Home জাতীয় স্বপ্নে জ্বীনের নির্দেশ পেয়ে গর্ভধারিনী মা কর্তৃক কন্যা সন্তানকে হত্যা !

স্বপ্নে জ্বীনের নির্দেশ পেয়ে গর্ভধারিনী মা কর্তৃক কন্যা সন্তানকে হত্যা !

40

আহমেদ জালাল : স্বপ্নে জ্বীনের নির্দেশ পেয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাদুরতলা গ্রামে ফের সিমা বেগম (২৬) নামে গর্ভধারিনী মা কর্তৃক ৪৩ দিনের কন্যা শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরআগে একই উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামে মা কর্তৃক তিন মাসের শিশু পুত্রকে পানির বালতিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত মা ছালেহা বেগম কারাগারে রয়েছেন।
সিমা বেগমের স্বজন ও প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, সিমা বেগম আশা করছিলেন তাঁর কন্যা সন্তানের গায়ের রং ফর্সা হবে। কিন্তু কন্যা শিশু রুকাইয়ার গায়ের রং কালো ছিল। এতে অসন্তুষ্ট ছিলেন সিমা বেগম। এ কারণে তিনি রুকাইয়াকে তেমন আদর-যত্নও করতেন না। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিমা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রুকাইয়া অনেক কান্না করছিল। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গলাটিপে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেন। এর কিছুক্ষণ পর সিমা বেগম আবার ভিন্ন কথা বলেন। বলেন, ‘আমার কাছে জিন আসে। জিনের নির্দেশে আমি রুকাইয়াকে হত্যা করেছি।’ গৌরনদী থানা হাজতে থাকা হিমা আক্তারের কাছে নিজ সন্তানকে হত্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি স্বপ্নের নির্দেশ পেয়ে ওকে হত্যা করেছি। স্বপ্নে আমাকে বলা হয়, ও থাকলে পরিবারের অকল্যান হবে। এ প্রসঙ্গে মামলার বাদি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী সুস্থ্য ও স্বাভাবিকই ছিল। তার কোন মানষিক সমস্যা নেই, স্ত্রীর সাথে আমার কোন দাম্পত্য কলহ বা মনমালিন্যও ছিল না কিন্তু কেন সে এ ধরণের কাজ করেছে তা জানি না।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে শনিবার গৌরনদী মডেল থানায় স্ত্রীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ সোমবার দিবাগত রাতে হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি মা সিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল আদালতে সোপর্দ করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মোঃ মোক্তার মেলকারের পুত্র দেলোয়ার হোসেন ২০১৬ সালে একই উপজেলার পাশ্ববর্তি বাদুরতলা গ্রামের মৃত হালিম আকনের কন্যা সিমা বেগমকে সামাজিকভাবে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বারে সিমা বেগম অন্তসত্ত্বা হলে সে তাঁর মায়ের কাছে বাদুরতলা গ্রামে চলে যান সেখানে ৪৩ দিন আগে একটি কন্যা সন্তান প্রশব করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সিমা বেগম সন্তান প্রসাবের পূর্ব থেকেই একই উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের বাবার বাড়িতে অবস্থান করে আসছিল। সিজারিয়ান অস্ত্রপাচারের কন্যা শিশু জন্ম নেওয়া পর নাম রাখা হয় খাদিজা ইসলাম রুকাইয়া (বয়স ৪৩ দিন)। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১০টার দিকে মা সিমা বেগম শিশুকে পুকুরে ফেলে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে মা হিমা আক্তার কন্যা শিশু খাদিজা ইসলাম রুকাইয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিৎকার শুরু করলে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পাশে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে। সিমা বেগম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী। দেলোয়ার হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় থাকেন। তিন বছরের এক ছেলে ও শিশু রুকাইয়াকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থাকতেন সিমা বেগম। পুলিশ জানায়, সিমা বেগম তার শিশুকন্যা রুকাইয়াকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী উমেদ আলী গ্রামের বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিমার বাবা মৃত: আব্দুল হালিম আকনের ঘর থেকে রুকাইয়া নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা দেলোয়ার হোসেন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
৪২ দিন বয়সী শিশু রুকাইয়াকে হত্যার কারণ ও রহস্য উদ্ঘাটন তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনার পর সিমা বেগমের স্বজন, বাবার বাড়ির লোকজন ও তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সদস্যরা। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. ইকবাল হোছাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিমা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে পুলিশের জেরার মুখে সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন সিমা। সিমা বেগমের স্বজন ও প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিমা বেগম আশা করছিলেন তার কন্যাসন্তানের গায়ের রং ফর্সা হবে। কিন্তু রুকাইয়ার গায়ের রং কালো ছিল। এতে অসন্তুষ্ট ছিলেন সিমা বেগম। এ কারণে তিনি রুকাইয়াকে তেমন আদর-যত্নও করতেন না। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিমা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রুকাইয়া অনেক কান্না করছিল। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গলাটিপে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেন। এর কিছুক্ষণ পর সিমা বেগম আবার ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তার কাছে জিন আসে। জিনের নির্দেশে তিনি রুকাইয়াকে হত্যা করেছেন।’ এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, ওই নারীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য : গত ১৮ ডিসেম্বর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বরদুলালী গ্রামে মা ছালেহা বেগম (৩৪) নিজের সাড়ে তিন মাসের ছেলে জুবায়ের তালুকদারকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। স্বামী সাগির হোসেন তালুকদার বাদী হয়ে তাঁর স্ত্রী ছালেহা বেগমকে একমাত্র আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় মা ছালেহাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে সে সন্তান হত্যার দায় আদালতে স্বীকার করে। ছালেহা বেগম বর্তমানে কারাগারে হাজতে রয়েছেন।