Home খেলা সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

52

চট্টগ্রাম অফিস: সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশের লজ্জাজনক হার। ইশান কিশানের ডাবল ও বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ালো সফরকারী ভারত।
আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভারত ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে রান বিবেচনায় এটিই ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার টাইগারদের। আর নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় বড় ব্যবধানে হার বাংলাদেশের।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান করে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান ভারতের। জবাবে ১৮২ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। শেষ লড়াইয়ে হারলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস।
শিখর ধাওয়ানের সাথে ইনিংস শুরু করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মার জায়গায় সিরিজে প্রথমবারের মত খেলার সুযোগ পাওয়া কিশান। পঞ্চম ওভারে নামের পাশে ৩ রান রেখে বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হন ধাওয়ান।
ধাওয়ানের বিদায়ে উইকেটে আসেন বিরাট কোহলি। সপ্তম ওভারে মিরাজের বলে লিটন ক্যাচ ফেললে ১ রানে জীবন পান কোহলি।
ব্যাট হাতে ভারতের রানের চাকা সচল রাখেন কিশান। ৪৯ বল খেলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ১৭তম ওভারে ভারতের রান ১শ স্পর্শ করে। ২০তম ওভারে মিরাজের বলে সাকিব ক্যাচ মিস করলে জীবন পান কিশান। মিড উইকেট থেকে দৌঁড়ে ওয়াইড লং অনে কঠিন ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি সাকিব। তখন ৮৪ রানে ছিলেন কিশান।
২৪তম ওভারে ৮৫ বলে ১০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান কিশান।
১০৩তম বলে দেড়শতে পা রাখেন কিশান। ১শ থেকে দেড়শতে পৌঁছাতে ১৮ বল খেলেছেন তিনি। ১২৬তম বলে ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কিশান। পরের ৫০ রান করতে ২৩ বল খেলেন তিনি।
ভারতের চতুর্থ ক্রিকেটার ও ওয়ানডে ইতিহাসের নবম ডাবল-সেঞ্চুরি করলেন কিশান। এর আগে ভারতের হয়ে রোহিত শর্মা ৩টি, শচীন টেন্ডুলকার-বিরেন্দার শেবাগ ১টি করে ডাবল-সেঞ্চুরি করেন। অন্য তিনটি ডাবল-সেঞ্চুরি করেছেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও পাকিস্তানের ফখর জামান।
দ্রুততম ডাবল-সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে নামও তুলেন কিশান। ডাবল-সেঞ্চুরির পর ৩৬তম ওভারে বাংলাদেশের পেসার তাসকিনের বলে ব্যক্তিগত ২১০ রানে থামেন কিশান। ১৩১ বল খেলে ২৪টি চার ও ১০টি ছক্কায় নিজের নান্দনিক ইনিংসটি সাজান কিশান।
দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সাথে ১৯০ বলে ২৯০ রানের জুটি গড়েন কিশান। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি।
৩৯তম ওভারে ছক্কা হাকিয়ে ৮৪ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৪তম সেঞ্চুরি করেন কোহলি।২০১৯ সালের আগস্টের পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ভারতীয় এ ব্যাটার।
সেঞ্চুরির পর বেশি দূর যেতে পারেননি কোহলি। সাকিবের বলে আউট হন তিনি। কোহলির ৯১ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
কিশান-কোহলির দুর্দান্ত ইনিংসের পর শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দর ২৭ বলে ৩৭ ও অক্ষর প্যাটেল ১৭ বলে ২০ রান করেন। এতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৪০৯ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। ওয়ানডেতে ষষ্ঠবারের মত এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ৪শ রান করলো ভারত।
বল হাতে বাংলাদেশের তাসকিন ৮৯ রানে-এবাদত ৮০ ও সাকিব ৬৮ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
৪১০ রানের বিশাল টার্গেটে অধিনায়ক লিটনের ব্যাটে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ। লিটনের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ৪ ওভারেই ৩৩ রান পেয়ে যায় টাইগাররা।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের আউটে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৮ রান করেন তিনি।
ভালো শুরু করে অষ্টম ওভারে ফিরেন লিটন। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করেন তিনি। মিডল-অর্ডারে ব্যাট হাতে এ ম্যাচেও ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। প্রথম দুই ম্যাচে ১৮ ও ১২ রান করা মুুশি এবার করেন ৭ রান।
দলীয় ৭৩ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর সাকিবের সাথে জুটি বেঁধে দলের রান ১শ পার করেন ইয়াসির আলি। জুটিতে ৩৪ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন সাকিব ও ইয়াসির। ৩০ বলে ২৫ রান করেন ইয়াসির।
হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে দলের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে বিদায় নেন সাকিব। ভারতের স্পিনার কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হন ৫০ বলে চার বাউন্ডারিতে ৪৩ রান করা সাকিব।
পরের দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদসহ আফিফ-মিরাজ ব্যর্থ হলে, ১৪৯ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রিয়াদ ২০, আফিফ ৮ ও আগের দুই ম্যাচের হিরো মিরাজ ৩ রান করেন। সিরিজে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি আফিফ। প্রথম দুই ম্যাচে ৬ ও শূন্য রান করেন তিনি।
শেষ উইকেটে ২৬ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়ে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ। শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিজ আউট হলে ৩৪ ওভারে ১৮২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। তাসকিন ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের ঠাকুর ৩টি উইকেট নেন।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করবে বাংলাাদেশ ও ভারত।