এম এইচ নাহিদ ।। “ফেরি পাড়াপাড়ের বিড়াম্বনা আর না, আর না”-আনন্দের এ শ্লোগান এখন দক্ষিণ বাংলার মানুষের মুখে মুখে। অপেক্ষা কেবল উদ্বোধনী মাহেন্দ্রক্ষণের। ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেই ৫মিনিটে পদ্মা পাড় হয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলবে ওই জনপদের গাড়িগুলো। সেই সাথে স্বপ্নের ডালা মেলে উড়ে চলবে দক্ষিণ বাংলার মানুষ। এ অঞ্চলের যাত্রীদের সময় অনেক কম আসবে। ৩-৪ ঘন্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা কিংবা ফেরিতে বসে থাকার যন্ত্রণা আর থাকবে না। বরিশাল থেকে সকালে রওনা দিয়ে মাত্র ৩ ঘন্টায় ঢাকায় পৌঁছে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বিকালেই তারা ফিরতে পারবেন বরিশালে। রাজধানীতে চাকুরিত ফরিদপুরের কর্মজীবীরা বাড়ি থেকেই অনায়াসে ঢাকায় অফিস করতে পারবেন। আর ভাঙার মানুষ তো ঢাকায় আসবেন মাত্র ১ ঘন্টায়। এছাড়া পুরো খুলনা-বরিশাল বিভাগের ২১ জেলার মানুষের সময় কমবে। রাজধানী ঢাকা যাবে উপকূল জনপদের দোড়গোড়ায়।
কয়েকজন পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় অধিকাংশ বাস পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে ফেরি পার হয়ে যাতায়াত করছে। এতে দূরত্ব ও সময় দুই-ই বেশি লাগছে। পদ্মা সেতুতে গাড়ি চালুর পর তা কমে আসবে। এতে বাসের ট্রিপের সংখ্যা বাড়বে। সময় সাশ্রয় ও স্বস্তি থাকায় মানুষের যাতায়াতও বাড়বে।
সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে বদলে যাবে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে থাকা ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য। উন্নয়নের মহাসড়কে প্রত্যক্ষ অংশীদার হবে অবহেলিত বরিশাল-খুলনার জনপদ থেকে জনপদ। একটা সময় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকায় যেতে ১৫টি ফেরি পার হতে হতো।। বরিশাল থেকে ঢাকা পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৯। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের আন্তরিক ইচ্ছায় উন্নয়নে এগিয়েছে দক্ষিণ জনপদ। কেবল পদ্মা ছাড়া ২৮২ কিলোমিটার ঢাকা-কুয়াকাটা সড়কে আর কোনো ফেরি নেই। ২৫ জুন থেকে পদ্মাতেও থাকবে না ফেরি।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগে ৮ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে এ সময় আরো অন্তত ৩ ঘণ্টা কমবে। বরিশাল অঞ্চলের মতো খুলনা বিভাগের ১০ এবং ঢাকা বিভাগের ৫ জেলা থেকেও রাজধানীতে আসতে এখনকার তুলনায় ৩ ঘণ্টা সময় কম লাগবে বলে জানান দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। ঢাকায় চুকুরিত কেউ কেউ বলেই দিয়েছেন, তারা বাড়ি চলে যাবে। সকালে ঢাকায় গিয়ে অফিস করে আবার বিকালে ফিরবে। যমুনার পর ‘বাংলাদেশের মধ্যে কেবল বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের সঙ্গেই ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল না
ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ৩০০ কিলেঅমিটার। । চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব দেখুন ঢাকা থেকে যেখানে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ এবং সিলেটের দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। অথচ ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব সেখানে বরিশাল মাত্র ১৭০ কিলোমিটার দূরে। বিড়াম্বনা ছিল কেবল ফেরিতে। সে কষ্ট লাঘব হতে চলেছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে রাজধানীর গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরি হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বরিশালের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। অপরদিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালের দূরত্ব ১৫৬ কিলোমিটার। এ হিসাবে দূরত্ব কমবে ৮৬ কিলোমিটার। সময় লাগবে সব মিলিয়ে ৩ ঘন্টা। একইভাবে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত বর্তমান দূরত্ব ২৯২ কিলোমিটার। বর্তমানে এ দূরত্ব যেতে সময় লাগছে ৭-৯ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে ওই দূরত্ব দাঁড়াবে ২৪৭ কিলোমিটারে। সেতু চালু হলে সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা।