Home জাতীয় ঘূর্ণিঝড় মোখা, কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত

ঘূর্ণিঝড় মোখা, কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত

29

স্টাফ রিপোটার: কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান।

আজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত রাত থেকেই কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় বিপদাপন্ন জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত মানুষের নিরাপত্তায় গতকালই সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত আনুমানিক ৮৫০০ মানুষকে সর্বোচ্চ জলোচ্ছ্বাস মাত্রার উপরে সুপার সাইক্লোন মোকাবিলায় সক্ষম ৩৭ টি অবকাঠামোয় নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আগেভাগেই সেখানকার সকল মজবুত-নিরাপদ অবকাঠামোর হোটেল-রিসোর্ট, সকল সরকারি-বেসরকারি উপযুক্ত অবকাঠামো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। এরপরও প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে সেখানকার মানুষকে উদ্ধার করে টেকনাফে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে ।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল ১২ মে সকালে মোখা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এখনো উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, আশঙ্কা করছি, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানবে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা ও বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দুই থেকে তিন মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা ও ভোলার জন্য দুই মিটারের কম উচ্চতার জন্য জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তিন মিটারের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের জন্য একটি আশঙ্কা থেকে যায়।

ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত যে দূরত্ব আছে, আগামীকাল সকাল থেকেই উপকূল স্পর্শ করতে থাকবে।

এনামুর রহমান বলেন, এটির অবস্থান, গতিপথ ও গতি বিবেচনা করে আমরা স্থির করেছি, কক্সবাজার বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেয়ার জন্য। আর চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে আট নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি রাখা হবে। মোংলায় চার নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকবে।

১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত কখন থেকে কার্যকর হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শনিবার (১৩ মে) দুপুর আড়াইটা থেকে এটি কার্যকর হবে। এখন সেন্টমার্টিনের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হলেও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের শতভাগ আনার কাজ চলমান রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এতে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড কাজ করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন বাতাসের যে গতিবেগ ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার, এটা বেড়ে হয়তো ১৮০ কিলোমিটার হতে পারে। এর বেশি হওয়ার শঙ্কা নেই। যে কারণে মোখাকে সুপার সাইক্লোন বা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা যাবে না।

উপস্থিত একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (RRRC)-এর নেতৃত্বে সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। সেখানে যেহেতু পাহাড়ের ওপর জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধস হতে পারে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, যেহেতু রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখ, সেহেতু তাদের সরিয়ে নিয়ে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন ।