Home রাজনীতি রাস্তায় নামলে পরিবর্তন আসতে বাধ্য: ডাঃ জাফরুল্লাহ

রাস্তায় নামলে পরিবর্তন আসতে বাধ্য: ডাঃ জাফরুল্লাহ

55

স্টাফ রিপোটার: নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তার কঠোর সমালোচনা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আজকে যা হচ্ছে তা বাংলাদেশের ছবি নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করা খোদায়ী বিধান। বেরিয়ে দেখুন আপনাদের জয় সুনিশ্চিত।

তিনি বলেন, আজকে পুলিশ অকারণে পেটাচ্ছে। তাদেরকে গুলি করার অধিকার কে দিয়েছে? মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে, রংপুরে যা হচ্ছে এটা কি বাংলাদেশের ছবি? আর বেশিদিন সময় নেই। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মাঠে নামুন। সরকার পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে আছে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মরহুম কাজী জাফর আহমদের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।

সংগঠনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও হাবিবুর রহমান রিজুর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তৃতা দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আব্দুর রব, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, গণ অধিকার পরিষদের ভিপি নুরুল হক নূর, জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কাজী নজরুল ইসলাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আক্তার হোসেন, ডাঃ সেলিম, বাবুল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

জাফরুল্লাহ সরকার প্রধানের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে। আজকে দেশ এভাবে চলতে পারেনা। আপনি ভুলে যাবেননা ভুল পদক্ষেপ অহমিকা ছেড়ে জনগণের সাথে কথা বলেন। আপনি তো আলোচনাকে ভয় পান। মুখে বলেন একটা করেন আরেকটা। দেশে পরিবর্তন দরকার। কিন্তু বিদ্রোহ দরকার নেই।

তিনি বলেন, আজকে কাজী জাফর নেই কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আমরা রাস্তায় নামলে ১৫ মাসের মধ্যে দেশের পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আমরা লড়াইয়ে আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ্।

জেএসডির আ স ম রব বলেন, নারয়ণগঞ্জে যুবদলের নেতা শাওনের লাশ প্রশাসন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যা আইয়ুব খানের শাসনামলকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, কাজী জাফর আহমদ আরেকটা আসবেনা। তাকে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমি প্রথম বলেছিলাম- ৭২ সালের সংবিধান তো বুড়িগঙা নয় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া দরকার। সমাজ পরিবর্তনের পূর্ব শর্ত হলো গণতন্ত্র। মানুষ কোনো মতাদর্শ বুঝেনা। তারা চায় তাদের অধিকার। আজকে নারায়ণগঞ্জ সহ সারা দেশে যা হচ্ছে তাতে সরকার দেশকে রক্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
রব বলেন, আজকে জনতার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করা হচ্ছে। কতো রক্ত চান? রক্ত নিলে কিন্তু চলে যেতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট এর অনুমতি নিয়ে গুলি করার নিয়ম। কিন্তু গুলির পরিস্থিতি কী তৈরি হয়েছিলো?

তিনি আরো বলেন, বিদেশের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করা অনেক ভালো। সেটাই সম্মানজনক। বিদেশে যাচ্ছেন তিস্তা চুক্তি করবেন। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের কথা বলবেন। না পারলে দেশে আসবেন না। আমরা মরতে হলে মরবো দাবি আদায় করে ছাড়বো। আপনাদের থাকতে দিবোনা। দেশও ছাড়তে দিবোনা।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মরহুম কাজী জাফর আহমদ ছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনন্য। তিনি দেশের সোনালী ইতিহাসের সাক্ষী। তার মতো মেধাবী রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কাজী জাফর আহমদ ছিলেন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। আজকে যেভাবে দেশ চলছে তা চলতে পারেনা। ওরা তস্কর, ভোট চোর, লুটেরা। আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারবো।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কাজী জাফর আহমদ সর্বপ্রথম স্বাধীন পূর্ব বাংলার ডাক দিয়েছিলেন। এই সাহস আর কেউ করেননি। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করেছিলেন। আজকে তার মতো বলিষ্ঠ নেতা আমাদের অভাব। তার রাজনৈতিক দর্শন ও প্রজ্ঞা ছিলো অতুলনীয়।

তিনি বলেন, আজকে দেশের অচলাবস্থা নিরসনে ও ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ আন্দোলন করে যাচ্ছে। এবার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে ভোটাধিকার আদায করা যাবেনা। আজকে সরকার বেপরোয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা সারাদিন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছে তা কোনো বক্তব্য হতে পারেনা। এবারের লড়াই ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এভাবে দেশ চলতে থাকলে আমরা নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবোনা। আজকে বাবার অপরাধে ছেলে বা সন্তানকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে?

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, দেশে চলচে দৈত্যাকার শাসনব্যবস্থা। আওয়ামী লীগের প্রণীথ ৭২ এর সংবিধান আমাদেরকে আজকে এই দূরাবস্থার মধ্যে উপনীত করেছে। আজকে আমাদেরকে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে। আমরা এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আওয়ামী লীগ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। তারা মনে করেছে গদি ছাড়তে হবে না। তারা দেশকে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তারা আবারো যেনতেন নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এবার তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, যারা সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের কথা বলেছেন, একটি পরিবারের পক্ষে দাড়িয়েছেন তাদেরকে মানুষ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে ভয়ে কম্পমান। তারা দেশের ভবিষ্যতকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। শেখ হাসিনা আমাদের এক দফার সামনে পরাজিত হবেই হবে।

ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সরকার কতোটা নিকৃষ্ট যে তারা বিরোধী দলের মিছিলে গুলি করে মানুষ মারছে। আজকে আমরা দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আছি। আমরা মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই আশংকা আজকে সবার মাঝে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশকে ছিনতাই হতে দেয়া যাবেনা। একটা থানায় কয়টা পুলিশ? যদি অন্যায়ভাবে কেউ আক্রমণ করে তাহলে মা বোনদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। যার যা আছে তাই নিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আওয়ামী লীগ আজকে দেশে তান্ডব চালাচ্ছে। আমরা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবোনা। কারণ অতীতে তিনি প্রতারণা করেছেন।