Home জাতীয় রাজধানীতে সক্রিয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারীরা

রাজধানীতে সক্রিয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারীরা

30

ডেস্ক রিপোর্ট: বিদেশে পলাতক আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান জানান দিতে, আধিপত্য বিস্তারে ফের খুনোখুনি শুরু করেছেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এমন তৎপরতা নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে সর্তক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তারা যাতে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকায় যেসব খুনের ঘটনা ঘটছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। খুন করে পার পাওয়ার দিন চলে গেছে। আর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ধারণা এখন অতীত। যে কেউ চাইলেই সেই পুরোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

তথ্যে জানা যায়, ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকায় খুনের সংখ্যা আর ৩০০ পার হয়নি। ২০১৬ সালে খুনের সংখ্যা দুইশর নিচে নেমে এসেছিল। এর মধ্যে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ছিল। তবে মোট হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই হয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে। কিন্তু ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় সড়কে প্রকাশ্য গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রগুলো বলছে, মূলত এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মতিঝিল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পাশাপাশি একটা ‘ম্যাসেজ’ দিতে চেয়েছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নামে চাঁদাবাজিসহ ঢাকায় যেসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে সেগুলোর গতি ত্বরান্বিত করাও ছিল এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আন্ডারওয়ার্ল্ড ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মতিঝিলের ঘটনার পর অন্যান্য এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিয়েও এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকাগুলো নতুন ভয়ের জায়গা তৈরি করেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যাংককে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবী। এই এলাকার বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদা যায় তার কাছে।

ধানমন্ডি এলাকায় এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। কারাগারে বসেই তিনি এই এলাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছেন। একাধিক আলোচিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার হাত থাকার তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে।

তবে রামপুরা, গুলশান, বাড্ডাসহ রাজধানীর একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রক জিসান। দুবাইয়ে পলাতক এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর কিলার বাহিনীর সদস্যরা এখনো পুরোমাত্রায় সক্রিয়। তার সঙ্গে সমঝোতা করেই ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ও মোল্লা মাসুদ সম্প্রতি গণপূর্ত, ক্রীড়া পরিষদ, রাজউক ও রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এর জের ধরেই সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর অপরাধ জগত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ঢাকায় খুন হন ৩২৪ জন, ২০০৯ সালে ৩২১, ২০১০ সালে ২৪৫, ২০১১ সালে ২৫৯, ২০১২ সালে ২৬৪, ২০১৩ সালে ২৭০, ২০১৪ সালে ২৬২, ২০১৫ সালে ২৩৯, ২০১৬ সালে ১৬৫, ২০১৭ তে ২১৮, ২০১৮ সালে ২১৬, ২০১৯ সালে ২০৭, ২০২০ সালে ২১৯ এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ১৬৬ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং তদারকির ফলেই খুন কমছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, খুনে জড়ালে ‘পার পাওয়া যাবে না’ এমন একটি ‘ম্যাসেজ’ মানুষের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেজন্যই খুনের ঘটনা কমে আসছিল। সম্প্রতি মতিঝিলের খুনের ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় এ বিষয়ে তারা আরও তৎপর হয়েছে।
আমাদের সময়.কম