Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি ছয় বছরেও উদ্ধার হয়নি রিজার্ভ চুরির বেশির ভাগ অর্থ

ছয় বছরেও উদ্ধার হয়নি রিজার্ভ চুরির বেশির ভাগ অর্থ

38

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার ছয় বছর পার হয়ে গেলেও বেশির ভাগ অর্থ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। আলোচিত এই চুরির ঘটনার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া এ অর্থের মধ্যে ফেরত আনা গেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৫৬১ কোটি টাকা) আদৌ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সেই ঘটনার পরে বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিন পরে চুরির তথ্য জানতে পারে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এই তথ্য আরো ২৪ দিন গোপন রাখা হয়। আর বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় চুরি যাওয়ার ৩৩তম দিনে। ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। পরে ঐ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। রিজার্ভ চুরি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে যে মামলা করেছিল তা টেকেনি। ২০১৬ সালে সেই ঘটনার পর ফিলিপাইনের একটি সংবাদপত্রে এ বিষয়ে তদন্তের খবর বেরোয়। এরপর জনসমক্ষে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরের এমন ১৩ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে পুলিশ ঐ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে এখন পর্যন্ত আট দেশের অন্তত ৭৬ ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
যেভাবে ঘটনা শুরু :২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটি। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা, যারা পেছনে থেকে চুরির কাজটি করেছিল।
বিবিসির সংবাদ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার বিবরণ এমনটাই বলছে। হ্যাকাররা নেসট্যাগ ও ম্যাকট্রাক নামক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কে ঢুকতে পেরেছিল। পূর্বে নির্ধারিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করার পর ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮:৩৬ মিনিট নাগাদ সুইফট সিস্টেমে লগ-ইন করতে সমর্থ হয় হ্যাকাররা। পরে রাত প্রায় ৮:৫০ থেকে ১০:৩০টা পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ কোটি মার্কিন ডলার সরানোর জন্য ৩৬টি পেমেন্টে অর্ডার পাঠায় তারা। ট্রানজেকশনের তথ্যের গড়মিলের কারণে সেখান থেকে মাত্র একটি পেমেন্ট অর্ডার মধ্যবর্তী আরেকটি ব্যাংকে আটকে যায়। ২ কোটি ডলারের ঐ পেমেন্ট অর্ডারটি করা হয় শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে। কিন্তু প্যান এশিয়া ব্যাংকিং কর্পোরেশন সেখানে বানান ভুলটি ধরে ফেলে। বাকি ৩৫টি পেমেন্ট অর্ডার নিউ ইয়র্ক ফেড বাতিল করে দেয়, কারণ সেখানে মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমেডিয়ারি) ব্যাংকের পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না।

পরবর্তী সময়ে হ্যাকাররা সেসব তথ্য আপডেট করে পুনরায় ৩৪টি পেমেন্ট অর্ডার পাঠায়। এটি ঘটেছিল বৃহস্পতিবার রাত ১১:৩০টা থেকে শুক্রবার রাত ১:০০টার মধ্যে। ঐ রাতেই ৩:৫৯ মিনিটে হ্যাকাররা সুইফট সিস্টেম থেকে লগ-আউট করে। সে সময় তাদের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে হ্যাকাররা একটি ম্যালওয়ার ব্যবহার করে। ২০১৬ সালে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরিকে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বকালের সবচেয়ে দুঃসাহসী সাইবার হামলার স্বীকৃতি দিয়েছে। এই টাকা চুরি করতে গিয়ে হ্যাকাররা ব্যবহার করেছে নকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, দাতব্য সংস্থা ও ক্যাসিনোর বিস্তৃত এক নেটওয়ার্ক।
তবে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা থাকলেও কবেনাগাদ পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, পুরো অর্থ দুই-তিন বছরের মধ্যে ফেরত আনা সম্ভব হবে। চুরির প্রথম বছর শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের স্বেচ্ছায় দেওয়া অর্থের বাইরে আর এক টাকাও উদ্ধার হয়নি। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশে কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফিলিপাইনের নাগরিক এবং আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখার সাবেক ম্যানেজার মায়া দেগুইতোকে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ফিলিপাইনের একটি আদালত। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সরকার। তদন্ত কমিটির বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন চিহ্নিত করে। তবে সেই কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।-ইত্তেফাক