Home জাতীয় সকল উন্নয়ন হতে হবে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায়: সাবের হোসেন চৌধুরী

সকল উন্নয়ন হতে হবে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায়: সাবের হোসেন চৌধুরী

32

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি : “কোভিড-১৯ এ আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যে সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বায়ুদূষণে প্রতি বছরেই তা হচেছ। সকল দূষণের বিবেচনায় বায়ূ দূষণের প্রভাব তিনগুণ বেশি। তাই জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সকল উন্নয়ন হওয়া জরুরি।”

আজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী ) সকালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর অডিটোরিয়ামে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত “বাংলাদেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিঃস্বরণ মানমাত্রার পুনর্বিবেচনা” শিরোনামে শীর্ষক একটি জাতীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি এ কথা বলেন।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মাহমুদা ইসলামের সঞ্চালনায় ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ-এর সদস্য এবং সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. এস.এম. মনজুরুল হান্নান খান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং ফিনল্যান্ডের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি এন্ড ডেভেলপমেন্টের কো-ফাউন্ডার লরি মিল্লিভিরটা।

উক্ত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, বিদেশিরা তাদের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী গবেষণা করে। তাদের স্বার্থটা আগে দেখে। তাই আমাদের উন্নয়নের সকল গবেষণা আমাদের দেশীয় গবেষকদের দিয়ে করানো দরকার।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। বায়ুদূষণের ডাটা যখন প্রকাশ করা হয় তখন ইনডোর ও আউটডোর আলাদা ডাটা প্রকাশ করা জরুরি।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল উন্নয়ন হতে হবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় মাথায় রেখে। উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট নেয়ার সময় আগেই স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। মাস্টার প্ল্যান করার সময় জনসাধারণের মতামত নেয়া দরকার। পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিকল্পনার সময় দূষণ বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ সকল উন্নয়নই হলো মানুষের জন্য। তাই জনস্বাস্থ্য সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মূল বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যেখানে বস্তুকণা ২.৫ এর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে, সেখানে সাম্প্রতিক পাশ হওয়া বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর ১নং তফসিলে বায়ুর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। অপরদিকে একই বিধিমালার তফসিল ৫ এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্যাক নিসঃসরণের সর্বোচ্চ সীমা সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন এর অক্সাইড সমূহ এবং বস্তুকণার মানমাত্রা যথাক্রমে ঘনমিটারে ২০০, ২০০ এবং ৫০ মিলিগ্রাম করা হয়েছে, যা উন্নতদেশের মানমাত্রার চেয়ে নূন্যতম ৪-৫ গুণ বেশি। অর্থাৎ উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড করার সময় নি:স্বরণ মাত্রার যে মানদন্ড মেনে চলে, সেই মানমাত্রা দেশগুলো উন্নয়ন সহযোগি হিসেবে আমাদের দেশে কাজ করার সময় মানে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য এবং সদস্য সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের দেশে যে মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে তা হেলথ ইমপ্যাক্ট বিবেচনায় অর্থনৈতিক মূল্য নিরুপণ করা দরকার। আমাদের উচিত সবুজ চোখে সকল উন্নয়নকে দেখা। পরিবেশ সম্মত হয় না এমন প্রজেক্ট বাতিল করা উচিত। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশ থেকে ১০০০ জন ইয়ুথ ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করতে হবে যাতে তারা সব জায়গায় বাংলাদেশের ঝুঁকির দিকগুলো তুলে ধরতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. এস.এম. মনজুরুল হান্নান খান বলেন, যে উন্নয়ন মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সে উন্নয়ন কতটা কাম্য তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভেবে দেখতে হবে।

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বায়ুমান নিয়ন্ত্রনের জন্য আমাদেরকে জীবাশ্ম জালানী ভিত্তিক উৎপাদন হতে পর্যায়ক্রমে সরে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, প্রজেক্টগুলোর এনভায়রনমেন্টার ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) ত্রুটিপূর্ণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ন এলাকায় করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এ সব ক্ষেত্রে যা মানছে, তা আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্রিন এনার্জি এবংএনার্জি সিকিউরিটি এ দুটোকে আমরা সাংঘর্ষিক মনে করছি। কার্বন নিঃসরণের জন্য আমাদের উপকূল ডুবছে। কিন্তু আমরা নিজেরাই কার্বন নিঃসরণ করছি এবং বিভিন্ন ফোরামে দাবি তুলছি ক্ষতিপূরণের জন্য। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া বার্তার পাশাপাশি সরকারীভাবে বায়ূমানমাত্রার খবরও দৈনন্দিন প্রকাশ করা দরকার।

লরি মিল্লিভারটা বলেন, বাংলাদেশের মানমাত্রার মধ্যে সালফার ও মারকিউরি উল্লেখ নেই। এটি যুক্ত করা দরকার। সেই সাথে প্রতিনিয়ত কলকারখানায় নি:সরণ মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং আইন করে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, পরিবেশবিদগণ বায়ু দূষণের উপর আরো বেশি বেশি গবেষণা করে আমাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিতকরণ অব্যাহত রাখবেন এবং রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন নীতি নির্ধারণের সময় শিল্প ও পরিবেশকে সমন্বয় করে চিন্তা করেন।

উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডব্লিও বি বি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, ইয়ুথ নেট, আর্থ সোসাইটি, জিএলটএস, ফেনী ফোরাম, বিভিন্ন সংস্থার গবেষকগণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যগণ।