Home জাতীয় শহীদদের স্মৃতিফলকে আছেন জীবিত মুক্তিযোদ্ধারাও!

শহীদদের স্মৃতিফলকে আছেন জীবিত মুক্তিযোদ্ধারাও!

32

ডেস্ক রিপোর্ট: বরিশালের হিজলা উপজেলায় নবনির্মিত একটি স্মৃতিফলকে শহীদদের তালিকায় জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম পাওয়া গেছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান চিরস্মরণীয় করে রাখতে হিজলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পত্তনী ভাঙ্গা জোনা মার্কেট এলাকায় নির্মিত স্মৃতিফলকে শহীদদের নামের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারাও স্থান পেয়েছেন। এতে এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি আমাকে জানায়। পরদিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখি শহীদদের নামের তালিকাসম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। সেই স্মৃতিফলকে শহীদ হিসেবে ইউনিয়নের ৪০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান পেয়েছে। তবে আমার ভুল না হলে তারিকার ৪০ জনের মধ্যে ১৬ জনই এখন জীবিত। সেখানে সেদিন আমি ছাড়াও আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি দেখে স্মৃতিফলক নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের কেয়ারটেকারকে পেয়ে বিষয়টি জানাই। পরে ইউএনও’র মুঠোফোনে কল করি। ফোন রিসিভ করে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। তাকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাসকে বিষয়টি জানাই। তাকে স্মৃতিফলক সংশোধন করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেটি সংশোধন করা হয়নি। শুক্রবার সেখানকার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে জেনেছি স্মৃতিফলক সেভাবেই রয়েছে।

গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চরপত্তনী ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দলিল উদ্দিন জানান, স্মৃতিফলকে শহীদদের তালিকার ১১ নম্বরে রয়েছে তার নাম। সম্প্রতি বিষয়টি কিভাবে যেন আরও বেশি জানাজানি হয়েছে। দূরে থাকা স্বজনদের কানেও বিষয়টি পৌঁছে গেছে। অনেকে সত্য না জেনে কান্নাকাটি করছেন। ফোন দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হতে হচ্ছে। যারা এ কাজ করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিৎ। বিচারের আওতায় আনা দরকার।

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দলিল উদ্দিন বলেন, স্মৃতিফলকে অসংখ্য ভুল রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের বানান ভুল রয়েছে। ঠিকানা লিখতে গিয়েও গ্রামের নামের বানানে অসংখ্য ভুল রয়েছে। যা সত্যিই আমাদের ব্যথিত করেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) হিজলা উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাস জানান, মাসখানেক আগে এ উপজেলায় যোগ দিয়েছি। বর্তমানে একটি প্রশিক্ষণ চলমান থাকায় উপজেলার বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহিউদ্দিন বিষয়টি মুঠোফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে স্মৃতিফলক অপসারণ করতে বলেছিলাম। এরপর ভুল সংশোধন করে নতুন স্মৃতিফলক স্থাপন করতে বলেছিলাম। কিন্তু কেন তা করা হল না, তা খোজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, স্মৃতিফলকের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে অবহিতও করেননি। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাতে বাঙালি জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাদের এই ত্যাগের অপরিসীম মহিমাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে এই স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। স্মৃতি ফলকে নামাঙ্কিত করার সময়, যারাই কাজটি করেছেন, তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিৎ ছিল। বিষয়টি খোজ নিয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।-ইত্তেফাক