Home জাতীয় শীতের আগমনী বার্তা, প্রস্তুতি নিচ্ছে গাছিরা

শীতের আগমনী বার্তা, প্রস্তুতি নিচ্ছে গাছিরা

31

ডেস্ক রিপোর্ট: উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে একসময় টুকিটাকি খেজুর গাছ দেখা যেতো। কিন্তু এখন আর তেমন চোখেই পড়ে না। শীতের সকালে খেজুরের রস নিয়ে বের হওয়া রসাল এ জেলায় ইতিহাসের গল্পের মতোই ছিলো। তবে ইদানিং বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা দুটি খেজুর বাগান বদলে দিয়েছে জেলার চিত্র। এখন এখানেও তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়।

গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ আর সকালের রস খাবার স্বাদ নিতে বাগানে ভিড় করছে বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। শীতের প্রতিটি সকালেই এই বাগানগুলোতে লেগে যায় রসমেলা উৎসব।

উত্তরের এই জেলার প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। সেইসাথে খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যাচ্ছে এই অঞ্চলের গাছিদেরও। শীত এলেই গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এই খেজুর গাছকে ঘিরেই।

ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের উদ্যােগে সদর উপজেলার নারগুনে ৫০০টি ছোট-বড় খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি বাগান। গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ করে ভাইরাল হয়ে যায় বাগানটি। এরপর থেকে রস ও গুড় সংগ্রহে প্রতিদিন সকালে শহরের বাসিন্দারা ভিড় করতে থাকে বাগানে।

এ বছর আবার সেই আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে বাগানটিতে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটাকুটি চলছে। সপ্তাখানেকের মধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানিয়েছে গাছিরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বটচুনা গ্রামে বেশ কয়জনের উদ্যােগে গড়ে উঠেছে একটি খেজুরের বাগান। গত ২ বছর থেকে তারা বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদন শুরু করেছে। প্রত্যন্ত গ্রামটিতে গড়ে ওঠা বাগানটি এখন সেই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নায়নের কাণ্ডারি বলে জানায় এলাকাবাসী।

তাদের অনুসরণ করে জেলার অনেকেই আগ্রহী হয়ে খেজুরের বাগান করতে চাইছে। উদ্যােগতারা প্রতিনিয়তই বাগানির কাছে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে আসছেন বলে জানান বটচুনার বাগান মালিক বাগান সোহেল রানা।

সোহেল রানা জানান, প্রায় ২০ দিন হয়েছে কাজ শুরু করার। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেটে ফেলা হয়েছে। এখন ধারালো দা (গাছিদা) দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করে (যাকে বলে চাঁচ দেয়া) নোলন স্থাপনের কাজ শেষ। কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। তার পরেই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হবে লোভনীয় গুড় ও পাটালি।

তিনি জানান, গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এইভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়। এতে সংগৃহীত রসে গাঁজন বন্ধ হয়।

ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করেন এই গাছিরা। প্রতিদিন বিকালে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) গাছে বাঁধা হয়, আর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন।

এ বিষয়ে বটচুনার গাছি তালেব বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে একসময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তাল গাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।’ ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন করে উদ্যোগী হয়ে খেজুরের বাগান গড়ে তোলাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।

নতুন করে কেউ খেজুরের বাগান করতে চাইলে বা এই খেজুরের গাছ রোপণে যে কোনো সহযোগীতায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, এই জেলায় খেজুরের গাছ রোপণের ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঠাল আর লিচু নিয়েই ব্যস্ত। সব গাছেরই প্রয়োজন আছে। খেজুর বাগান উদ্যােগতাদের স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।-আমাদের সময়.কম