Home রাজনীতি লুটেরাগোষ্ঠী ও বাজার সিন্ডিকেটের উপর বুলডোজার চালাতে হবে: ইনু

লুটেরাগোষ্ঠী ও বাজার সিন্ডিকেটের উপর বুলডোজার চালাতে হবে: ইনু

32

রংপুর অফিস: আজ ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে রংপুর টাউন হলে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধানঅতিথির ভাষণে জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থায়ী শান্তির জন্য রাজাকার ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীদের ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে এবং দূর্নীতিবাজ লুটেরাগোষ্ঠী ও বাজার সিন্ডিকেটের উপর বুলডোজার চালাতে হবে।

জনাব ইনু বলেন, দেশের রাজনীতির বর্তমান অস্থিরতা, সংঘাত ও সংঘর্ষ নতুন নয়, এটা ‘৫২, ‘৭১ ও ‘৭৫-এর পুরাতন বিরোধের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, ‘৫২ ও ‘৭১-এ মীমাংসিত বিষয়গুলোকে অমীমাংসিত করা ও ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার রাজনীতির মাধ্যমে পরাজিত শক্তি এই বিরোধের জাগিয়ে তুলেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে মুশতাক-জিয়া এই ‘৫২ ও ‘৭১ বিরোধী, বাংলা-বাঙালি- বাংলাদেশ-স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজে চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে বিরোধের রাজনীতিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে। বিএনপি-জামাতসহ ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গীবাদী, উগ্রবাদী শক্তিগুলো এই বিরোধের রাজনীতির ধারক ও বাহক। এরা বাঙালির আত্মপরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান মানে না। এরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহনীর গণহত্যার পক্ষে, রাজাকার-আলবদর- যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পক্ষে সাফাই গায়। এরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ধারাকে নিশ্চিহ্ন করতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছে ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে।

জনাব ইনু বলেন, বাঙালি-বাংলা- বাংলাদেশ- মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যতদিন রাজনীতির মাঠে থাকবে, ততদিন দেশের রাজনীতির অস্থিরতা-সংঘর্ষ- সংঘাত-অশান্তির অবসান হবে না। জনাব ইনু বলেন, বাংলা-বাঙালি- বাংলাদেশ-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার বিপক্ষের অপশক্তি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রুদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত-দমন-ধ্বংস করেই রাজনীতি ও সমাজে স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে হবে।

হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, এসব শেখ হাসিনার একার মতায় থাকার বিষয় নয়; বরং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামাতসহ ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদী-উগ্রবাদী শক্তিকে বর্জন ও ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে। সমগ্র জাতিকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে
সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ আফিগানিস্তান- পাকিস্তানের মত তালেবানি পথে যাবে, নাকি ধর্মের নামে সংঘাত-সংঘর্ষ- অশান্তি- খুনাখুনি-রক্তারক্তির পথে যাবে, নাকি-শান্তি- স্থিতিশীলতা- উন্নয়নের পথে যাবে?

জনাব ইনু বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রুদের বর্জন ও পরাজিত করার রাজনৈতিক সংগ্রামের সাথে সাথে সমানতালে-সমান্তরালে জনগণের দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর করা, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক-অযৌক্তিক উর্ধগতি রোধ করতে বাজার সিন্ডিকেট
দমন, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের দমন, দলবাজী ও ক্ষমতাবাজী বন্ধ এবং বৈষম্যের অবসান করতে বাংলাদেশকে সুশাসন ও সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির ভাষণে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি বলেন, দেশ ও জাতির চিরশত্রু এবং নারীর চিরশিত্রু ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদী-জঙ্গীবাদী অপশক্তি মোকাবেলার ঐক্য ও জোটের রাজনীতির পাশাপাশি জাসদের নিজস্ব একটি রাজনীতি আছে। জাসদের রাজনীতি হচ্ছে বৈষম্যের অবসান করা এবং দেশ ও বাজেটের সম্পদ সমাবেশ ও বিলিবন্টনে বঞ্চিত-অসহায়- নিরুপায়-কর্মহীন-আয়হীন নারী পুরুষকে অগ্রাধিকার দেয়া।

তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির যে সক্ষমতা ও জাতীয় বাজেটের যে আকার, দেশের অর্থসম্পদ সঠিক ও দুর্নীতিমুক্ত ভাবে বিলিবন্টন হলে এই বঞ্চিত অবহেলিত মানুষকে মানবিক জীবনে টেনে তোলা সম্ভব। সেটা করার জন্য সংবিধানের দুই মলাটে ছাপার হরফে বন্দী সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক পরিকল্পনা নীতি ও বাজেট প্রণয়নের নীতির ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। তাই জাসদ রাজপথে ও সংসদে সমাজতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার আছে। জাসদ সমাজতন্ত্র ও সুশাসনের পথে বাংলাদেশকে
এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ধারণ করে দলের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে।

জাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ডা. একরামুল হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীরমুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, ঠাকুরগাঁও জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যক্ষ রাজিউর রহমান বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মারুফ মনা, কুমারেশ রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খুদি, সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, দিলরুবা আলিয়া সুলতানা লিমা, সদস্য হেনা সোবহান, এলমা লতিফ শিল্পী, রংপুর মহানগর জাসদের সভাপতি সহিদুল ইসলাম, নীলফামারি জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম হাবিবুর রহমান বিদ্যুৎ, দিনাজপুর জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি, পঞ্চগড় জেলা জাসদের সভাপতি অলিয়ার রহমান, রংপুর জেল জাসদের সহ-সভাপতি মীর মোহাম্মদ মানিক, জাসদ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব শামসুল হক, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক শাফিয়ার রহমান, জলঢাকা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাসদ নেতা গোলাম পাশা এলিচ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, হরলাল রায়, জুয়েল রানা প্রামানিক, এহতেশাম জেমিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন ।