Home রাজনীতি রোকেয়া দিবস স্মরণে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

রোকেয়া দিবস স্মরণে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

48

স্টাফ রিপোটার: ৯ ডিসেম্বর নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার ১৪২তম জন্ম ও ৯০তম মৃত্যুবার্ষিকী। সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলা, নারীর সামনে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার সাহস, যুক্তি ও আপন প্রত্যয় নির্মাণের লক্ষ্যে আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। তিনি শুধু নারীদের নয় সমগ্র সমাজের অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন। এই মহিয়সী নারীর জন্ম ও মৃত্যু দিবস স্মরণে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর উদ্যোগে আজ ৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩.৩০ টায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকাল ৯.৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে রোকেয়া ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
নারী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু। সমাবেশে আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল – বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা রওশন আর রুশো, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: মনীষা চক্রবর্ত্তী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রুখশানা আফরোজ আশা।
সমাবেশে কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বেগম রোকেয়া যে সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সময় সমাজ ব্যবস্থা অশিক্ষার অভিশাপ ও পুরুষতন্ত্রের অবরোধ প্রথার মধ্যে ডুবে ছিল। সে সময় মেয়েদের লেখাপড়া ছিল সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ও পাপতুল্য। ভাই ও বোনের কাছে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে বাংলা ইংরেজি পড়তে শিখেছিলেন তিনি। অবরোধ প্রথার যন্ত্রণা ও গ্লানি অনুভব করেছিলেন নিজের জীবনে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে ও ২৯ বছর বয়সে বিধবা হয়ে তিনি বুঝেছিলেন সমাজে নারীর অবস্থা কতটা নিগৃহীত। এ অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে নারী শিক্ষার জন্য লড়াই শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল সার্বিকভাবে সমাজের অগ্রগতি। কারণ তিনি বুঝেছিলেন অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে পেছনে ফেলে রেখে সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। তার সেই লড়াই আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়। বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর ৯০ বছর পর এবং স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও বাংলাদেশের আইনেই নারীর প্রতি বৈষম্য রাখা হয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিনিয়ত সেই বৈষম্যমূলক আচরণ নারীদের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করছে।’
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বাহ্যিকভাবে দেখলে দেখা যাবে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সমাজ মননে আরও বেশি অবক্ষয় ঘটে যাচ্ছে। সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যেকোন স্থানে, দিনে রাতে যেকোন সময়ে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য বিচারের নজির দেখা যায় না। আবার পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ-বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজমান। নারীর গৃহস্থালি কাজ ছাড়া পরিবার চলে না কিন্তু গৃহস্থালি কাজের কোন স্বীকৃতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নাই। সমকাজে সমমজুরী আইনে থাকলেও বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের তুলনায় কম মজুরী পেয়ে থাকেন। শ্রমজীবি নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পর্যাপ্ত মজুরী, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, ডে কেয়ার সেন্টারসহ প্রয়োজনীয় ন্যুনতম আয়োজন নেই। নারীর সস্তা শ্রমকে ব্যবহার করে মুনাফা করতে মালিক শ্রেণি যত আগ্রহী, তাদের কাছে ততটাই উপেক্ষিত নারীর অধিকার।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের উদ্যোগ খুবই অপ্রতুল। বিজ্ঞাপন, সিনেমায় নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ওয়াজ মাহফিলে নারীকে নিয়ে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়। নারীর এসকল সংকটের মূলে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিকতা ও পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা।
সমাজের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, শোষণমূলক সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তনে বেগম রোকেয়া আজও প্রেরণার উৎস। নারী পুরুষের মিলিত সংগ্রামে সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বেগম রোকেয়ার জীবন সংগ্রাম আজও পাথেয়।’