Home ধর্ম যে কারণে মুসলমানদের মধ্যে একতা নেই

যে কারণে মুসলমানদের মধ্যে একতা নেই

51

ডেস্ক রিপোর্ট: ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট। দিল্লির আজাদ পার্ক জামে মসজিদে সেদিন মুসলমানদের দুই দুটো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সভার শিরোনামও এক ছিল। প্রথম সমাবেশ হয় সন্ধ্যা পাঁচটায়, একই মাঠে দ্বিতীয় সমাবেশ হয় রাত সাড়ে নয়টায়।

দুটো সমাবেশেরই উদ্দেশ্য ছিল মসজিদে আকসায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনি মুসলিমদের সঙ্গে সংহতি পোষণ করা। দুই সমাবেশই বিভিন্ন আরব দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

দুই সমাবেশে একই দাবি জানানো হয় এবং ইসরাইলের মোকাবেলায় আরব রাষ্ট্রের পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলা হয় ‘মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ নয়’। বক্তারা পরামর্শ দেন— ‘হে আরব নেতৃবৃন্দ, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলের মোকাবেলা করুন।’

আমি যখন এই দুটো সমাবেশ হতে দেখি, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। অজান্তেই আমার মুখ থেকে একথা বেরিয়ে আসে— ‘যেখানে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরামর্শ দিতে পারি না, সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কীভাবে মোকাবেলা করব?’

এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমরা মুখে একতার বললেও কার্যত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো চেষ্টাপ্রচেষ্টা চালাই না। আমাদের নেতাগণ একতার কথা বলে কেবল ক্রেডিট নেন, কিন্তু সত্যি সত্যিই এক হওয়ার তাগাদা অনুভব করেন না।

লোকজন মুখে বলে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ করে না, এর কারণ হলো কাজের জন্য যে মূল্য দিতে হবে তা দিতে কেউ রাজি নয়।

একতা আমাদের কাছে একটা জিনিসই কেবল চায়— অনৈক্য শেষ করে দেওয়া। অনৈক্য খতম না করলে ঐক্য আনা সম্ভব নয়।

যিনি একতার দাওয়াত দেন, একতা তার কাছেও দাবি করে যে আপনি আলাদা না থেকে অন্যদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনি নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে সবার সঙ্গে এক ও অভিন্ন হয়ে যান। নিজেকে অন্যের সঙ্গে এক করার নাম ঐক্য, নিজেকে অন্যদের থেকে ভিন্ন করার নাম অনৈক্য। তো শুধুমাত্র ক্রেডিট নেওয়ার জন্য একতার কথা বললে কখনোই ঐক্য কায়েম করা সম্ভব নয়।

একতার অর্থ হলো অনেকের জন্য নিজের ‘একত্ব’কে কোরবানি দেওয়া। যিনি নিজের আমিত্বকে কোরবানি দিতে রাজি নন, তিনি কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন না।

কিন্তু কেউ যদি একতাবদ্ধ হওয়া মানে বুঝেন সবাইকে তার নেতৃত্ব কবুল করতে হবে, সবাই তার পতাকাতলে জড়ো হবে, তাহলে একতার কথা বলে মূলত সে অনৈক্যকেই ডেকে আনছে।

তো একতার জন্য প্রথমে নিজেকেই অগ্রসর হতে হবে, নিজেকে সবার সঙ্গে এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করাতে হবে, তবেই ঐক্য আনা সম্ভব হবে।-যুগান্তর