় টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। যেমন ২ আগস্ট প্রজিত দাস নামের এক যুবক মাস্টারদা সূর্য সেন হলের দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।

সমাধান ‘কঠিন নয়’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৯২২ কোটি টাকা। একই অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৬৫ কোটি টাকা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছ থেকে, যা মূলত জনগণের করের টাকা। হলগুলোতে সামান্য খরচে থাকা, ভর্তুকি মূল্যে নানা সুবিধা দেওয়া হয় মানুষের করের টাকায়। শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা নিতে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যেতে হয়। আর দায়িত্ব পালন না করে ভাতা নেন শিক্ষকেরা।

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সময় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্যানেল গণরুমব্যবস্থা উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু কিছুই হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখলে এবং উপাচার্য নিজেকে প্রশাসক না ভেবে শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করলে এসব সমস্যা সমাধান করা কঠিন কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘প্রশাসকেরা নিজেকে শিক্ষক ভাবতে পারলে সেই স্বকীয়তাটা বজায় রাখা যায়। কিন্তু ওই জায়গাটাতেই বোধ হয় আমরা ব্যর্থ। শিক্ষক না হয়ে আমরা রাজনৈতিক কর্মী বা নেতার মতো আচরণ করি।’
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় সব কটিতেই হল নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। এমনকি বড় কলেজগুলোর চিত্র একই। শিক্ষার্থীদের কাছ টাকা নিয়ে আসন দেওয়া, হল থেকে বের করে দেওয়া, মারধর, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারাই মূলত বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ক্ষমতাসীন দল সীমাহীন কর্তৃত্ব করে। এখন দেশে প্রকৃতপক্ষে কোনো বিরোধী নেতৃত্ব না থাকায় সরকারি দলের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে গেছে।

শিক্ষকদের দলাদলিও ক্ষতির কারণ। তিনি বলেন, সরকার যদি একটু সংযত হতো, তাহলে শিক্ষকেরাও সংযত হতেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও রাজনৈতিকভাবে অবনতি হয়েছে এবং হচ্ছে৷ এ ক্ষেত্রে ভালো করার জন্য মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
প্রথমআলো