Home সারাদেশ যৌন হয়রানি, টাকা আত্নসাত পদত্যাগে বাধ্য হলেন স্কুল কমিটির সভাপতি রিয়াজ

যৌন হয়রানি, টাকা আত্নসাত পদত্যাগে বাধ্য হলেন স্কুল কমিটির সভাপতি রিয়াজ

29

স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষা মন্দির বর্তমানে পরিচিত শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নামে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকা এর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় এর স্কুল কমিটির (গভর্নিং বডির) বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন পদত্যাগ করায় অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নয় বরং তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হেনস্তার অভিযোগসহ স্মারক লিপি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর। পরে খোজ খবর নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রিয়াজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের দেওয়া স্মারকলিপিতে উঠে এসেছে গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির চিত্র। রিয়াজ সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় ম্যানেজ করে অডিট আটকে রেখে শূণ্যের কোটায় এনেছেন প্রায় ১৩ কোটি টাকার ফান্ড। বিপুল এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন রিয়াজ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির দোহাই দিয়ে নিয়মিত তার অনৈতিক আচরণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন এবং নারী শিক্ষকদের তিনি তার পার্সোনাল সাক্ষাৎ বা লংড্রাইভে যেতে প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে সাড়া না পেলে তার রোষানলে পড়তে হয় তাদের। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয় দিয়ে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের জন্য সিটিং রুম সংকট থাকলেও রিয়াজ নিজের ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক একটি সভাপতির কক্ষ তৈরী করেছেন। যেখানে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন। আর এখানে বসেই নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করতে বলেন এমন অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজউদ্দিন রিয়াজের ঢাকা শহরে জীবন শুরু গুলিস্তানে ঝুঁড়িতে করে জুতা বিক্রি করার মধ্য দিয়ে। এর পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে। মূলত হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে স্বঘোষিত জিএস পরিচয় দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় রিয়াজ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন বদলে যাওয়ার চিত্র। তিনি সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন। ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর নেতা ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সদস্য ডা. যুবরাজের স্ত্রী ডা. তাহমিনার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীতে এটি জানাজানি হলে ডা. যুবরাজ গুপ্ত হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় ডা. রিয়াজের সম্পৃক্ততা নিয়ে চাঞ্চল্যা সৃষ্টি হয়।
স্মরক লিপিতে শিক্ষিক বৃন্দ আরো উল্লেখ করেন রিয়াজ প্রায়ই বলেন, তার সাথে মন্ত্রীর দীপুমনির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। রিয়াজ মন্ত্রী দীপুমনিকে নিয়ে কি রিক্সায় ঘুরে বেড়ান। যেটা রিয়াজ তার ফেসবুক প্রোফাইলে লাইভ প্রকাশ করেছে।
রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে সেন্ট্রাল উয়মেন্স কলেজ, যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল কলেজের গভার্নিং বডির সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি তার জন্য বড় আশীর্বাদ। শিক্ষামন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে তার রাজনৈতিক মহলে প্রচারণা আজ তাকে নিয়ে এসেছে এ পর্যায়ে। রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট বিষয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতাকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট। এসকল সুযোগ নিয়ে তিনি বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েন। এছাড়া তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে অসদাচরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দলের সুনাম নষ্ট করতে তৎপর রয়েছেন বলে এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এরআগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজের এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে রিয়াজকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। ওই সময় রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজের গর্বনিংবডির সভাপতি ছিলেন। ওই সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এমপি মাইকে বলেছেন, এই স্কুলের যিনি সভাপতি হয়েছেন তাকে আমি চিনি না। শুনেছি তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নেতা এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছের লোক। এই রিয়াজ এখানে সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষিকাদের অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে চাকুরী খাওয়ার ভয় দেখান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের খাবাপ লোক থাকতে পারে না। আমি আশা করবো শিক্ষামন্ত্রী এই চরিত্রহীন-লম্পটকে এখান থেকে সরিয়ে নিবেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয় ঢাকা মহানগর দক্ষিনর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, আমি এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।