Home রাজনীতি সুশাসনের পথে এগুতে পারলেই বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় জাগরুক থাকবেন–ইনু

সুশাসনের পথে এগুতে পারলেই বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় জাগরুক থাকবেন–ইনু

30

ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আজ ১৩ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
দলীয় সভাপতি জাসদ সভাপতি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, নুরুল আখতার, ফজলুর রহমান বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলী চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, মোহাম্মদ মোহসীন, রোকনুজ্জামান রোকন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুন্নবী, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মাইনুর রহমান, ঢাকা মহানগর পূর্ব জাসদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শাহ আলম, জাতীয় কৃষক জোট নেতা কামরুজ্জামান ফসি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন) কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী প্রমূখ।
সভাপতির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে বড় ট্রাজেডি, বিয়োগান্তক ঘটনা। খুনীরা এ হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে জঘন্যতম বর্বরতা, নির্মমতা, পৈশিচিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। খুনীরা বঙ্গবন্ধুকে শুধু শারীরিকভাবে হত্যা করেনি, খুনীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। খুনীরা হত্যাকান্ডের পর পাকিস্তানী আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে সংবিধান থেকে চার নীতি মুছে ফেলে, ইতিহাসের ভাগাড় থেকে কুদ্যাত দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তুলে আনে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্বাসিত করে, বেতার-টিভি-গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নামটি উচ্চাণ বন্ধ করে দেয়, রাজাকার-আলবদর-পাকিস্তানী দালালদের সমাজে-রাষ্ট্রে-রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পথে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা আর রাজাকারদের মহিমান্বিত করা শুরু হয়। মোস্তাক-জিয়া-খালেদা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পক্ষে, হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গায়, ওকালতি করে, খুনীদের পুরস্কৃত করে। হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে রাখার মত জঘন্য অমানবিকতা দেখায়। তিনি বলেন, খুনীরা এখানেই ক্ষান্ত না হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দ্বিতীয় অপচেষ্টা চালাতে থাকে। একই অংশ হিসাবে জাতির সবচাইতে বিয়োগান্তক ঘটনার দিনে বেগম খালেদা জিয়া তার ভুয়া জন্মদিনের তারিখ নির্ধারণ করে পৈশাচিক উল্লাস প্রদর্শন করতে থাকে। বেগম খালেদা জিয়ার দুই উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজউদ্দন আহমেদ ও ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বার বার প্রকাশ্যেই নিষেধ করা সত্ত্বেও বেগম জিয়া ও বিএনপি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে বেগম জিয়ার আত্মাটা বাংলাদেশ ও বাঙালির আত্মা না, পাকিস্তানি প্রেতাত্মা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার জঘন্য রাজনীতি বিএনপি-জামাতসহ কতিপয় দল এবং তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী এখনো বহন করে চলেছে। এরা দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দেয়ার অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী করার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের রাজনীতি করে চলেছে। এরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রু এরা বাংলাদেশের জন্য বিপদ, হুমকী এবং বিষবৃক্ষ। জনাব ইনু বলেন, পাকিস্তানপন্থার রাজনীতিকে পরাজিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি-লুটপাট-দলবাজী-ক্ষমতাবাজীর অবসান করে সুশাসনের পথে এগুতে পারলেই বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় জাগরুক থাকবেন।

সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি তার ভাষণে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উপর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির প্রতিশোধমূলক সবচেয়ে ভয়ংকর আঘাত। তিনি বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই নয়, জাসদসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ধ্বংস করাই ১৫ আগস্টের খুনীদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। খুনী মুশতাকের ৮৩ দিনের শাসনে আওয়ামী লীগ, জাসদ, সিপিবিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন তারই প্রমাণ দেয়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা হলে, পাকহানাদার বাহিনীর উচ্ছেদের সাথে সাথেই পাকিস্তানের রেখে যাওয়া প্রশাসন-আইন-বিধি-ব্যবস্থা এবং পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী সামরিক-বেসামরিক অফিসার-কর্মচারীদের উচ্ছেদ করা হলে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বীজ তলাতেই ধ্বংস হয়ে যেতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মত বিয়োগান্তক ঘটনা এড়ানো যেতো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মহিমা সমুন্নত রাখতে সংবিধান বর্নিত চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা-জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। চার মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক সকল আইন-কানুন-বিধি-ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করেই বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে শান্তি দিতে হবে।
আলোচনা সভার পূর্বে জাসদ এবং সহযোগী সংগঠন ঢাকা মহানগর জাসদ, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ, জাতীয় নারী জোট, জাতীয় যুব জোট, জাতীয় কৃষক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন) এর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।