Home জাতীয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মরা দেখিয়ে তাজা গাছ বিক্রি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মরা দেখিয়ে তাজা গাছ বিক্রি

45

রাজশাহী অফিস : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় আকারের একটি তাজা মেহগনিগাছ বিক্রি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ছুটির মধ্যে এই গাছসহ তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। এই গাছ তিনটিকে মরা দেখিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এই তিন গাছের মধ্যে দুটি মেহগনিগাছ ও একটি আমগাছ ছিল। মেহগনির মধ্যে একটি মরা ছিল। আমগাছটি কেটে নেওয়ায় তা মরা না তাজা ছিল, জানা যায়নি। তবে ক্রেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করছে, দুটি গাছ মরা ছিল। তাজা গাছটি বিক্রি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল’ বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের পশ্চিম পাশে মেহগনির বাগান থেকে দুটি মেহগনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের পাশ থেকে একটি আমগাছ কাটা হয়। গাছ তিনটি কিনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাজলা এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গাছ তিনটি তিনি তিন মাস আগে দরপত্রের মাধ্যমে কিনেছেন। তিনি গাছগুলো মরা হিসেবে কিনেছেন। তখন দুটি মেহগনিগাছে পাতা ছিল না। পরে দেখা গেছে একটি গাছ তাজা। এটা তো তাঁর দেখার বিষয় না।
গত রোববার থেকে পবিত্র শবে কদর, মে দিবস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষার ছুটি চলছে। বুধবার বিকেল থেকে বন্ধ হচ্ছে আবাসিক হলগুলো। হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী বর্তমানে হলগুলোতে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিবারই ক্যাম্পাসের বন্ধ সময়ে গাছ কাটা হয়। এবারও তাই হলো।
শাহ মখদুম হলের মিঠুন আলী নামের এক শিক্ষার্থী তাজা মেহগনিগাছের ছবি তুলেছিলেন গত সোমবার। তিনি বলেন, তাজা একটি বড় মেহগনিগাছের গায়ে হঠাৎ ক্রস চিহ্ন দেখেন। পরে তিনি গাছটির ছবি তুলে রাখেন। তাঁর ধারণা ছিল, গাছটি কাটা পড়বে। আজই গাছটি কাটা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মরুভূমি হতে চলেছে। এখানে একটা গাছও কাটা যাবে না। বরং আরও গাছ লাগাতে হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের পশ্চিম পাশে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্টোরের উত্তর পাশে একটি মেহগনিগাছের বাগান রয়েছে। এই বাগান থেকে দুটি মেহগনিগাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গাছ তাজা। সকাল থেকে গাছগুলো কাটা শুরু হয়। বিকেলের দিকে গাছগুলো করাত চালিয়ে শ্রমিকেরা খণ্ড করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানো, পরিচর্যা, গাছ বিক্রির অনুমতিসহ যাবতীয় কাজ করে কৃষি প্রকল্প। প্রকল্পের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তাঁরা দরপত্রের মাধ্যমে গাছ তিনটি মরা মনে করেই বিক্রি করেছিলেন। এর মধ্যে গত শীতের আগেই একটি মেহগনিগাছের পাতা ঝরে যায়।
অন্যান্য গাছে পাতা গজালেও ওই গাছের পাতা পরেও গজায়নি। তাঁরা এটাকেও মৃত ধরে তিনটি গাছ বিক্রি করেন। কিন্তু পরে দেখেন যে ওই মেহগনিগাছের পাতা গজিয়েছে। কিন্তু পরে আর তাঁরা দরপত্র বাতিল করতে পারেননি।
মো. সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, এটা তাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ভুল। একটি গাছ এ রকম করে পরে তাজা হবে, এটা তিনি তাঁর ২৪ বছরের চাকরি জীবনে দেখেননি।
গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ, ভবন নির্মাণ করতে হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে সব আইনকানুন মেনে গাছ কাটা হয়। কিন্তু যে জায়গায় তাজা মেহগনিগাছটি ছিল, ওখানে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গাছটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলেই কাটা হয়েছে।