ডেস্ক রিপোর্ট: ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার তেল ডিপোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রুশ সচিবালয় ক্রেমলিন অভিযোগ করেছে, ইউক্রেন এই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে কিয়েভের কাছে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেন সেনাদের তীব্র লড়াই চলছে। রাশিয়া জানিয়েছে, এই হামলার ঘটনা দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন রুবলে মূল্য পরিশোধ না করলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিলেও গ্যাস সরবরাহ চালু রয়েছে।

রুশ তেল ডিপোতে বিস্ফারণ

শান্তি আলোচনার মাঝেই রাশিয়ার জ্বালানি ডিপোতে গতকাল শুক্রবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এমনটাই দাবি করেছে রুশ সচিবালয় ক্রেমলিন। এই হামলা শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে। রাশিয়ার এই দাবি স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেনি ইউক্রেন। একটি তেল-ডিপো দাউদাউ করে জ্বলতে থাকার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গতকাল। মস্কোর দাবি, অল্প উচ্চতা থেকে রাশিয়ার বেলগরদের ওই ডিপোতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। যদি ক্রেমলিনের এই দাবি সত্যি হয়, তাহলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া সেনা অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পালটা হামলার অভিযোগ উঠল।

বেলগরদের ওই তেল ডিপোতে দু’টি ইউক্রেনীয় বিমানের হামলার কথা টেলিগ্রাম মাধ্যমে জানিয়েছেন ওই এলাকার স্থানীয় গভর্নর ভ্যাচেসল্যাভ গ্যাডকভ। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ওই এলাকা। গ্ল্যাডকভের আরো দাবি, ইউক্রেনের হামলায় তেল-ডিপোতে কর্মরত দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। ওই এলাকায় বসবাসকারীদেরও সরানো হয়েছে নিরাপদ জায়গায়। অন্যদিকে, তেল ডিপোর মালিক সংস্থা রজনেফ্ট এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কেউই আহত হননি। তবে আগুন কীভাবে লেগেছে, তা জানায়নি রজনেফ্ট।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ইউক্রেনের পালটা হামলার কথা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জানানো হয়েছে। এই ঘটনা শান্তি আলোচনাকে আরো দীর্ঘায়িত করে পারে বলেও জানান পেসকভ। রাশিয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা জানান, সামরিক তথ্য তার কাছে না থাকায় রাশিয়ায় হামলার ব্যাপারের তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছেন। এদিকে ইউক্রেন সরকার দাবি করেছে, রাশিয়ার হুমকি সত্ত্বেও অনলাইনে আলোচনা আবার শুরু হয়েছে।

কিয়েভের কাছে লড়াই

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, রাজধানী কিয়েভের উত্তর এবং পূর্বে রুশ সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। ভয়ে বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। কিয়েভের আঞ্চলিক গভর্নর জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় রুশ সেনারা পিছু হটলেও অন্য এলাকায় অবস্থান জোরদার করছে। এর আগে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, ইউক্রেন সেনাদের পালটা অভিযানে রুশ সেনারা উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর পূর্বে পিছু হটছে। এদিকে চেরনোবিলের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয়তা স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে বলে আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্হা আইএইএ জানিয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মারিউপোলে উদ্ধার অভিযান নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

পুতিনের হুমকি সত্ত্বেও গ্যাস সরবরাহ চলছে

গত ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট পুতিন এমন একটি ডিক্রিতে সই করেছিলেন যাতে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার গ্যাসের ক্রেতাদেরকে রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে নতুবা তাদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফ্রান্স ও জার্মানি অবশ্য রাশিয়ার এই দাবিকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ বলে অভিযোগ করেছিল। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো অবশ্য এই ডিক্রিকে বিদ্যমান চুক্তির খেলাফ বলে অভিহিত করেছিল কারণ, এসব চুক্তিতে ইউরো বা ডলারে মূল্য পরিশোধের সুযোগ ছিল। গতকাল দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া এখনই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

পুতিন নিজের খাঁচায়ই বন্দি: যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের তৈরি খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়েছেন। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে রাশিয়া এখন ‘দুর্বল দেশ’ হয়ে গেছে বলেও দাবি করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব দাবি করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্য ও তাদের মিত্ররা ইউক্রেনকে আরো অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানান বেন ওয়ালেস। বেন ওয়ালেস বলেন, রাশিয়া তার কারণেই মহান দেশ হওয়ার বদলে দুর্বল দেশ হয়ে পড়েছে আর ইচ্ছাকৃতভাবে আগ্রাসন চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘তার সেনাবাহিনী বিপর্যস্ত, তিনি মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রাশিয়ার মহান সেনাবাহিনীর সুনাম ধূলায় মিশেছে।’

দিল্লিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দিল্লি সফর করছেন। গতকাল শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আমেরিকার উপ নিরাপত্তা উপদেষ্টা দলিপ সিং ভারত সফর করেন। এছাড়া ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসও ভারত সফর করেছেন। এসব সফরে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের সস্তায় তেল কেনার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।-ইত্তেফাক