Home সাহিত্য ও বিনোদন শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে দুদিনব্যাপী জমজমাট আয়োজন

শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে দুদিনব্যাপী জমজমাট আয়োজন

37

জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সারাদেশের ৬৪ জেলার প্রতিযোগিদের অংশগ্রহণে জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলা ও মহানগর পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকারী ১৩৬৫ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে চূড়ান্ত/কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চগীতিকবির গান, লোকসঙ্গীত, দেশাত্ববোধক গান, সাধারণ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য, একক আবৃত্তি ও একক অভিনয় ৭ টি বিষয়ে মোট ২১ শ্রেণীতে এ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতীয় নাট্যশালা ভবন, জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন ও সঙ্গীত, নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে সকাল ৯.০০টা থেকে এই ৭ টি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় বিকাল ৩.০০ টা পর্যন্ত। সারাদিনব্যাপী চলা এ আয়োজন উপলক্ষ্যে প্রতিযোগী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে একাডেমি প্রাঙ্গণ।

প্রতিটি কেন্দ্রে বিচারক হিসেবে ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের স্বনামধন্য গুণী ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে আগত অভিভাবকরা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ আযোজনকে সাধুবাদ জানান। তারা বলেন, ‍‍‌“বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত। সব জেলার শিশুদের এক জায়গায় নিয়ে আসার বিশাল কাজ করেছে একাডেমি”।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া গুণী বিচারকগণ বলেন- ‘বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শিশুদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার বিশাল এই কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত প্রসংশনীয়। এতে করে নতুন নতুন প্রতিভার উন্মেষ ঘটবে, তাদের জন্য সুযোগ তৈরী হবে”।
প্রতিযোগিতা শেষে সকল অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিদের নিয়ে বিকাল ৪.০০ টায় অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও সমবেত সঙ্গীত। একাডেমির নন্দন মঞ্চে এই আয়োজনে অংশ নেয় দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত প্রতিযোগীরা। এ সময় বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী। শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন –‘ শিশুরা যারা পুরস্কার পাবে না তারা মন খারাপ করবে না। নিয়মের কারণে হয়ত ১ম, ২য়, ৩য় ঘোষণা করতে হবে কিন্তু তোমরা সবাই সেরা। আমাদের দেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে, আমাদের উদ্দেশ্য হলো শিল্প সমৃদ্ধ সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা”।

‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সকলের জন্য তা বলে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান,যোগ করেন তিনি।

পরে সব শিশুরা পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত। এর পরেই সমবেত সঙ্গীত- ‘আমরা সবাই মঞ্চকুড়িঁ, নটনন্দনে ফুটবো’ সমবেত সুরে পরিবেশন করেন সব শিশুরা। এরপরই একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সম্মানিত সচিব জনাব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিমিন হোসেন রিমি, সভাপতি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব খলিল আহমদ। অনুষ্ঠান আয়োজন উপভোগ করেন দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত প্রতিযোগী শিশু ও অবিভাবকরা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব খলিল আহমদ বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে গুণী শিল্পীদের পৃষ্টপোষকতা দিতে চাই, প্রয়োজনে বৃত্তির ব্যবস্থা করবো”।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি বলেন, “মানুষের মনের মধ্যে যে নেতিবাচকতা, উগ্রতা রয়েছে, তা কেবল সংস্কৃতির নানা মাধ্যমের চর্চা, সঙ্গীত, নৃত্যে, নাটক, কবিতার মধ্যে দিয়ে দূর করা সম্ভব’। এসবের মধ্য দিয়ে সব ধরনের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকা সম্ভব”।

২য় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই পরিবেশিত হয় সমবেত সংগীত এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের। পরিবেশনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু কিশোর সংগীত দল। কথা ও সুর জনাব লিয়াকত আলী লাকী। তারপরেই পরিবেশিত হয় অ্যাক্রোবেটিক, ক্যাপ ডান্স।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আগত চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগী শিশু ও যুবদের নিয়ে ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলাদা আলাদা বিভাগের প্রতিযোগীদের ফটোসেশনের মাঝে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দলীয় আবৃত্তি, পরিবেশনায় কল্পরেখা। তার পরে পরিবেশিত হয় সাউদিয়া অ্যাক্রোবেটিক, পরিবেশনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অ্যাক্রোবেটিক দল। এর পরে আবারো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগি দলের ফটোসেশন শেষে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য- চলো বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন তামান্না তিথি এবং শিশু শিল্পী তাহফীম যুনাইরা আনশী।

এদিকে বটতলার বাউলকুঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে পূনির্মা তিথির সাধুমেলার ১৫২ তম আসর। বিকেলের আসরে বাউল সংগীত পরিবেশন করেন টিটু বাউল, রনি বাউল, ফারুক বাউল, বাউল সুবর্ণা হামজা ও তানিয়া বাউল।

‘ক্ষ্যাপা ছাড়া মানুষ রে তুই’, ‘মিলন হবে কতদিনে’, সহ অনান্য দলীয় বাউল সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের লক্ষ্যে সকল মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ তৈরী করে শিল্প- সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেই লক্ষ্যেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিস্তৃত ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী একযোগে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে একাডেমি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবান শিল্পীদের অন্বেষণ করে তাদের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার সুযোগ তৈরী করে দেয়ার লক্ষেই জাতীয় পর্যায়ে এ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

জেলা পর্যায় থেকে বিজয়ী ১ম স্থান অধিকারী মোট ১৩৬৫ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। এ আয়োজনে ২১ টি প্যানেলের প্রতিটিতে ৩ জন করে মোট ৬৩ জন বিচারক নিয়োজিত ছিলেন। দেশের বিশিষ্ট ও স্বনামধন্য ব্যক্তিগণ সকল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সেরাদের মধ্যে সেরা হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী পাবেন ৩০ হাজার টাকা অর্থমূল্য, সনদপত্র ও ক্রেস্ট এবং ২য় স্থান অধিকারী পাবে ২৫ হাজার টাকা অর্থমূল্য, সনদপত্র ও ক্রেস্ট এবং ৩য় স্থান অধিকারী পাবেন ২০ হাজার টাকা অর্থমুল্য, সনদপত্র ও ক্রেস্ট। চূড়ান্ত পর্যায়ে ৬৪ জেলা থেকে আগত বিজয়ী ও ঢাকা মহানগরের ১ জনসহ মোট ৬৫ জন ১ম স্থান অধিকারী বিজয়ীগণ প্রতিটি শাখায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১ম,২য় ও ৩য় হিসেব সর্বমোট ৬৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।