Home কুটনৈতিক ও প্রবাস যে কারণে বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব বসানোর সময় পেছালো

যে কারণে বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব বসানোর সময় পেছালো

33

ডেস্ক রিপোর্ট: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন পিছিয়ে যাচ্ছে। রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পিসিআর ল্যাব বসানো সম্পন্ন হয়নি। এতে সংকটে পড়েছে লাখো যাত্রী।

গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে করোনার র‌্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সপ্তাহের মধ্যে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ল্যাব বসানো নিয়ে তিন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে গত ২০ দিনেও ল্যাব বসানো সম্পন্ন হয়নি। অথচ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাব বসানো সম্ভব। পিসিআর ল্যাব বসানোর ক্ষেত্রে শুরু থেকে অসহযোগিতা করে আসছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে তারা খোলা আকাশের নিচে ছাদে ল্যাব বসানোর জায়গা নির্ধারণ করেছিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিন বিমানবন্দরে নির্মিতব্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। দুই জনই রবিবার থেকে তা চালু হওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে তা চালু না হওয়ায় আড়াই লাখ প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অনেক প্রবাসী শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পিসিআর ল্যাব স্থাপনে অনুমোদন পাওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, পিসিআর ল্যাব মনিটরিং করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। স্বাস্থ্য বিভাগ ল্যাব স্থাপনের জন্য বিমানবন্দরে জায়গাও নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ল্যাব স্থাপনের দায়িত্ব পাওয়া ছয়টি প্রতিষ্ঠান সেখানে ডাটা সেন্টারও চালু করেছিল। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা সেখানে থেকে তাদের উঠিয়ে দিয়ে বলেন, এখানে কোনো ল্যাব বসানো যাবে না। বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব বসানো নিয়ে প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছেন ওই কর্মকর্তা। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র কিনা সেই প্রশ্ন এখন অনেকের। অবশ্য সিভিল এভিয়েশনের ওই কর্মকর্তা একটি প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব বসাতে দেওয়ার পক্ষে।

এদিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মঙ্গলবার করোনার পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। যদিও এর আগে গত শনিবার করোনা পরীক্ষা শুরুর কথা বলেছিল কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের রবিবার দুপুরে করোনার পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কোনো সমস্যা নেই। সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারেও আর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই। তবে আরও ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। মাহবুব আলী বলেন, এই সময়ে যাত্রীদের পিসিআর পরীক্ষা করা লাগবে। এ ছাড়া এয়ারলাইনগুলোরও টিকিট বিক্রি করা লাগবে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপন করা হয়ে গেছে। এর নির্মাণকাজ শেষ। বিমানবন্দরের ৯৬ জন কর্মকর্তার নমুনার টেস্ট রান চলছে। যদি সাকসেসফুল টেস্ট রান হয়ে যায়, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেবিচককে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকেলে একটা সংখ্যা জানিয়ে দেবে, কতজন যাত্রী এখানে পরীক্ষা করতে পারবেন। সে অনুপাতেই এয়ারলাইন্সগুলোকে অবহিত করা হবে টিকিট বিক্রি শুরু করার জন্য।

তবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময়ের প্রয়োজন জানিয়ে মফিদুর রহমান বলেন, এর জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীদের দুটো পরীক্ষা করা দরকার। একটি ৪৮ ঘণ্টা আগে, আরেকটি যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে। যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার কাজ করছে, তাঁদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে। বেবিচকের চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যমতে, সেটির সম্মতিপত্র রবিবার রাতের মধ্যে চলে আসার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টেস্ট রানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে এর মধ্যে আরব আমিরাতের সম্মতি চলে এলে এয়ারলাইনগুলোকে টিকিট বিক্রি শুরু করতে জানিয়ে দেওয়া হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীদের জন্য পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা আছে।-ইত্তেফাক