ডেস্ক রিপোর্ট: আমদানি পণ্য ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধিতে এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী আমদানি ব্যয়। ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানির খরচ মিটছে না। এই সংকটে বেড়ে গেছে ডলারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে সদ্য সমাপ্ত মে মাসে প্রবাসী আয় হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এতে সংকট আরও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে।

গত মে মাসে প্রবাসীরা ১৮৮ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা এ বছরের এপ্রিল ও গত বছরের মে মাসের তুলনায় কম। গত বছরের মে মাসে আয় এসেছিল ২১৭ কোটি ডলার। ফলে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

জানা যায়, গত মাসে কিছু ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে ৯৫ টাকার বেশি দামে ডলার কেনে। আর তারা এই ডলার দেশে বিক্রি করেছে আরও বেশি দামে। এতে চাপে পড়েছে মানুষ। কারণ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার (২৯ মে) প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ৮৯‍ টাকা ২০ পয়সা দর বেঁধে দেয় ব্যাংকগুলোকে। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

খোলাবাজারে এখন ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৬-৯৭ টাকায়। বিদেশে হুন্ডিতেও ৯২-৯৩ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর ৮৯‍ টাকা ২০ পয়সা দর দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এসব কারণে আবার বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় কমে গেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিঙ্গাপুর প্রাইম এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সমিউল্লাহ বলেন, প্রবাসীরা সিঙ্গাপুর ডলারে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। হুন্ডি করলে পাচ্ছেন ৭২ টাকা। ফলে যাঁদের অভিবাসন খরচ বেশি, ঋণ নিয়ে কাজে এসেছেন, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে হুন্ডি করছেন। সাধারণ সময়ে ব্যাংক ও হুন্ডিতে পার্থক্য দুই টাকা হয়, এখন তা পাঁচ টাকার বেশি। তবে আগের চেয়ে প্রবাসীরা অনেক সচেতন। ফলে দাম কম হলেও বৈধ পথে আয় কমবে না।

মোহাম্মদ সমিউল্লাহ আরও বলেন, সাধারণত সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সিংহভাগ প্রবাসী দেশে অর্থ পাঠান। ফলে প্রবাসী আয়ে কী প্রভাব পড়ে, তা বুঝতে আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭০ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ১৪৯ কোটি ডলার। মার্চে আয় আসে ১৮৫ কোটি ডলার, এপ্রিলে যা বেড়ে হয় ২০১ কোটি ডলার। আর মে মাসে আয় কমে হয় ১৮৮ কোটি ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, দামে বড় ধরনের তারতম্যের কারণে বৈধ পথের চেয়ে হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। কারণ, হুন্ডিতে পাঠালে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৯৫ টাকার কাছাকাছি দেওয়া হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দাম আবারও পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।

দেশি মালিকানায় বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই। এই এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো তদারকির বাইরে থেকে যায়। আবার ডলারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে বিদেশি বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। তারা যে দাম দেয়, সেই দামেই প্রবাসী আয় আনতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এখন ব্যাংকগুলোকে দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে কী পরিস্থিতি হয়, তা বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

ডলারের সংকট সামলাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি যে কোনো অঙ্কের প্রবাসী আয় পাঠানোর সময় এর বিপরীতে মিলবে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা। এ জন্য নথিপত্র জমা দিতে হবে না। আগে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে, বিলাসপণ্যের ঋণপত্র খোলায় ৭৫ শতাংশ নগদ জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।-প্রথম আলো