Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস শীতের আমেজে আড্ডায় মেতেছে ইবি ক্যাম্পাস

শীতের আমেজে আড্ডায় মেতেছে ইবি ক্যাম্পাস

152

ইবি প্রতিনিধি : সূর্য যখন দক্ষিণ আকাশে হেলান দিয়ে তার চিরচেনা দীপ্ত সিংহ রূপকে আড়ালে রেখে বিশ্রামে ব্যস্ত ঠিক তখনই আগমন স্বভাবসুলভ হাড়কাঁপানো শীতের। উত্তরের শীতল হাওয়ায় দোল খেতে খেতে যখন শীতের আগমনী বার্তা জানান দেয় তখন নিরীহ সূর্যের এই সুযোগ নিতে চায় ক্যাম্পাসের প্রতিটা আড্ডা প্রেমী মানব। ক্লাস বা পরীক্ষা শেষে এক-দেড় ঘন্টা বাড়তি ব্যয় করে জামানো আড্ডাও তখন অমৃতের ন্যায়।

উইন্টার সলস্টিস বা দক্ষিণায়ন মেনে প্রতিবার তার নিজস্ব রূপ নিয়ে শীত আসে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সবথেকে বড় বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও তেমনিভাবে শীতের আগমন স্পষ্ট। উত্তরের হিমশীতল বাতাসে কুয়াশায় চাদর মুড়ি দিয়ে একসাথে সকালে হাঁটতে বেড়িয়ে ক্যাম্পাস নিয়ে স্মৃতিচারণা করার মতো সুন্দর মুহূর্ত হয়তো খুব কমই পাওয়া যাবে। সেই সুযোগে এক কাপ ধোঁয়া উঠা চা’য়ে চুমুক পেলে আর মন্দ কিসে! ঘন কুয়াশার মাঝে যখন সূয্যিমামা লুকোচুরি করে এক ফালি হাসি দেয় তখন কতই না মিষ্টি লাগে সেই রোদ। আর সেই মিষ্টি হাসির ছোঁয়া পেতে আগমন ঘটে ক্যাম্পাসের আড্ডা প্রেমী পিপীলিকাদের।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ঝাল চত্বর আর জিয়ামোড় যেনো শীতের হটস্পট। একদিকে একাডেমিক বিল্ডিং যেমন ঝাল চত্বরের কাছাকাছি অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো জিয়ামোড় ঘিরে। তাই এই দুই যায়গা ঘিরেই ক্যাম্পাসের অধিকাংশ আয়োজন। ক্লাস শেষে সবাই নিজ নিজ সার্কেল নিয়ে ক্যাম্পাসের মফিজ লেক, ডায়না চত্বর, বটতলা, ফুটবল মাঠ, ক্রিকেট মাঠ, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ সহ যেখানে সুযোগ পায় আড্ডায় মগ্ন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে এই আড্ডা যেনো তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। ক্যাম্পাসে পড়ে থাকা খড়কুটো,কাগজ একত্রিত করে এই তীব্র শীতে বনফায়ার যেনো সবার মনে উষ্ণতার দোল দিয়ে যায়।

পাশাপাশি প্রেমিক যুগলের নিকট যেনো এই শীত অন্যরকম রোমান্সের প্রতীক। যখন তীব্র শীতে একই চাদরে নিজেদের আবৃত করে তখন শীতের রোমান্স যেনো এক অন্য মাত্রায় পৌঁছায়। ত্বক, ঠোঁট ফাটানো শীতও তখন হার মানে তাদের উষ্ণতার কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড়, ঝাল চত্বর, পশ্চিম পাড়া সহ প্রধান ফটকের পার্শ্ববর্তী চা’য়ের দোকান যেনো তার যৌবনে ফিরে যায় শীত এলে। ক্যাম্পাসে চায়ের দোকানী রিপন মামার সাথে কথা বলে জানা যায়, শীত এলে অন্যান্য সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি হয় চা। তাছাড়া দোকানের পাশে দিনভর আড্ডা শেষে শেষরাত্রি অব্দি আড্ডা জমে থাকে। এতে আমার লাভও হয় বেশী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুলের মতে, শীতকালের এই সুন্দর মনোরম পরিবেশে ধোঁয়া উঠা চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জমানো আড্ডার থেকে সুন্দর মুহূর্ত খোঁজে পাওয়া মুশকিল। পাশাপাশি আড্ডার ছলে যখন হুট করে প্ল্যান করে দলবেঁধে পার্শ্ববর্তী এলাকায় খেজুরের রস খেতে বেড়িয়ে পরে সবাই, তার থেকে আনন্দের কি হতে পারে? শীতকালে মৃদু সূর্যের আলোয় বসে ডায়নায় আড্ডায় বসলে কখন যে এই ছোট্ট দিনের শেষ হয়ে যায় তাই টের পাওয়া যায় না।

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে রোদ্দুর হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায় না জিয়ামোড়ে পিঠের দোকানে ভিড়। দিনশেষে ক্লান্তি-অবসাদ হলের বেডে রেখে ঝাল পিঠায় কামড় দিতে দিতে আড্ডায় মেতে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে ব্যস্ত সকলে। এই আনন্দময় মূহুর্তের মায়া কাটিয়ে গৃহে ফিরতে পীপিলিকাদের কখনো কখনো ভোর নেমে যায়। শীতের আমেজে জমে উঠা এই ক্যাম্পাস আড্ডা তারুণ্যের মনে জোয়ার সৃষ্টি করে দিয়ে যায়।