Home জাতীয় শিক্ষা সংকট নিরসনে ছাত্র ইউনিয়নের সেমিনার

শিক্ষা সংকট নিরসনে ছাত্র ইউনিয়নের সেমিনার

35

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ‘করোনাকালে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার সংকট এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আজ সকালসাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মুনীর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফয়েজ উল্লাহ’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় শিক্ষা সেমিনারে আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ. এন. রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রাম প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন।
সেমিনারের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু সেমিনারের প্রবন্ধ পাঠ করেন। প্রবন্ধ পাঠ শেষে প্রবন্ধের উপর সম্পূরক আলোচনা করেন অতিথিবৃন্দ।
আকমল হোসেন বলেন, “শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার সংকট নতুন কিছু নয়। করোনাকালে তা পূর্বের চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। করোনাকালে শিক্ষা খাতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরেছে। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে টাকা লুটপাট চলছে। এই সংকট নিরসনে ছাত্র-শিক্ষক- অভিভাবকসহ সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে এবং তা করতে হবে সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।”
সমীর রঞ্জন নাথ বলেন,”নানান সময়ে বাংলাদেশের নানা সংকট নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন তা তুলে ধরেছে ও উত্তরনের জন্য চেষ্টা করে করেছে।দেশে যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে তা মানসম্মত ও যথোপযুক্ত নয়। একেক বয়সের শিক্ষার্থীদের একেক ভাবে বুঝাতে হবে। দিনদিন শিক্ষকদের মানও কমছে। আজকাল তারা গাইড বই নির্ভরতা ও প্রশ্নফাঁস করার ঘটনা ঘটানোর প্রবণতা আছে। ১৮ মাসে কোন উপজেলাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিজ্ঞেস করে নি আপনার উপজেলায় শিক্ষার কি অবস্থা? এই সময়ে আমরা যতবার সমতার কথা শুনেছি তার ৫০ গুণের অধিক শুনেছি অসমতার কথা। করোনাকালে ১৮ মাস স্কুল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কত শতাংশ উপস্থিতি বেড়েছে? নাকি কমেছে? এর মাঝে কতজন শিক্ষার্থী ঝড়ে পরেছে তার নির্দিষ্ট সংখ্যা কেউ নিশ্চিত নয়। কত শতাংশ শিক্ষার্থী নতুন করে শিক্ষা জীবনে প্রবেশ করেছে তারও কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা আমাদের জানা নেই। এধরনের সংকট নিয়ে কাউকে কোন কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। বরাবরের মতোই তথ্য গোপনের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে তা যাচাইয়ের কোন উদ্যোগ সরকারি ভাবে নেই। এসকল সংকট বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। তা না হলে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে বা ক্ষতি থেকে কতটুকু উত্তরণ ঘটেছে তা নিশ্চিত না হয়ে সমাধানের পথ বের করা কষ্টসাধ্য। সবকিছু রাষ্ট্র করে দিবে এমন না। আমাদের কি করনীয় বা আমার কি করনীয় তা স্পষ্টভাবে আলাপ করা জরুরি। অনলাইন ও টেলিভিশনে পাঠক্রম ছিলো অপরিপক্ক। শিক্ষকদেরও মান আজ প্রশ্ন বিদ্ধ যার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অনলাইন-অফলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা গোছালো হওয়া জরুরি।”
অধ্যাপক এম. এম. আকাশ বলেন, “সমস্যার গভীরে যাওয়ার প্রয়াসে জরিপ করার জন্য ছাত্র ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রত্যাশা করি এই জরিপের মাধ্যমে ছাত্র ইউনিয়ন শিক্ষা সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এই করোনাকালে বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা ছাড়াও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনেক স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুল ছাড়িয়ে মাদ্রাসায় দেয়া হয়েছে। মানসম্মত ও গোছালো অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি জরুরি। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান জরুরি। অনলাইন সংক্রান্ত দাবি এখন সময়ের দাবি। ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে এ সংকট নিরসন শুরু হোক। আমরা করোনাকালে ছাত্র ইউনিয়নের কাজ দেখেছি। যা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও প্রশংসার দাবি রাখে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরাতে উপবৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি ও মিড-ডে মিল চালু করার দাবিতে আন্দোলন জরুরি। আমরা দেখেছি শিক্ষাখাতে প্রণোদনা না দিয়ে গার্মেন্টসখাতে প্রণোদনা দিয়েছে নিদিষ্ট শর্তে। কিন্তু তা মানেনি ব্যবসায়ীরা। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিগুলোকে একীভূত করে একটি ব্লক ছুটি ঘোষণা করার দাবি জানাই। আমরা শুধু প্রসার চাই না মানসম্মত শিক্ষাও চাই।”
অধ্যাপক এ. এন. রাশেদা বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম কেউ খাবে তো কেউ খাবে না তা হবে না তা হবে না। এর কারণ ছিলো সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। আমরা যাই করি প্রথমেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কেননা পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। ৯০ দশক থেকে শিক্ষা ও শিক্ষক সংকট চলছে।মানসম্মত শিক্ষক থাকলেও শিক্ষকদের যথোপযুক্ত বেতন দেয়া হয় না। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষকের বেতন হওয়া উচিত। শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করা হয়। বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ধ্বংস ও লুটপাট করা হচ্ছে। এই টাকা লুটপাট করছে আমলা থেকে নানা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের যথাযথ ভাবে শিক্ষা না দিয়ে পরের ক্লাসে উঠানোর ফল ভয়াবহ হতে পারে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের জন্য টাকা থাকে না কিন্তু দুর্নীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। মাথাপিছু টাকা বাড়িয়ে বাজেট বাড়ানো হয় বছরের পর বছর। প্রতিটি উপজেলায় আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের ফলে শিক্ষাখাতে ক্ষতি বৈ বিন্দুমাত্র লাভ হয়নি।”
আলোচকবৃন্দ শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।