Home রাজনীতি সিপিবি’র দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধন আগামীকাল

সিপিবি’র দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধন আগামীকাল

34

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেস আগামীকাল শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় গুলিস্তান মহানগর নাট্য মঞ্চে উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে।
শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে সারাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কংগ্রেসের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শুরুতেই দ্বাদশ কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-পরিষদ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। জাতীয় পতাকা ও কাস্তে-হাতুড়ি খচিত পার্টির লাল পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের উদ্বোধন ঘোষিত হবে। পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম যথাক্রমে জাতীয় পতাকা ও পার্টির পতাকা উত্তোলন করবেন। কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বক্তব্য রাখবেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, কমরেড সহিদুল্লাহ চৌধুরী, কমরেড শাহাদাত হোসেন, কমরেড নুরুল হাসান ও কংগ্রেস প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান কমরেড লক্ষী চক্রবর্তী।
উদ্বোধনী সমাবেশের পর বিকাল ৩টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হবে এবং চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত। কংগ্রেসে গত পাঁচ বছরের কর্মকান্ডের উপর ‘কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট’, পার্টির রণকৌশলগত দলিল অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। গঠনতন্ত্র অনুসারে কংগ্রেসের ৩ মাস আগে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মতামত প্রদানের জন্য খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ পার্টির অভ্যন্তরে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি শাখা সম্মেলন, উপজেলা/থানা কমিটি সম্মেলন, জেলা কমিটি সম্মেলনে আলোচ্যসূচিভুক্ত করে খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ আলোচনা করা হয়। কংগ্রেসে রণনীতিগত দলিল ‘ঘোষণা ও কর্মসূচি’ সমসাময়িকীকরণ ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী, অডিট কমিটির রিপোর্ট, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট, ক্রেডেনসিয়াল কমিটির রিপোর্ট উত্থাপিত এবং অনুমোদিত হবে। কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী ৪ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে। কংগ্রেস চলাকালে প্রতিদিন বিকেল চারটায় গণমাধ্যম কেন্দ্রে মুখপাত্রগণ সংবাদ ব্রিফিং করবেন।
কংগ্রেস চলাকালীন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মার্কসবাদী মতবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরাধিকারী সংগঠন। ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়।
জন্মলগ্ন থেকেই ভারতে ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির শিকার কমিউনিস্ট পার্টি বেশির ভাগ সময়েই গোপনে কাজ করেছে। ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয়, যা পরে ১৯৪২ এ প্রত্যাহার হয়। নিষিদ্ধ অবস্থাতেই পার্টি ১৯৩৯ সালে বোম্বাইতে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী ধর্মঘট সংগঠিত করে। ওই ধর্মঘটে ৯০ হাজার শ্রমিক অংশ নেয়।
চল্লিশের দশকে পার্টি সমগ্র ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত পার্টির নেতৃত্বে ভারতবর্ষজুড়ে সংগঠিত হয় তেভাগা, নানকা, টঙ্ক, তেলেঙ্গনা, কেরালায় পুন্নাপা ভায়ালা আন্দোলন ও কায়ুর আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন।
ভারত ভাগের পর ১৯৪৭ এ ঢাকায় ৭ সদস্যের একটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত কাউন্সিলররা ৬ মার্চ পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। একই দিনে পূর্ববঙ্গের কাউন্সিলরগণ ১৯ সদস্যের পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক কমিটি গঠন করেন, যার সম্পাদক নির্বাচিত হন খোকা রায়।
১৯৪৯-৫০ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ সরকার কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে অবিরাম দমনমূলক ব্যবস্থা চালাতে থাকে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট বন্দিদের উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ৭ জন নেতা নিহত এবং ৩১ জন গুরুতর আহত হন।
১৯৫০ সালে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ ও নাচোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের এবং সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষনেতাদের কারাবন্দী করলে পশ্চিম পাকিস্তানে পার্টির কর্মকান্ড প্রায় অচল হয়ে পড়লেও পূর্ব পাকিস্তানে চলমান থাকে।
৫২-র ভাষা আন্দোলনে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। ’৫৪ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন দেয়। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পার্টি মনোনীত ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন নির্বাচিত হন।
একই বছর ৯২-ক ধারা জারি এবং প্রদেশে গভর্নরের শাসন চালু হলে কমিউনিস্ট পার্টি আবার নিষিদ্ধ হয়, পার্টির নেতাকর্মীরা চরম নির্যাতনের মুখে পড়েন।
১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কমিউনিস্ট পার্টি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের গণজাগরণ ও অসহযোগ আন্দোলনেও পার্টির সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও কর্মীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। পার্টির নেতা কমরেড মণি সিংহ প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সরাসরি পরিচালনায় একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্টির নতুন নাম হয়- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
১৯৭৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে দলের একটি নতুন গঠনতন্ত্র গৃহীত হয়। কংগ্রেসে মণি সিংহকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ফরহাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে কমিউনিস্ট পার্টি। ওই সময় পার্টির নেতা-কর্মীরা সামরিক সরকারের কঠোর নিপীড়নের শিকার হন। পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হন। অনেকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে কমিউনিস্ট পার্টি ফের নিষিদ্ধ হয়। পরের বছর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পার্টির নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়।
সিপিবি ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গঠিত ১৫ দলীয় জোটে যোগ দেয়। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ৫টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানে সিপিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিলোপবাদীরা পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পার্টির কংগ্রেসে সহিদুল্লাহ চৌধুরীকে সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়।
এরপর ১৯৯৫ সালের ৭-৮ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কংগ্রেসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে ১৭-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেস এবং ২০০৩ সালে অষ্টম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ৭-৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত নবম কংগ্রেসে পার্টির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। মনজুরুল আহসান খান সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ তে দশম কংগ্রেস, ২০১৬ তে একাদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।