Home জাতীয় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন

54

স্টাফ রিপোটার: সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, সরকারের নানামূখী উদ্যোগ সত্ত্বেও ডাক্তার-নার্স অপর্যাপ্ততা, দক্ষ টেকনিসিয়ান ও পরীক্ষাগারের সংখ্যার অভাব, উপকরণের অপ্রাপ্যতা, চিকিৎসা সেবায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের আস্থাহীনতা বাড়ছে। ফলে দেশে ধনী-দরিদ্র ও লিঙ্গ বৈষম্য বাড়ছে। করোনা মহামারি ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে এই বৈষম্য আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিটের সামনে ‘জরুরী পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যসেবায় সমান সুযোগ সৃষ্টি’র দাবিতে আয়োজিত মনববন্ধন ও সমাবেশে এ সব কথা বলেন তারা। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), জনউদ্যোগ ও স্যাপি আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগের সমন্বয়ক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই চারশো ডেঙ্গু রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না। করোনা মহামারির সময়েও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই জরুরী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থায় কর্মী বাহিনীর দক্ষতা, আচরণগত সমস্যা, রোগীর প্রতি মমত্ববোধের অভাব, কমিশন বাণিজ্য, ওষুধের মান ও মূল্য, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার মান ও খরচ এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা (সরকারি ও বেসরকারি) নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এ সকল অভিযোগের বাস্তব সম্মত সমাধানের উদ্যোগ নেই। আবার উপজেলা, জেলা, এমনক মেডিকেল কলেজ পর্যায়ে প্রচুর চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর পদশূন্য থাকায় স্বল্প জনবল নিয়েই অনেক প্রতিষ্ঠানকে সেবা ও শিক্ষা দিতে হচ্ছে। অনেক সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় জনবল না থাকায় দামি যন্ত্রপাতি অবহেলায় পড়ে আছে। এমনকি প্রয়োজনীয় অর্থ সংকটের এবং অনেক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কারণে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি সময়মত মেরামত না হওয়ায় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষকে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। অনেক বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসার মান ও খরচ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এসকল প্রশ্নের সমাধান জরুরী।
সমাবেশে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে ১১দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ওই দাবিনামায় বলা হয়, ঔষধ শিল্পে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ব বন্ধ ও সবার জন্য স্বল্পমূল্যে ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ টেকনিসিয়ান তৈরি, পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উপকরণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয় এবং স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে শক্তিশালী করতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ধ্বংস করতে হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ এবং সবার জন্য চিকিৎসাপণ্য নিশ্চিত করতে হবে।
মাববন্ধন শেষে আইইডি সম্মেলন কক্ষে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডা. মুস্তাক হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশ (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ডা. রশীদ-ই মাহবুব, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন ও ইদ্রিস আলী, বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ সুমী, এএসডি’র হামিদুর রহমান, শিল্ড-এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ফিরোজ, সুন্দরবন ও উপকুল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, নারী নেত্রী স্বপ্না বেগম, বিএনপিএস’র কর্মসূচি সমন্বয়কারি মনিরুজ্জামান মুকুল, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসাইন, টিইউসি নেতা কেএম মিন্টু, নাগরিক নেতা সিমান্ত সিরাজ প্রমূখ।