Home জাতীয় আসমানী পরিবহনের ৬৫ বাস থেকে মাসে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা চাঁদা...

আসমানী পরিবহনের ৬৫ বাস থেকে মাসে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়

145

আসমানী পরিবহনের ব্যবস্থানা পরিচালকের কাছে জিম্মি চালক ও সাধারণ পরিবহন মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ডেমরা রুটে চলা আসমানী পরিবহনের ৬৫ বাস থেকে প্রতিমাসে ৫ টি পয়েন্টে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই পরিবহনের সকল চালক ও সাধারণ মালিকরা। আর এই অভিযোগ আসমানী পরিবহনের খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন ও তার ভাই মো.জলিল খাঁনের বিরুদ্ধে। তারা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে চালক ও পরিবহন মালিকদের জিম্মি দশায় রেখেছেন বলে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা। এতে বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে চালক ও সাধারণ মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদেরে। এদিকে আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সদস্যরা চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আজিজ খাঁন ও জলিল খাঁনের বিরুদ্ধে। আর প্রতিদিন মোটা অংকের এ চাঁদা তোলার কারণে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। তবে আজিজ খাঁন চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, রাজনৈতিক—প্রভাবশালী মহল,কতিপয় সাংবাদিক ম্যানেজ করা ও পয়েন্ট ভিত্তিক লোকজন নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে আসমানী পরিবহন সেক্টরকে নিরাপদে রাখতেই এ কাজ করতে হয়।
এই ঘটনায় সাধারণ পরিবহন মালিক ও আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্যন্য সদস্যরা জানান, ডেমরা রুটে চলা আসমানি পরিবহন মূলত ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা হয়ে আব্দুল্লাহপুর চলাচল করে। তবে এই পরিবহনের ৬৫ টি বাস প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন মদনপুর মাঠ থেকে ছেড়ে আসে। এদিকে মদনপুর মাঠে প্রতিদিন এক একটি আসমানী পরিবহন বাবদ ৮১০ টাকা চাঁদা আদায় করে আজিজ খাঁন তার ছোট ভাই জলিল খাঁনের মাধ্যমে। স্টাফ কোয়ার্টারে তারই নিয়ন্ত্রিত লোকের মাধ্যমে ১৪০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে, একইভাবে রামপুরা ৬০ টাকা, কুড়িল বিশ্বরোড ৪০ টাকা ও আব্দুল্লাহপুর মাঠে ১৭০ টাকা করে সর্বমোট ১২২০ টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন এভাবে প্রতিমাসে ২৩ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করে নিচ্ছেন আসমানী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন ও তার ভাই জলিল খাঁন।
এ বিষয়ে আসমানি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৫—৪৪৩৫) এক চালক মো. ওমর জানান, দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে তাদের পরিবহনের এমডি ও তার ভাই জলিল খান জোরপূর্বক ৫টি পয়েন্ট থেকে বাস প্রতি মাসে ৩৭ হাজার টাকা আদায় করে। আমরা অর্ধেক টাকা দিতে চাইলেও তারা মানছে না। আমাদের জিম্মি দশায় রেখে চাঁদা আদায় করছে তারা।
একই পরিবহনের আরেক চালক (ঢাকা মেট্রো ব ১৫—২২৬০) মো. সিরাজ জানান, বর্তমানে বাসের জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সহ মেইন্টেনেন্স ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য সব খরচ বেড়েছে। এমতবস্থায় আমরা এমডি আজিজ খাঁনের কাছে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও তিনি চাঁদার টাকা কমাচ্ছেন না। বর্তমানে আমাদের রোজের টাকা উঠানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে, এরই মধ্যে অনেক চালক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন সংসার চালাতে গিয়ে। দ্রুত এর একটা সুষ্ঠু সমাধান না হলে আমরা আর চলতে পারব না।
এ বিষয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসমানী পরিবহনের একাধিক মালিক জানান, প্রতিদিন এই গাড়ি প্রতি ১২২০ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে চালক ও মালিকদের সাথে সমন্বয় নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে ভালো চালকরা অন্য পরিবহনে চলে যাচ্ছেন। সামনে আসমানী পরিবহনের ভালো সার্ভিস দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসমানী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন মোবাইল ফোনে বলেন, আসমানী পরিবহন থেকে মাসে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা আদায়ের বিষয়টি অভিযোগকারীরা না জেনে শুনে বলেছেন। মদনপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে আসমানী পরিবহন চলার জন্য ৫ টি পয়েন্টে টাকা আদায় করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে টাকা পরিচালনায় খরচ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পরিবহন সেক্টরটি একটি সেবার সেক্টর হলেও এখানে ফ্রিতে কেউ কাজ করে না। অনেক কিছু প্রকাশ করা সম্ভব হয় না আমাদের। একটি রুট চালাতে গেলে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় যার টাকার বিনিময়ে সমাধান করা হয় প্রতিদিন। শুধু একটি ডিপার্টমেন্টের বেলায় মাসে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হয় আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের দাবি অনুযায়ী চলতে হয়। আরও আনুষাঙ্গিক বিষয় রয়েছে যা প্রকাশ করলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।
এ বিষয়ে ডেমরা ট্রাফিক জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন,মূলত বাস থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি দেখবেন বাস মালিক সমিতির লোকিজন। তবে আমাদের কাছে যদি চালকরা কোন অভযোগ করে তাহলে অবশ্যই বিষিয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর সড়কে ট্রাফিক আইন ও শুশৃঙ্খলতা বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু ট্রাফিকের।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মীর আব্দুস সেলিম মোবাইল ফোনে বলেন, আসমানী পরিবহন আমাদের অন্তর্ভুক্ত রুটেই চলাফেরা করছে। তবে আজিজ খাঁনের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ভুক্তভোগীরা ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।