Home রাজনীতি সমাঝোতার টেবিলে বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনা!

সমাঝোতার টেবিলে বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনা!

37

বরিশাল থেকে আহমেদ জালাল : বরিশালে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি অভিযোগের দ্বন্ধ সমঝোতার টেবিলে রূপ নেয়ার আভাস মিলেছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিরসণে প্রাথমিকভাবে এক সমাঝোতার বৈঠকের খবর মিলেছে। উত্তেজনাকর মধ্যকার অভিযোগের ঘটনা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হওয়ার কথা বৈঠকে উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সেক্ষেত্রে সমাধান কী সহসাই হচ্ছে? সেদিন রাতে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী (কর্নেল অব:) জাহিদ ফারুক শামিম এর শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বিসিসি’র কর্মী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীদের সঙ্গে ইউএনও’র নিরাপত্তা কর্মীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। ইউএনও বিসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বলেছিলেন, রাত হয়ে গেছে, মানুষ জন ঘুমাচ্ছেন। পরের দিন আপনারা ব্যানার অপসারণের কাজটি করেন। অভিযোগ উঠে, এতে অগ্মিমূর্তিরূপ ধারণ করে বিসিসির কর্মী, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও’র বাসভবনে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারীরা হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ আত্নরক্ষার্থে আনসার সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হন। বিপরীতদিকে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি, ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনও’র বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যান মেয়র। তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ইউএনও। সাদিক অনুসারীরা বলছেন, নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের কাজ হিসেবে সেদিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়েছিল বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঘটনার পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন সাদিক আনুসারীরা। পরবর্তীতে উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি ৪টি মামলা দায়ের হয়। ইউএনও এবং পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কথা হচ্ছে, সমাঝোতার টেবিলও কী বুমেরাং হয়ে যেতে পারে? আইনগত কিছু ব্যাপার রয়েছে, সেটা করতে সময় লাগবে। সমাধানের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূত্রিতায় এহেন পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেয় বলা মশকিল। এরসঙ্গে বর্তমান বরিশাল আওয়ামী রাজনীতির প্রেক্ষাপটের গতিপ্রকৃতিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত ঘটনাটির বিষয়ে এখানকার বর্তমান বরিশাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার ঘাটতি আছে কিনা? দলের মধ্যে নেতৃত্বে শূন্যতা রয়েছে কিনা? দলের ত্যাগী-নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের বঞ্চিত-লাঞ্ছিত-নির্যাতন সহ সর্বোপরি অবমূল্যায়নের প্রশ্নও উঠেছে। বর্তমান বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে নিরবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ত্যাগী অনেক নেতারা। কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে নেতৃত্বে যোগ্য-অযোগ্যতার প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানান শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে। বর্তমান বরিশাল আওয়ামী লীগে ত্যাগীদের বিপরীতে অনুপ্রবেশকারীদের মূল্যায়িত করার অভিযোগ উঠে। একসময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা সমাজসেবক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বলেছেন, ত্যাগীদের পুরোপুরি অবমূল্যায়ন করে অনুপ্রবেশকারী নব্যদের দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। এসব কারণে দলের ত্যাগী, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন রাজপথ কাঁপানো সাবেক ছাত্রনেতা খান মামুন।
বিশেষ করে বরিশালের প্রয়াত মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণের অকাল মৃত্যুর পর নেতৃত্বে চরম শূন্যতা বিরাজ করে। এরকম অবস্থায় বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে জেলা আ’লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ(এমপি)’র জ্যেষ্ঠ পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র। পরে বরিশাল সিটি মেয়র পদে আসীন হন তিনি। আর দলের একটি অংশ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী (কর্নেল অব:) জাহিদ ফারুক শামিম এর রাজনীতির সঙ্গে অংশ নেন।
ঘটনার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হলেও মামলা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, আলোচনায় মামলার বিষয়ে কথা হয়েছে। সেখানে তাদের দায়েরকৃত দু’টি মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন। সেক্ষেত্রে আইনগত কিছু ব্যাপার রয়েছে, সেটা করতে কিছুদিন হয়তো সময় লাগবে।
আলোচনার বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, সমাজে নানা ধরণের ঘটনা ঘটে। সেগুলোর সামাজিক, আইনগত বা অন্য যে সমস্ত সুষ্ঠু সমাধানের পথ আছে, সেখান থেকে সব সমাধানই খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা যাঁরা আলোচনা করেছিলাম, তাঁরা সবাই একমত হয়েছি যে-আমরা সবাই বরিশালের ভালো চাই, বরিশালে সুন্দর আইন-শৃঙ্খলা চাই, বরিশালের সুন্দর উন্নয়ন চাই। যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা সবাই আইন-শৃঙ্খলাকে সমুন্নত রাখতে পারি, পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখতে পারি সে রকমই একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যারা রাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারী এবং জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক রাজনৈতিক নেতা সবাই মিলে একসঙ্গে সুন্দরভাবে কাজ করবো। এটাই হলো আমাদের একসঙ্গে চলা, একসঙ্গে কাজ করারই সুন্দর সমাধান বা সলিউশন। আমরা এক লক্ষ্যে কাজ করবো সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে মেয়র, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উভয় পক্ষ মেনে নেওয়ায় সবার মুখে হাসি ফোটে। তবে এ বৈঠকে ইউএনও উপস্থিত ছিলেন না।
সভায় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আর যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন– সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, ডিআইজি আক্তারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকারি আইনজীবী একেএম জাহাঙ্গীরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ সমঝোতার বিষয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। তবে সেখানে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আমারও সিদ্ধান্ত।’
সোমবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভ‍িনিউয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বরিশালের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন। তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। এটা সবসময় হয়ে থাকে, নতুন কিছু নয়।
