Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি রোজায় বিভিন্ন দেশে কমেছে পণ্যের দাম: বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র

রোজায় বিভিন্ন দেশে কমেছে পণ্যের দাম: বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র

28

ডেস্ক রিপোর্ট: রমজানকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পণ্যের দাম কমাচ্ছে, চলছে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা। অনেক ব্যবসায়ী মাসজুড়ে মুনাফাবিহীন পণ্য বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে ৮শর বেশি পণ্যের দাম কমিয়েছে কাতার।
পণ্যের দামে প্রায় ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে এক সপ্তাহের মেলা শুরু করেছে মিসর। লক্ষ্য ১০ কোটি মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানো। একই অবস্থা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও মালয়েশিয়ায়ও।

ইউরোপ-আমেরিকায়ও বিভিন্ন কার্ডে রয়েছে নানা ছাড়। কিন্তু সংখ্যায় দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশের চিত্র একেবারেই উলটো। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা রমজানকে অর্থ উপার্জনের মৌসুম হিসাবে নিয়েছেন।

ক্রেতাদের জিম্মি করে আদায় করে নিচ্ছেন বাড়তি টাকা। পাশাপাশি ভেজালে সয়লাব বাজার। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নিলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। এ কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের গতানুগতিক জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের বোঝা নিয়ে আসছে রমজান।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রমজান এলে অসাধু সিন্ডিকেট চাঙা হয়ে ওঠে। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি দরকার। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ে।
রমজান এলে বেশকিছু অসাধু ব্যবসায়ী সক্রিয় ওঠে। নানা অজুহাতে এরা দাম বাড়ায়। অসাধু সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা যায়, আত্মশুদ্ধির মাস রমজান নিয়ে আসে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা। এ উপলক্ষ্যে পণ্যের দাম কমায় বিভিন্ন দেশ। রোজার এক সপ্তাহ আগেই এবার ৮০০টির বেশি পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কাতার।
২৩ মার্চ এক বিবৃতিতে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়। ২৪ মার্চ থেকে তা কার্যকর হয়েছে। দেশটির সব বাজার ও সুপারশপেও এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
কাতার ট্রিবিউনের তথ্য অনুসারে যেসব পণ্যের দাম কমানো হয়েছে সেগুলো হলো ময়দা, মধু, সিরিয়ল, কর্নফ্লেক্স, ইয়োগার্ট, দুধ ও ডেইরি সামগ্রী, গুঁড়াদুধ, কনডেন্সড মিল্ক, পনির, ফলের রস, চিনি, কফি ও কফিজাত দ্রব্য, খেজুর, মিনারেল ও বোতলজাত পানি, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, পেপার ন্যাপকিন, ওয়াশিং পাউডার, ট্র্যাশ ব্যাগ, পেস্ট্রি, পাস্তা, চাল, শিম, হিমায়িত শাকসবজি, মুরগির মাংস ও পোলট্রিজাত দ্রব্য, মাংস, ডিম, টমেটো পেস্ট, চা, ঘি, ইস্ট, লবণ, ভোজ্যতেল, ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী। নির্দেশ না মানলে দুই মন্ত্রণালয়ের টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া স্পেশাল কোড নম্বর ১৬০০১ নম্বরে কল করেও অভিযোগ করা যাবে।

