Home রাজনীতি সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস শুরু হয়েছে আজ

সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস শুরু হয়েছে আজ

44

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক দ্বাদশ কংগ্রেস শুরু হয়েছে আজ। শুক্রবার সকাল ১০টায় গুলিস্তান মহানগর নাট্য মঞ্চে কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষমতাসীনরা আজ জনসমর্থন হারিয়েছে। অথচ গোষ্ঠীগত লুটপাটের স্বার্থে এবং কৃত অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পেতে তারা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনসমর্থনের বদলে, এমনকি দলীয় রাজনৈতিক শক্তির ওপর নির্ভর করার বদলে, প্রধানত আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবলম্বন করে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন জারী করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখার চেষ্টা চলছে। গুম, খুন, জেল, জুলুমের সন্ত্রাসী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশে এখন ‘ভয় ও লোভের’ রাজত্ব চলছে। তিনি আরো বলেন, সামরিক কর্তৃত্বকে রক্ত দিয়ে প্রতিহত করে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। গণতন্ত্রকে আজ হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা জনগণের সামনে এখন এই চারটি প্রধান বিপদ। কমরেড সেলিম বলেন, সমাজ ও রাজনীতিতে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির সংগ্রামী ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা আজ জরুরি কর্তব্য। তিনি বলেন, আজ সময় এসেছে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার কাজটিকে সুনির্দিষ্টভাবে ও গুরুত্বের সঙ্গে হাতে নেয়ার।
কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিশেনে সিপিবি’র উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেন, ভোটাধিকারের সংগ্রাম করেই আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। তাদের নিরঙ্কুশ দেশে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে। উপর থেকে নিচে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। গোটা সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতির ঘুণে ধরেছে। ভোটের আগের রাতেই বাক্স ভরে আওয়ামী লীগ নিজেদের ভরাডুবি ডেকে এনেছে। ভুয়া ভোটে নির্বাচিতরা দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
কমরেড মনজুর আরো বলেন, এই সংকট মোকাবেলা করতে হলে সর্বপ্রথম ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থি এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি অতীতের মতো এই সংগ্রামকে কাজে লাগাতে না পারে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করেই আমরা বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে পারব। দ্বাদশ কংগ্রেসে সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে।
সিপিবি’র উপদেষ্টা কমরেড সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পার্টির আদর্শকে ধারণ করে রণনীতি ও রণকৌশলের ভিত্তিতে আগামীর লড়াই-সংগ্রামের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক শ্রেণির পার্টি। পার্টিতে শ্রমিক শ্রেণির এবং সেই শ্রেণিগত চেতনার ঘাটতির কারণে নানারকম সংকট সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আমাদের পার্টিকে শ্রমিকশ্রেণির পার্টি হিসেবে গড়ে তোলার শপথই হবে দ্বাদশ কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় কর্তব্য।
কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিশেনে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ক্ষমতাসীনদের মতই সরকারের বাইরে যে বুর্জোয়া দল রয়েছে তারাও একই বাজারসর্বস্ব পুঁজিবাদী পথ এবং লুটপাটতন্ত্রের নীতির অনুসারী। উপরন্তু তারা মৌলবাদী দল জামায়াতের সঙ্গে গঁাঁটছড়া বেঁধেছে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে রাজনীতিকে কলুষিত করছে। তিনি দুই বড় বুর্জোয়া দলকে প্রত্যাখ্যান কওে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিকল্প গড়ে তুলবে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত ও দেশপ্রেমিক মানুষের স্বার্থের অনুকূলে বিকল্প রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
সারাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কংগ্রেসের উদ্বোধনী সমাবেশে জাতীয় পতাকা ও কাস্তে-হাতুড়ি খচিত পার্টির লাল পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের উদ্বোধন ঘোষিত হয়। পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম যথাক্রমে জাতীয় পতাকা ও পার্টির পতাকা উত্তোলন করেন। কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, কমরেড সহিদুল্লাহ চৌধুরী, কমরেড শাহাদাত হোসেন, কমরেড নুরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান কমরেড লক্ষী চক্রবর্তী। কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহবাহক কমরেড আব্দুল্লাহ ক্বাফি রতন, ভেটারেন কমরেডদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন সিপিবি’র সহকারি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিপিবি’র সভাপতিম-লীর সদস্য কমরেড রফিকুজ্জামান লায়েক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম দলের পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মোহাম্মদ. কিবরিয়া।
উদ্বোধনী অধিবেশনে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে বিদেশী প্রতিনিধিগণ শারীরিক ভাবে উপস্থিত না থাকলেও এখন পর্যন্ত ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইরান, ফিলিস্তিন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পুর্তগাল, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, কুর্দিস্তান, কানাডা, চিলি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কিউবা, ভেনেজুয়েলা,গ্রিস, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, সোয়াজিল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশের ভাতৃপ্রতীম পার্টিসমূহ কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে তাদের বার্তা পাঠিয়েছে।কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সর্বমোট ২২৯ জন ভেটারেন কমরেডকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
উদ্বোধনী সমাবেশের পর বিকাল ৩টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হয়েছে, যা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত। জেলা সম্মেলনে নির্বাচিত ৪৮৭ জন প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন যোগ্যতায় নির্বাচিত পর্যবেক্ষকগণ কংগ্রেসে অংশ নিচ্ছেন। কংগ্রেসে গত পাঁচ বছরের কর্মকান্ডের উপর ‘কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট’, পার্টির রণকৌশলগত দলিল অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী ৪ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে।
কংগ্রেস চলাকালে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন বিকেল চারটায় গণমাধ্যম কেন্দ্রে কংগ্রেসের মুখপাত্রগণ সংবাদ ব্রিফিং করবেন।
কংগ্রেস চলাকালীন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।