এরআগে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও পরবর্তী সংঘর্ষের ঘটনা সরকার ‌‘নিরপেক্ষ’ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে এবং তা খুব শিগগিরই সমাধান হবে। সরকারের দুই মন্ত্রী এমন আশ্বাস দিয়েছেন। আর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষে দেওয়া বিবৃতি চটজলদি হয়েছে বলে মনে করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম রোববার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনও কখনও ভুল বোঝাবুঝি হয়, আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিরসনও হয়। বরিশালে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা সমাধানের দিকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আমি আশাকরি, এটি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সেখানে অবশ্যই কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, যে কারণে ইউএনও হয়তো অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, তারা মিমাংসা করার জন্য সেখানে গেছেন। সেখানে আসলে কি হয়েছিলো সেটি এখন সময়ের ব্যবধানে জানা যাবে। আমরা সবাই স্ব স্ব পদে দায়িত্বশীল, সবাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল, সে কারণে আশাকরি, সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি সংক্ষুদ্ধ কোনো ব্যক্তি প্রতিকার পাওয়ার জন্য মামলা করে থাকেন। মামলা করা হয় সমস্যা সমাধানের জন্য। তদন্ত সাপেক্ষে কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালের ঘটনা সরকার নিপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সবাইকে তাদের নিজেদের এখতিয়ারের মধ্য থেকে আচরণ করতে হবে। তাদের যে কাজের গন্ডি সংবিধানে দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী দায়িত্বের মধ্য থেকেই সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এ ঘটনায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকার সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে, বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
অনুসন্ধানী সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সিটি মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র রাজনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল। গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর সাগরদী এলাকায় বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। এতে ক্ষোভ জন্মে আ’লীগের একাংশের মাঝে। জসিম প্রয়াত মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত মেয়র হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সময় দিচ্ছিলেন জসিম। ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন তখন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, প্রয়াত মেয়র জননেতা এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে থেকে রাজনীতি করার কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সিটি মেয়র অবৈধভাবে আমার বাড়ি বুলডেজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন। পরে বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া বাড়ি পরিদর্শনও করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)। ওই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তিনিসহ অপর দুই ভাই মনির হোসেন ও অসিম হাওলাদারের নামে মহাসড়কের পাশে সাগরদী এলাকায় ক্রয়কৃত ৮ শতাংশ জমিতে ৭ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশন থেকে প্ল্যান অনুমোদন নেন। নিয়ম মেনে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সিটি করপোরেশনের দেখিয়ে দেয়া সীমানার মধ্যেই তিনি বহুতল ভবনের একতলার ছাদ সম্পন্ন করেন। কোন কারণ ছাড়াই সিটি করপোরেশন বুলডোজার দিয়ে তাদের একতলা ভবনের একাংশ গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেন তিনি। জসিম উদ্দিন তাঁর ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ করলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি করেছিল সিটি করপোরেশন। এছাড়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন নিরব হোসেন টুটুল। একসময়ে ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র এক নেতার ক্যাডার হিসেবে কাজ করার ঢের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তৎকালীন সময়ে টুটুল নগরীর নাজিরের পুলে একচ্ছত্র মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। পাইকারী ফেন্সিডিল বিক্রি করতেন তিনি। এই নিরব হোসেন টুটুল যিনি কিনা বরিশালের দন্ডমুন্ডের কর্তা, এরকম অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগের ত্যাগী, নিবেদিত একাধিক নেতার। এরকম নানা ইস্যুতে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের মধ্যকার মনস্তাতিক দ্বন্ধ বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে সিটি করপোরেশনের ৬ কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চাল দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। পরে ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে আনা হয়। সূত্রের দাবী, ওই দ্বন্দ্বের জের ধরেই ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে বুধবার রাতে বিসিসি কর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট রাতে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে প্রতিমন্ত্রীর ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে ইউএনও’র নিরপত্তায় থাকা আনসার, সিটি করপোরেশনের স্টাফ, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রাতভর হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ ওইসময়ে ইউএনও’র নিরাপত্তায় আনসারদের শটগানের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ পুলিশের হামলায় সিটি করপোরেশনের স্টাফ ও আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। অপরদিকে, ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে আওয়ামী-ছাত্রলীগ বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন। পরবর্তী সময়ে মেয়রের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসিসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হলে বিচারক পিআইবিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান, পুলিশের পক্ষে উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল মল্লিক, সিটি করপোরেশনে পক্ষে রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার, প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন পাল্টাপাল্টি চারটি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে ইউএনও ও পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত উভয় মামলার প্রধান আসামী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বরিশাল আদালতে দুটি মামলা করা হয়। মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম আসামি হয়েছেন।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার নেপথ্যে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক মদদদাতাদের কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল বলছেন, কোন সন্ত্রাসী নিজের পেশীশক্তির বলে কাজ করে না। তাদের পিছনে মদদদাতা ও আশির্বাদ থাকে। কেননা, এর সাথে অর্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। এ কারণে আধিপত্য বিস্তারে শক্তিমত্তা জাহির করতে নানান ধরণের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। অভিজ্ঞমহল বলছেন, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তারা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, যাতে বরিশাল শহরের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে।