Home মতামত শোকাবহ আগষ্ট, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং বর্তমান বাস্তবতা।

শোকাবহ আগষ্ট, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং বর্তমান বাস্তবতা।

93

রোকোনুজ্জামান রোকন:
বাঙালীর রাখাল রাজা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট হত্যা করা হয়। বাংগালী জাতির জন্য আগষ্ট শোকের মাস, কষ্ট ও সীমাহীন বেদনার মাস।
বঙ্গবন্ধুর চেয়ে এ জাতির আপনজন কেউ ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও কেউ জন্ম নেবে বলে আমার মনে হয় না। উনি এ জাতির জন্য ২৪ বছর পাকিস্তানের বর্বর শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, পাকিস্তানীদের ২৪ বছরের শাসনের মধ্যে ১৪ বছরই কারাগারে কাটিয়েছিলেন। বার বার ফাঁসির দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন। এ জাতির জন্য উপহার দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র। বাংগালী জাতিও তাদের নেতা বঙ্গবন্ধুকে বানিয়েছিলেন তাদের মুকুটহীন সম্রাট। উনার ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা বক্তৃতা জাতিকে যেমন ঐক্যবদ্ধ করেছিল তেমনই মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি নিরস্ত্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র জাতিতে পরিনত করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের উদাহরণ বিরল।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পড়ন্ত বিকেলে পাক-হানাদার বাহিনীর আত্নসমর্পণের মধ্যদিয়ে এ জাতি বিজয় অর্জন করলো।
এরপর ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ সাল জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু, পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলার মাটিতে পদার্পণ করলেন। বাংগালী জাতি স্বাধীনতার পূর্ণতা পেল।
শুরু হলো একটি জাতির পথচলা। সে পথচলা সহজ ছিল না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শোষিত দেশ, মানুষের আকাংখা সীমাহীন। এর মধ্যদিয়েই সেদিন বঙ্গবন্ধুকে শুরু করতে হয়েছিল দেশ পুনঃগঠনের কঠিন কাজ।
উনার স্বপ্ন ছিল
(১) শোষণমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম।
(২) সংবিধান স্বীকৃত মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ নিশ্চিত করা যথা (ক) ভাত, কাপড়, চিকিৎসা, বাসস্হান ও শিক্ষার ব্যবস্হা করা।
উনি শুরু করেছিলেন, কিনতু শেষ করতে পারেননি।
(৩)অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।
(৪)ঘুষ -দুনীতি , লুটপাট, চোরাকারবারি মুক্ত দেশ গড়তে।
(৫) জনবান্ধন সরকারি প্রশাসন ব্যবস্হা কায়েম করতে।
এটাই ছিল দেশ পরিচালনায় জাতির জনকের স্বপ্ন।
উনার নির্দেশিত পথেই আমাদের এগুতে হবে।
দেশের বর্তমান অবস্থা:- হে রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিব, তুমি শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও, তোমার তোমার সুযোগ্য কন্যা তোমার আদর্শেই দেশকে পরিচালনা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তোমার দেশ আজ সমস্ত দিক থেকেই উন্নত। বিশ্ব দরবারে তোমার বাংলা আজ মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে, যার ভিত্তি তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলে। তোমার দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আজ অনেক মজবুত।
তোমার দেশ আজ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভ র ডিজিটাল বাংলাদেশ।
তোমার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, রায়ও কার্যকর হয়েছে। বড় বড় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, রায় কার্যকর হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা আছে। খেলাধুলায় পারঙ্গমতা অর্জন করেছে তোমার দেশের সোনার ছেলে-মেয়েরা।
প্রিয় রাষ্ট্রপিতা তোমাকে হত্যার পর, জাতি অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো #তোমার রক্তাক্ত নিথর দেহ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রেখেই তোমার প্রিয় সহকর্মীরা খুনী মোস্তাকের মন্ত্রী সভায় শপথ নিল। হায়রে নিয়তির নির্মম পরিহাস!

তোমার এককালীন সহকর্মী মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী হলেন খুনীর সামরিক উপদেষ্টা। উনি আবার মহানগণতন্ত্রী!

তোমার এককালীন রাষ্ট্রপতি আবার বিচারপতিও ছিলেন (সংবিধানের রক্ষা কর্তা) আবু সাঈদ চৌধুরী হলের খুনীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ক্ষমতার এতই লোভ?

তোমার আরেক বিশ্বস্ত সহকর্মী আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে হিথরো বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিলেন তোমার মৃত্যুতে, নাকি দেশ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে!

পরবর্তীতে উনি আওয়ামীলীগের সভাপতিও হয়েছিলেন, কি বিচিত্র তোমার আওয়ামীলীগ!

কি বিচিত্র আমার বাংলাদেশ! এদেশে সবই সম্ভব!

যারা সেদিন মন্ত্রীসভায় শপথ নিয়েছিলেন সবাই তোমার লোক, প্রিয় জাতির পিতা।

এরপর ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ এ, জাসদ ও কর্ণেল তাহেরের সিপাহি জনতার অভ্যূন্হানের সাথে বিশ্বাসঘাতক করে জেনারেল জিয়া ক্ষমতার পাদপীঠে এসেই তোমার প্রিয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র পাল্টে দেয়, রাষ্ট্রের মূলভিত্তি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাংগালী জাতীয়তাবাদ নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়।

একে একে সমস্ত যুদ্ধপরাধীদের জেলখানা থেকে মুক্তি দেয় এবং তাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার করে।

প্রিয় জাতির পিতা, জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদ দু’জনেই তোমার খুনীদের পুর্নঃবাসিত করে।

একইভাবে বেগম জিয়াও খুনীদের পুর্নঃবাসিত করে।

বেগম জিয়া ২০০১ সালে শহীদদের রক্তে রন্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদের গাড়ীতে। এটা ছিল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি চরম অবমাননাকর।

কিন্ত প্রিয় জাতির পিতা,

শুধু তোমাকে হত্যা করেই ওরা ক্ষান্ত হয়নি, তারা ইতোমধ্যে তোমার বাংলাদেশেই তারা জন্ম দিয়েছে কিছু বিয়োগান্ত, মর্মান্তিক ঘটনা যা আজও সবাইকে পীড়া দেয়

১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর চার জাতীয় নেতাকে তারা জেলখানায় হত্যা করে।

৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট ও ৩রা নভেম্বরের খুনীদের যাতে বিচার না হয়, সেজন্য তারা জারী করেছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

জাতীয় শোক দিবসে বেগম জিয়া জাতির সাথে ও তোমার বিদেহী আত্মার সাথে তামাশা করে ভূয়া জন্মদিন পালন শুরু করে।

ঝালকাঠিতে বাংলা ভাইরা হত্যা করলো দুইজন বিচারককে।

একদিনে দেশের ৬৪ জেলার বোমা ফাটানো হলো।

২১ আগষ্ট ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের প্রধান প্রধান নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জসীট দেবার নামে জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়েছিল।

বোমা মেরে হত্যা করা হলো তোমার একসময়ের স্নেহধন্য , বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্রী শাহ এ এস এম এ কিবরিয়াকে।

হত্যা করা হলো জননেতা আহসানউল্লাহ মাষ্টার এমপি, জননেতা মমতাজ উদ্দিন এমপি।

বিচারের নামে প্রহচন করে হত্যা করা ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তমকে।

৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ এর পর হাজার হাজার সৈনিককে জেলখানা ও ক্যান্টনমেন্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হলো।

বিনা বিচারে হত্যা করা হলো ৮নং সেক্টর কমান্ডার মে.জে আবুল মন্জুরকে।

বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা ১২ মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে।

প্রিয় পিতা তোমার আত্নজা জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও বাবার হত্যার চেষ্টা করেছে ওরা।

প্রিয় জাতির পিতা তোমার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, উনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার।
কিনতু আপনার কন্যার সমস্ত অর্জন ধ্বংস করছে কতিপয় দুষ্টলোক, তারা দূর্নীতি- লুটপাট করে
(১) দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।
(২) কানাডার বেগম পল্লীতে বাড়ী বানাচ্ছে।
(৩) মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে।
(৪) বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা লুটপাট করছে।
(৫)বৈশ্বিক মহামারী করোনা কালেও গরীর মানুষের খাদ্য চুরি করছে।
(৬) সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে টাকা ফেরত দেয় না।
(৭)কেউ কেউ জনগণের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছে।
(৮) মাঝে মাঝেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে,তাদের সম্পদ লুন্ঠন হচ্ছে।
(৯) খুব কম সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা – কর্মচারী আছে যারা সাধারণ মানুষকে সন্মান দিয়ে কথা বলে।
(১০) যারা জনগনের প্রতিনিধি আছেন তারা জণগনের কাছে জবাবদিহি করে না,বরঞ্চ শোষকে পরিনত হয়। জনগণের প্রতিনিধি হয়েই প্রায় অধিকাংশ প্রতিনিধিই অগাধ অর্থবিত্তের মালিক বনে যায়।
আবার যারা অর্থবিত্তের মালিক হতে পারে না বা হয়না, তাদের পরিবারের সদস্যবর্গ বা আমজনতা তাদেরকে বোকা মনে করে, তাদের কোন যোগ্যতা আছে বলে মনে করে না। সমাজে তাদের কোন মর্যাদা নেই।
(১১) সরকারি চাকরি জীবি যারা ঘুষ না খেয়ে অর্থবিত্তের মালিক না হয়ে অবসরে চলে যায় তাদেরকে ভৎসনা করা হয়।
প্রিয় জাতির পিতা এই হচ্ছে তোমার সোনার বাংলার অবস্থা।
(১২) দূর্বিত্তায়ন চলছে।
(১৩) ধনী-গরিবের ব্যবধান বেড়েছে অনেক।
(১৪) এই করোনাকালে নিম্ন মধ্যবিত্তের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা সমাজ গবেষকরা ভাল বলতে পারে।
(১৫)ভোগবাদের প্রবণতা সর্বত্র।
(১৬)সত্যকথা বলে সমাজে মাথা উচু করে,মেরুদণ্ড সোজা করে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না।
(১৭)গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে সবাই চলতে চায়।
(১৮) শেয়ার বাজার বার বার লুন্ঠন হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।
(১৯) বন খেকো, জেলখানা খেকোদের বাসায় পাওয়া যায় বস্তা বস্তা টাকা।
(২০) এর আগে বার বার সামরিক শাসকদের বুটের তলায় পৃষ্ঠ হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বদেশ।
জানিনা এর শেষ কোথায়?
প্রিয় পিতা, তারপরও তোমার সৃষ্টি বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, তোমারই সুযোগ্য কন্যা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
এখন পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প দেশপ্রেমিক নেই।
-লেখক: জাতীয় যুব জোটের সভাপতি।

*মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখাই লেখকের নিজস্ব ব্যক্তিগত বক্তব্য বা মতামত।