Home রাজনীতি রাষ্ট্রীয় লুটেরা দস্যুদের পায়ের তলে অশ্রুপাত করছে মানবতা–রিজভী

রাষ্ট্রীয় লুটেরা দস্যুদের পায়ের তলে অশ্রুপাত করছে মানবতা–রিজভী

33

সুব্রত সানা: বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আজ এক প্রেস ব্রিফিং বলেছেন, বর্তমানে এক শাসরুদ্ধকর দু:সহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দেশের মানুষের জীবন। রাষ্ট্রীয় লুটেরা দস্যুদের পায়ের তলে অশ্রুপাত করছে মানবতা। একদিকে স্বেচ্ছাচারী একনায়ক শাসকের শোষণে নিষ্পেষিত জনগণ অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ উর্ধগতিতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জীবন যাপন।

তিনি বলেন, করোনার অভিঘাতে মানুষের আয় রোজগারে যখন টানাপোড়েন অবস্থা তখন হু হু করে বাড়ছে নিত্য পণ্যের বাজার দর। খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, তরিতরকারী, মাছ-মাংশ, পোল্ট্রি মুরগি, ডিম, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ অসম্ভব হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। এর পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলও বৃদ্ধি করা হয়েছে পাল্লা দিয়ে। গতকালও এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে আওয়ামী লীগের কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুতদার সিন্ডিকেট। আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উল্লম্ফন ঘটায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ নীরবে আর্তনাদ করছে। ঘরে ঘরে চলছে বোবা কান্না। সংসার চালানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার নির্লিপ্ত। ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো রকম যে দায়িত্ব আছে সেটি তারা মনে করে না। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দয়ামায়া নেই। তাই আজকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কারণ এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা যারা লাভবান হচ্ছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগার বা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই। তাদের নজর লুটপাটে। আর নিজেদের হরিলুট, ভয়াবহ দুর্নীতি ইত্যাদি অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বুনে চলছেন হাজার হাজার মিথ্যার জাল। ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন আওয়ামী সরকার ন্যায়নীতি ও জনকল্যাণের নির্দেশ গ্রাহ্য করে না।
এই নেতা আরও বলেন, সবকিছুর দাম এখন চড়া। বাজারে এক কেজি মোটা চালের দাম ৬০ টাকা। যা আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে ৬-৭ টাকা। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকায় কেনা যেত, এখন সেটা ১৭৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম মোটামুটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কোনো উৎসব বা উপলক্ষ নেই, তবু ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে, যা সাধারণত: ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে থাকে। তেল, চিনি, পেঁয়াজে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে, ছুঁলেই শক করে। এ বছর ইলিশের দামও কমেনি। কারণ দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে প্রতিবেশী দেশে পাঠানো হয়েছে। সেখানে দাম কম, অথচ আমাদের দেশে আকাশছোঁয়া। সবজি রান্নার জন্য সামান্য ছোট চিংড়ি কিনতেও প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬০০/৭০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচামরিচের দামও অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে। দামে সেঞ্চুরী পার করেছে।

জনাব রিজভী বলেন, গত ১ মাসে গুঁড়াদুধের দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা। শিশুখাদ্যের মূল্যও একইভাবে বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। এছাড়াও ডাল, চিনিসহ নিত্য ভোজ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। এর কোন প্রতিকার নেই। কে করবে প্রতিকার ? বাজার সিন্ডিকেটের দাপট দেখে মনে হয় সরকার ও প্রশাসন বাজার সিন্ডিকেটে পৃষ্ঠপোষক। এদেশের মানুষ ফৌত হয়ে গেছে, কিন্তু আওয়ামী রাজন্যবর্গ বিত্ত-বিলাসে মত্ত হয়ে আছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে তারা সৃষ্টি করেছে অবিশ্বাস, অসহিষ্ণুৃতা ও বিদ্বেষের আবহ। এই সরকারের পতন ছাড়া জনগণের মুক্তি আসবে না।