রমজানে সৌদি আরবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সুপার মার্কেটে চলছে বিশেষ মূল্যছাড়। সৌদির চেইন শপ লুলু হাইপার মার্কেট, পান্ডা, ওথাইম, নেস্টু, আল মদিনা, সেন্টার পয়েন্ট, তামিমি, ক্যারিফোর শপিংমলগুলো বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে।
এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠান। সুপারশপে বিশেষ ছাড় দিয়ে প্যাকেজভিত্তিক আলাদা আলাদা কার্ড বাজারে ছেড়েছে। এর মাধ্যমে ক্রেতারা কেনাকাটায় নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে।
এসব প্যাকেজে মাংস, মাছ, খেজুর, বাদাম, মিষ্টিসহ ইফতার এবং সেহরির জন্য আলাদা আলাদা খাবার থাকে। রমজান বক্স, ইফতারসামগ্রী, সেহরির খাবার নামে এসব কার্ড কিনে একজন অন্যজনকে উপহারও দিচ্ছে।
অনেকে আবার দরিদ্রদের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণ করেন। শুধু পণ্য নয়, সৌদি সরকার এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও সেবায়ও দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা। রাতে কাজ এবং অন্যান্য সময়ের তুলনায় কর্মঘণ্টা কমানো হয়।
তবে বেতন-বোনাস কমানো হয় না। করোনার পর এবার একটু বিশেষ ছাড়। রাস্তাঘাট আর শপিংমলগুলোয় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। মার্কেটগুলোয় ঝুলানো হয়েছে ‘রামাদান কারিম’ লেখাসংবলিত রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড।
রমজানকে কেন্দ্র করে আরব আমিরাতের সড়কগুলোর চেহারা পালটে গেছে। আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে দেশর প্রধান শহরগুলো। আরাবিয়ান বিজনেসের তথ্য অনুসারে ২৩ মার্চ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন কোম্পানি ৭০ ভাগ ছাড়ে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে এমন পণ্যের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ছাড় দিচ্ছে সেগুলো হলো ইউনিয়ন কোপ, শারজাহ কুপ, আল মায়া সুপার মার্কেট, আমাজন, নুন, দানিউব হোমস ও প্যান এমিরেটস।
৭০ শতাংশ কমে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মাংস, মুরগি, টিনজাত খাবার, ফল, সবজি, বিশেষ রমজানের পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য। দেশটিতে রোজা শুরুর ১০ দিন আগে থেকে এভাবে পণ্যের মূল্যছাড়ের রীতি চলে আসছে।
রমজান উপলক্ষ্যে মিসরের রাজধানী কায়রোতে সরকারের সহযোগিতায় ২৫ মার্চ খাদ্যমেলার আয়োজন করেছে দেশটির ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশন। সপ্তাহব্যাপী এই মেলা উদ্বোধন করেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েলকাম রমজান ফেয়ার’।
মেলায় কয়েকশ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল, চাল, পাস্তা, মাংস, মুরগির মাংস, শাকসবজি, ফল, বাদাম এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে গমের দাম বেড়েছে। তাই মানুষকে স্বস্তি দিতে এই আয়োজন।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক মুসলিম দেশ ওমানে রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অভিজাত শপিংমলগুলোয় এবার নিত্যপণ্যের মূল্য গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে ওমানে।

জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মাস্কাট সিটি করপোরেশন খাদ্যসামগ্রীর গুণমান এবং স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ও সার্বিক নজরদারি জোরদার করেছে। মালয়েশিয়ায় ছোট-বড় শপিংমলে মূল্যছাড়ের হিড়িক।
রমজান উপলক্ষ্যে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমানো হয়েছে। সুপারশপ লাজাডা, জায়ান্ট, লুলু, মাইডিন, এনএসকে, এয়ন বিগ-এর মতো চেইন শপগুলোয় নিয়মিত অনলাইন ও অফলাইনে চলছে ছাড়ের বিজ্ঞাপন।

চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের সব জিনিসের দাম কমেছে। পুরো মালয়েশিয়ায় পণ্যের মান ও দাম পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসন।
ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় ছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। রমজানের শুরুতে মুসলমানরা এ সুবিধা পান। বিশেষ করে জার্মানিতে মুসলিম ব্যবসায়ীরা অভাবনীয় মূল্যছাড় দিয়ে থাকেন।

ফ্রান্সের মুসলিম ব্যবসায়ীরাও কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করেন। থাইল্যান্ডেও রমজানে মুসলমানসহ সবার জন্য পণ্যে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো ধর্মীয় উৎসবের সময় পণ্যের দাম বাড়ে না।
কিন্তু রমজানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। বিশেষ করে রমজানকেন্দ্রিক পণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, মাংস, ডিম, মাছ, ছোলা, চাল ও আটার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক মাস আগে থেকে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। বেড়েছে নানা ধরনের সবজির দাম।
কোনো কোনো পণ্যের দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেনি।-যুগান্তর