Home রাজনীতি স্মারকলিপি প্রত্যাখ্যান, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধকে অস্বীকার করা: বাসদ

স্মারকলিপি প্রত্যাখ্যান, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধকে অস্বীকার করা: বাসদ

58

স্টাফ রিপোটার: আজ ৯ এপ্রিল রবিবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বাসদ (মার্কসবাদী)’ এর উদ্যোগে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে স্মারকলিপি ফেরত নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা। উপস্থি ছিলেন নির্বাহী ফোরামের সদস্য ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, সীমা দত্ত, রাজু আহমেদ, মাসুদ রেজা, তসলিমা আক্তার বিউটি প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যটি সংযুক্ত করে দেয়া হল।

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হয়েছে

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

‘বাসদ (মার্কসবাদী)’ আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের দলের বক্তব্য আপনাদের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

আপনারা জানেন, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বজনীন রেশন চালু করা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করা, কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রদান, সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করাÑ এই ৫ দফা দাবিতে আমাদের দল ‘বাসদ (মার্কসবাদী)’ এর পক্ষ থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৩ মাস ধরে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর পল্টন মোড়ে এই কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ পরবর্তীতে আমরা সংগৃহিত স্বাক্ষর ও স্মারকলিপি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যাই এবং রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে তা গ্রহণ করা হয়।

গত পরশুদিন (৭ এপ্রিল, ২০২৩) রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আমাদের দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানাকে ফোন করে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমরা ধারণা করেছিলাম উত্থাপিত দাবিসমূহ নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর আমরা এক ভিন্ন চিত্র দেখলাম। সেখানকার কর্মকর্তারা আমাদের স্বাক্ষর ও স্মারকলিপি ফেরত নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। অর্থাৎ কার্যতঃ তারা এই স্মারকলিপি প্রত্যাখ্যান করলেন।

কোন দাবি বা দাবিসমূহকে কেন্দ্র করে স্বাক্ষর সংগ্রহ ও স্মারকলিপি পেশ এদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই এই কর্মসূচি পালন করে থাকে। আমাদের দেশে শুধু নয়, দেশে দেশে এটি একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবেই পরিচিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক পথে দাবি জানানোর এটি একটি অন্যতম পন্থা।

এই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এ ধরনের আচরণ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। ইতিপূর্বে এ ধরনের ঘটনা কখনও ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা আরও বিস্মিত হয়েছি এই কারণে যে, এটা কেবল একটি দলীয় কর্মসূচি নয়, এখানে উত্থাপিত দাবিসমূহ এ দেশের মানুষের জ্বলন্ত দাবি এবং হাজার হাজার মানুষ একে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। এই স্বাক্ষর ও স্মারকলিপিকে প্রত্যাখ্যান মানে দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের দ্বারা স্বীকৃত দাবিগুলোকেই প্রত্যাখ্যান, হাজার হাজার জনগণের মতামতকে প্রত্যাখ্যান। দাবিসমূহ আমলে নিয়ে কোনটা বাস্তবায়ন সম্ভব, কোনটা সম্ভব নয়, কোনটা অযৌক্তিক দাবিÑ সেসব নিয়ে আলোচনা রাষ্ট্রপতি বা তাঁর কোন প্রতিনিধি আমাদের সাথে করতে পারতেন। গণমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য রাখতে পারতেন। কিন্তু স্মারকলিপি প্রত্যাখ্যান করার মতো ঘটনা গণতান্ত্রিক সৌজন্যটুকু আর রাখলো না।

আমরা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং জনমনে এ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়ছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের তীব্রতা বেড়েছে। এই সংকটজনক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, জনগণের মতামত ও দাবিসমূহ আমরা রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছিলাম। এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল তাদের মতামত ও দাবি ব্যক্ত করবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা দরকার, যার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সৌজন্যতা ও সহনশীলতা। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এমন আচরণে জনমনে এ ধারণা আরো দৃঢ় হবে যে, সরকার ভিন্ন রাজনৈতিক মতামত আর শুনতেও চাইছেনা। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আঘাত করা হলো। এ দৃষ্টান্ত দেশের জন্য কোন শুভ ফল বয়ে আনবেনা।

স্মারকলিপিতে উত্থাপিত দাবিগুলো আমরা মন থেকে গড়ে নিয়ে লিখিনি। এ দাবি জনগণেরই দাবি। তারা এ দাবিতে তাদের সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দল তাদের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা সম্পূর্ণ ঘটনাটি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরলাম।

এ কর্মসূচিতে আমরা জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি, তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের ভবিষ্যত সংগ্রামেও আপনাদের পাশে পাব এই প্রত্যাশা করি।