Home জাতীয় নগরীর কলেজপাড়ায় সম্পত্তি বিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত

নগরীর কলেজপাড়ায় সম্পত্তি বিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত

68

বরিশাল অফিস : বরিশাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ১০০ নম্বর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ বছর আগে ব্যবহারের জন্য দ্বিতল একটি ভবন পাশের কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ছেড়ে দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই ভবনই নিলামে দিয়ে সেখানে বহুতল ভবন করতে চায় মাধ্যমিকের কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কৌশলে সিটি মেয়রকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করিয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান গত ২৬ অক্টোবর এক পত্রে ভবনটির মালিক কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, এমনই প্রতিবেদন দিয়েছেন। বরিশালে এভাবে সম্পত্তি নিয়ে স্কুলে স্কুলে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের স্থানীয় রাজনীতির প্যাঁচে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুমি আক্তার বলেন, ২০০৫ সালে ভবনটি ফেরত দেওয়ার শর্তে তারা কলেজিয়েট স্কুলকে হস্তান্তর করেন। ২০১৭ সালে ভবনটি ফেরত চান। কিন্তু কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে গোপনে ভবনটি নিলামে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে তারা নতুন ভবন করবে। এ জন্য সিটি মেয়রকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তরও করায়। যদিও সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভবনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তিনি বলেন, ভবন না ছাড়ায় তাদের শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে সার্ভেয়ারের পরিমাপ শেষে গত ২৬ অক্টোবর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বর্তমানে কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবহার করছে। ভবনের প্রকৃত মালিক ১০০ নম্বর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহসান উল্লাহ বাবু বলেন, ‘ভবনটি ফেরত দেওয়ার শর্তে কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষ নেয়। করোনার পর বিদ্যালয়ের ৫১৯ শিক্ষার্থীর পাঠদানে শ্রেণির সংকট দেখা দিয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবন থাকলেও তাদের ভবন নিলামে দিয়ে সেখানে ভবন করার পাঁয়তারা করছে।’
কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ভবনে আগের প্রধান শিক্ষক বসেছেন, এখন আমি বসি। সেখানে নতুন ভবন করার জন্য মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। দুটি স্কুলই সরকারের। এর ভেতরে রাজনীতিও আছে।’
কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কাগজে কলমে ভবনটি কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি। সেখানে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন করতে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর সিটি মেয়র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবনটি মেয়র সাদিকের দাদির নাম অনুসারে ‘আমেনা ভবন’ রাখা হয়েছে।’
নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘ভবনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। মাধ্যমিকের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কামাল রাজনীতির প্যাঁচে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডই মুছে ফেলেন। কৌশলে মেয়রকে দিয়ে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করিয়ে প্রাথমিকের সম্পত্তি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দখল করেছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কলেজিয়েট স্কুলের কমিটি নিয়েও রাজনীতি চলে।’
জানা গেছে, নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুৎপুর-হরিপাশা এস্কেন্দার আলী শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন দীর্ঘদিনেও অপসারণ হয়নি। পাশের চহুৎপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্চয় কুমার খান বলেন, এ জন্য দুই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠও সংকুচিত হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কাজী শরিফা তাজ বলেন, ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য শিক্ষা কমিটিতে আবেদন করেছেন। স্থানীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে এ দুটি স্কুলের সম্পত্তি নিয়েও বিরোধ বাড়ছে।
একইভাবে সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদে চরাইচা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ দখল করেছিল। চরআইচা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জমিটি দখলে ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তারা জমিটি কিনে নিয়েছেন। একইভাবে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল নগরীর শেরে বাংলা নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এ কে স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. লতিফ মজুমদার বলেন, ‘কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল জোর করে ভবনটি নিলামে বিক্রি করতে। এখন আর সেটা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক চক্র ভুল বুঝিয়ে মেয়রকে দিয়ে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জমির বিনিময়ে ভবনের একাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষা কর্মকর্তা আ. লতিফ বলেন, গায়ের জোরে রাজনীতির প্যাঁচে এভাবে প্রাথমিকের অনেক সম্পত্তি দখল করা হয়েছে।