Home জাতীয় রোগী বহনে ভরসা যেখানে টুকরি বা খাটিয়া

রোগী বহনে ভরসা যেখানে টুকরি বা খাটিয়া

32

ডেস্ক রিপোর্ট: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের চার কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঐ ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের। এ সড়কে এখন তিন চাকার গাড়িও চলে না। পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় ভোগান্তির পথ। ঐ এলাকার লোকজনের যাতায়াতসহ নানা বয়সের রোগী ও গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ঐ এলাকার চার গ্রামের মানুষের জন্য রাস্তাটি বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারের রোগী বহনের ভরসা হয়ে দেখা দিয়েছে টুকরি (গ্রামীণ ভাষায় খাড়ি বা ওড়া) কিংবা মসজিদের খাটিয়া। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার। ঐ ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের অসুস্থ এক বৃদ্ধকে তার ভাতিজা টুকরিতে তুলে মাথায় নিয়ে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ঐ রাস্তার বেহাল দশার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার ভুক্তভোগী নানা পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ দুর্ভোগের তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা পশ্চিমপাড়া হাজীবাড়ি থেকে লক্ষ্মীপুর চরখখোলা হয়ে দারোরা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তাটি দিয়ে ঐ ইউনিয়নের পরমতলা, লক্ষ্মীপুর, মুগসাইর, দারোরাসহ চারটি গ্রামের ৯ সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এলজিইডির অধীন এ রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের ময়লা ও কাদামাটি মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। পরমতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৪৫) জানান, গত বুধবার তার চাচা অসুস্থ আব্দুল জলিলের (৭৫) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এতে তিনি নিরুপায় হয়ে চাচাকে একটি টুকরির মধ্যে রেখে মাথায় করে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তী বাজারের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যান। সেখানে নেবুলাইজার দিয়ে চাচাকে কিছুটা সুস্থ করে ফের মাথায় করে বাড়ি আনেন।

তিনি বলেন, এ সময় এলাকার এক ব্যক্তি ছবি তোলে ও ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। এ বিষয়টি পড়ে জানতে পেরেছি। মুগসাইর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মাস্টার, নূরে আলম সিদ্দিকসহ অন্তত ছয় জন বলেন, আগে এ রাস্তাটি দিয়ে তিন চাকার গাড়ি চলত, এখন সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ। গত বছরের ১৯ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। পরমতলা গ্রামের কলেজশিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, চার কিলোমিটার এই রাস্তাটি দিয়ে চার গ্রামের কয়েক শ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৯ হাজার মানুষকে ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তাটি পাকা করা হলে শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণের বহুদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে। লক্ষ্মীপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ, পরমতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ও খোরশেদ আলম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, মানুষ হেঁটে যেতেও সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

ধামঘর ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, স্বর্ণকার বাজার থেকে দারোরা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে এ রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী রাস্তাটি পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি আরও বলেন, এ রাস্তাটি প্রশস্ত করতে বড় সমস্যা জমি। কেউ জমি দিতে চায় না। রাস্তার পাশে কয়েকটি পুকুর আছে, সম্প্রতি বৃষ্টিতে রাস্তা ভেঙে পড়েছে, তাই যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

বৃহস্পতিবার বিকালে মুরাদনগর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থার খবর জেনে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। রাস্তাটির কারণে স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এটা সত্য। তাই এ রাস্তাটি উন্নয়ন প্রকল্পের (আইডি নম্বর-৪১৯৮১৫০৭৯) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা, তাই পুরোটাই পাকা করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ডিও লেটার দিয়েছেন। শিগিগর রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করি।’-ইত্তেফাক