Home জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের দৃঢ় নেতৃত্বই মুখ্য ছিল

স্বাধীনতা অর্জন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের দৃঢ় নেতৃত্বই মুখ্য ছিল

41

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আলোকচিত্রে তাজউদ্দীন আহমদ” শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। সেন্টার ফর তাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ এন্ড এক্টিভিজমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সিতারা পাবলিকেশনের উদ্যোগে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালে তাজউদ্দীন আহমদের প্রিন্সিপাল এইড ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ শারমিন আহমদ, মেজো কন্যা সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি, কনিষ্ঠ কন্যা, বিশিষ্ট লেখক ও সমাজকর্মী মাহজাবিন আহমদ মিমি, একমাত্র পুত্র ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ, অরোমা দত্ত, সাংসদসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, সাবেক রাষ্ট্রদূত, গবেষক, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ঢাকার ভেতর ও বাইরে থেকে আগত প্রায় ৪০০ অতিথি।

গ্রন্থটির সংকলক ও আয়োজক সংগঠন সিতারার সভাপতি আফতাব বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন এমন একজন প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও প্রচারবিমুখ ব্যক্তিত্ব, যার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় প্রতিটি কাজ সুচারুরূপে সুসম্পন্ন হলেও ক্যামেরা তাকে খুব কমই ধারণ করতে পেরেছে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম সারথি, যুদ্ধজয় এবং রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোর অন্যতম কারিগর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ সহযোদ্ধা, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের প্রতিটি আলোকচিত্রই একেকটি ঐতিহাসিক দলিল। যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিরল সব আলোকচিত্র একত্রিত করে সেগুলোর প্রকৃত বিবরণসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ‘পিকটোগ্রাফী’ প্রকাশ করার দুরূহ এ প্রয়াস শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে সিতারার উদ্যোগে। দীর্ঘ দিনের এ সুকঠিন কর্মপ্রচেষ্টায় প্রাথমিক সাফল্য অর্জিত হওয়ায় সিতারা পরিবার সত্যিই অভিভূত। এ গ্রন্থটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গতাজের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত করবে, তাকে জানার আগ্রহে উদ্বেলিত করবে- সেটাই আমাদের ছোট্ট চাওয়া।’

অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এ দিন স্কুলগামী ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রামাণ্যচিত্র স্বচক্ষে অবলোকন করে, যা তাদের মাঝে দেশপ্রেম ও ইতিহাস-সচেতনতা সৃষ্টি করবে।

অনুষ্ঠানে ‘তাজউদ্দীন আহমদ রিসোর্স সেন্টার’ এর উদ্বোধন করা হয়। সেন্টারের উদ্যোক্তা আফতাব জানান, তাজউদ্দীন আহমদের জীবন ও কর্মের যাবতীয় দলীলপত্র ও তাকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে যেসব লেখনি, অডিও, ভিডিও, গবেষণা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে; তার সবকিছু একত্রে সংরক্ষণ করা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী যে কাউকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেতে সহায়তা করা- এ সেন্টারের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

অনুষ্ঠানে আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ এ আলোকচিত্র প্রন্থ উন্মোচনের মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদের আলোকধারা যেন ফের ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। ইতিহাসকে জানতে হলে এ মহান মানুষটিকে অবশ্যই জানতে হবে।’

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ, এ দুজন মানুষ এক সত্তায় মিলিত হয়েছিলেন বলেই এ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হল।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘একাত্তরে তাজউদ্দীন আহমদের এমন কোন বক্তব্য নেই, যেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন নি, তার মুক্তির কথা বলেন নি। স্বাধীনতা অর্জন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের দৃঢ় নেতৃত্বই মুখ্য ছিল।

শারমিন আহমদ বলেন, ‘এখানে শুধু তাজউদ্দীন আহমদের আলোকচিত্র প্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয় নি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এ আলোকচিত্র প্রন্থের মাধ্যমে ইতিহাসের পর্দা উন্মোচিত হল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় নি, এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মানবিক সমাজ গঠন, ন্যায় ও সাম্যের পক্ষে আমাদের এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’

মাহজাবিন আহমদ মিমি সিতারার প্রশংসা করে বলেন, ‘এ কাজ যেন ইতিহাসের নতুন সংযোজন, খÐিত ইতিহাসকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে তরুণদের এ প্রয়াস সফল হোক।’

সোহেল তাজ বলেন, ‘এ আলোকচিত্র প্রন্থের কাজটি নিঃসন্দেহে অনন্য ছিল। জাতির ভবিষ্যতকে গড়তে হলে অতীতকে সম্মান জানাতে হবে, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান জানাতে হবে ও তাদের আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সিতারার সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিপাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ‘আমার বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।