Home জাতীয় সঠিক জ্ঞানই পারে আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে–চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার

সঠিক জ্ঞানই পারে আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে–চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার

50

চট্টগ্রাম অফিস: চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেছেন, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা ও নারীর অধিকার বিষয়ক সঠিক জ্ঞান থাকলেই কেবল আলোকিত ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে পার্বত্য তিন জেলায় কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে যে কাজ করছে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সামাজিক সংস্কারের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের প্রতিবন্ধকতা জয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘প্রোগ্রাম শেয়ারিং এন্ড স্টেক হোল্ডার এনগেজমেন্ট মিটিং’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘আওয়ার লাইভস, আওয়ার হেলথ, আওয়ার ফিউচার’ প্রকল্পের বিভাগীয় পর্যায়ের অংশীজনদের সাথে এই মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. ছেহেলী নার্গিস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, বয়:সন্ধি পেরিয়ে কিশোরীরা তাদের পূর্ণাঙ্গ জীবনে উপনিত হবে। এ সময়ে যখন শারীরিক পরিবর্তন আসে তখন প্রথমে ভীতি কাজ করে। এসময়ে তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কাজ থেকেও বিরত রাখা হয়। বাস্তবতা হলো এটা একটি অনিবার্য শারীরিক প্রক্রিয়া। শারীরিক, মানসিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটে এ সময়ে। প্রাপ্ত বয়স্কদের উচিত এ সময়ে তাদের সহায়তা করা। তাহলে কিশোর-কিশোরীরা কুশিক্ষা পাবে না। এটা স্বাভাবিক শরীর বৃত্তিয় প্রক্রিয়া। সঠিক জ্ঞান না থাকলে অসুস্থতা এসে যায় যা রিপ্রোডাকটিভ হেলথকে ঝুঁকিতে ফেলে। এমনকি পরবর্তীতে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়। সরকারি পর্যায়ে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ কাজ করে। বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য। আলোকিত মা হতে হলে তাদের সব বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে কিছু বাধা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। গতকালই মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলেছি, পার্বত্য জেলাগুলোতে আরো বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে বাধা আসতে পারে। পড়শি, বোন, আত্মীয় হিসেবে কিশোরীদের সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি দীঘর্দিন ধরে চলে আসা সামাজিক সংস্কার ও আচরণকে সম্মান করেই প্রতিবন্ধকতা জয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা এই কর্মসূচির মাধ্যমে অর্জন হবে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। নারী-পুরুষ, অঞ্চল ভেদে ও জাতিভেদে বৈষম্যের কথা এলেই আমরা সমতার কথা বলি। ৫০ বছর পর আমাদের চিন্তা করার সুযোগ আছে সবক্ষেত্রে আমরা সমতা নিশ্চিত করতে পেরেছি কিনা। তিন পার্বত্য জেলার জনগোষ্ঠী এখনো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। শিক্ষা, উন্নয়ন ও অধিকারে পার্বত্য জনগোষ্ঠী এখনো অনেক পিছিয়ে। বিএনপিএস সেই পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করছে। এরাই আগামী দিনের মা। আজকের প্রেক্ষিতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য্যপূর্ণ।

ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং সিমাভি নেদারল্যান্ডের কারিগরি সহযোগিতায় তিন পার্বত্য জেলার ১০টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ প্রকল্পে বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

কিশোরী ও যুবা নারীদের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা, লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলার ১৭টি উপজেলায় ১২ হাজার কিশোরী ও যুবা নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। ৩০০ টি গার্লস ক্লাবের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রতিটি গার্লস ক্লাবের সদস্য ৪০ জন করে। কিশোরীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবক, পরিবারের পুরুষ সদস্য এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে এ কার্যক্রম চলছে।

সভায় বিএনপিএসের সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত ডা. সাহেলি নার্গিস, বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংশ প্রু মারমা, খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশ, পরিবার পরিকল্পনা বান্দরবানের উপ পরিচালক ডা. অং চালু, রাঙামাটির পরিবার পরিকল্পনা উপ পরিচালক আনোয়ারুল আজিম, খাগড়াছড়ির পরিবার পরিকল্পনা উপ পরিচালক এমরান হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট বান্দরবান সুরাইয়া আক্তার সুইটি, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইয়াসির আরাফাত, উন্নয়ন সংস্থা তাজিংডং এর নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু, উন্নয়ন সংস্থা প্রগেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা। গার্লস ক্লাব সদস্যদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ডলি প্রু মারমা, বিশাখা ত্রিপুরা ও ম্যামাচিং ত্রিপুরা।