Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের দাবী উপেক্ষা করে গাজীপুরেই হচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা

শিক্ষার্থীদের দাবী উপেক্ষা করে গাজীপুরেই হচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা

108

স্টাফ রিপোটার: শিক্ষার্থীদের শত দাবি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ তাদের স্নাতকোত্তর প্রথম ও শেষ বর্ষের পরীক্ষা গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন একপেশে আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শেষ পর্বের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন আচরণে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। অনেকেই এই গরমের মধ্যে গাজীপুরে পরীক্ষা নেওয়া হলে তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। তবে, যেহেতু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চাকরিজীবী তাই এখানে শুধু শুক্রবারে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় আর শনিবার প্রায় ১৭টি ক্লাসরুম পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। সেখানে কেন পরীক্ষা ঢাকায় নেয়া সম্বব হবে না, জানতে চেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বারবারই একটা কথাই বলছেন, গাজীপুরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভাল হয়েছে। তাই কোন অসুবিধা হবেনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের প্রত্যেকের যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাড়ি দিয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষক থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যাতায়াতের জন্য এসিযুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা আছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ওয়েবসাইটে নোটিশ প্রকাশের জানতে পারি যে, আমাদের পরীক্ষা গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরীক্ষার রুটিন এমনভাবে দেয়া হয়েছে যে, রোজা ঈদের পরপরই পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এটি দেখার পর আমরা দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য(শিক্ষা), পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ডিন বরাবরে আমাদের দরখাস্ত জমা দেই। এতে আমরা, দুটো দাবি উল্লেখ করি। প্রথম দাবিটি হচ্ছে, ঈদের পরপরই পরীক্ষা না নিয়ে তা এক সপ্তাহ পেছানো আর দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, আমাদের পরীক্ষা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী, ঢাকায় আঞ্চলিক কেন্দ্রে নেয়া। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করি যে, আমাদের প্রথম দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত মেনে নিয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় দাবিটি মেনে নেয়নি। আর আমরা যতদূর জানতে পেরেছি প্রথম দাবিটি মেনে নেওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের স্বার্থ জড়িত ছিল। কেননা, ১৭ এপ্রিল ক্যাম্পাস খোলার পরপরই ১৯ এপ্রিল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এরপ্রেক্ষিতে যারা ঈদের ছুটিতে যেত তাদের জন্য ছুটির সমস্যা হয়ে যেত। তাই তারা আমাদের এই দাবি মেনে নিয়েছে কিন্তু আমাদের নিজেদের যে আরও একটি দাবি ছিল সেটি তারা মেনে নেয়নি। এটি নিয়ে আমরা হতাশায় ভুগছি।
নন্দন দিও বলেন, ‘আমাদের দাবিরপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তন হয়নি। আমাদের কারো যদি খুব জোর থাকত তাহলে হয়ত হত।’
শিক্ষার্থী ফারজানা সিদ্দিকী বলেন, পরীক্ষা ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে হবে জেনেই ভর্তি হয়েছি। এখন গাজীপুরে পরীক্ষা হবে। এটা আমার জন্য সমস্যা হয়ে গেল। ঢাকায় পরীক্ষা হলে ভাল হত। আমার যাতায়াতের জন্য সুবিধা হত। এখন এই গরমে কিভাবে গাজীপুর যাব আর কিভাবে পরীক্ষা দেব এটা চিন্তা করতেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, এই গরমে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে একমাত্র আমাদের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা। আর এখানে আমাদের ঢাকায় পরীক্ষা হলে আমরা কত সহজেই পরীক্ষা দিতে যেতে পারতাম। কিন্তু গাজীপুরে পরীক্ষা হওয়ায় আমার যেতে আমার বাসা নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় যেতে আসতে কমপক্ষে আট ঘন্টা সময় লাগবে। এই গরমের মধ্যে আমার পক্ষে গাজীপুরে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হবেনা। এটা করলে আমি অসুস্থ হয়ে যাব। তাই, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকায় পরীক্ষা হলে দিব না হলে আমি এই পরীক্ষায় অংশ নেবনা। কারণ, এত অসহনীয় গরমে আমার পক্ষে গাজীপুর গিয়ে পরীক্ষা দেয়া কিছুতেই সম্ভব না। আমার এখন দুইটাই দাবি, এই গরমে পরীক্ষা পেছানো হোক। আর ঢাকায় আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হোক। তিনি বলেন, আমরা এখানে পরীক্ষা দেব বলে ভর্তি হয়েছি। আমাদের এখানে পরীক্ষা নেবেনা আবার ল ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা ঢাকায় নেবে এটা কেমন কথা? আমরাও টাকা দিয়েছি। ল’রাও টাকা দিয়েছে। তাদেরকে ভার্সিটি সম্মান করতে পারবে, আমাদের কেন পারবেনা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বারবার বলা হচ্ছে সেখানে ডরমেটরি আছে। আমরা ঢাকায় পরীক্ষা না দিয়ে কেন গাজীপুরে পরীক্ষা দেব? আর ডরমেটরি থাকতে গেলে ৪০০ টাকা দিতে হবে। এই টাকাটা কোথায় পাব বলেন? কেন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কষ্ট বুঝতে চাইছে না। এটাই প্রশ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমএ, এমএসএস শেষ পর্বের পরীক্ষা আগামী ১৯ এপ্রিল শুরু হওয়ার নোটিশ দেয়। নোটিশে শুধু আইন বিভাগের পরীক্ষা ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে হওয়ার কথা জানানো হয়। বাকি ৫টি বিষয়ের (বাংলা, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব) পরীক্ষা গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। এই বিষয়টি জানার পরপরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে সকল পরীক্ষা নেবার জন্য আহ্বান জানায়। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তারা এই বিষয়টি পরীক্ষা বিভাগের বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে উপাচার্য বরাবর, পরীক্ষার ভেন্যু পূর্বের অর্থাৎ ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে রাখার দাবি জানিয়ে দরখাস্ত জমা দেন। কিন্তু আজ ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তনের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ দেখা না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সোশ্যাল সাইন্স, হিউম্যানিটিজ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ (এসএসএইচএল) এর ডিন জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমানোর জন্যই এটি করা হয়েছে। দুই বছরের কোর্স আমরা ছয় বছরে শেষ করব এটা তো ঠিক হবেনা। করোনার সময় যে সেশনজট শুরু হয়েছে তা এখনও দূর করতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করেই আমরা তাদের পরীক্ষা গাজীপুরে নিচ্ছি। তিনি বলেন, মার্স্টার্স কখনোই ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে ছিলনা। এটা ঢাকা কলেজে ক্লাস নেয়া হত। কিন্তু তারা এখন জায়গা দিতে না পারাই গাজীপুরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর মার্স্টার্স কোসর্টাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এতে ছাত্রদেরই উপকার হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের রাতে থাকার ব্যবস্থা থাকবে। তারা এখানে এমনকি স্বামী-স্ত্রীসহ থেকেও চাইলে পরীক্ষা দিতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রসঙ্গে উপাচার্য ড. সৈয়দ হুমায়ন আখতার পিএইডির সঙ্গে কথা বলতে তার দুটো মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।