Home সারাদেশ মেহেন্দিগঞ্জের বাহাদুর গ্রামের মাছ,গাছ ও ফসল লুটের অভিযোগ ভোলার লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে।

মেহেন্দিগঞ্জের বাহাদুর গ্রামের মাছ,গাছ ও ফসল লুটের অভিযোগ ভোলার লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে।

26

বরিশাল-ভোলা সীমান্ত বিরোধ

মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধঃ ইলিশা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরটি বাহাদুরপুর গ্রাম নামেই পরিচিত। এই গ্রামটি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের আওতায় হলেও সীমান্তবর্তী ভোলা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কিছু লাঠিয়াল দীর্ঘদিন ধরে এই চরের মালিকানা দাবি করে নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এই চক্রটি যখন ইচ্ছে গ্রামের মানুষদের খেতের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে, ঘের-পুকুরের মাছ, গাছ-গাছালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিবাদ জানালে নিরীহ এসব গ্রামবাসীর বাড়িতে হানা দিয়ে লুটপাট, মারধর করছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামটির দেড় হাজার বাসিন্দার জীবন কাটে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। যুগ যুগ ধরে এমন লুণ্ঠন আর নির্যাতনের শিকার হলেও বিচার তো দূরে থাক থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারেন না ভূক্তভোগীরা। সীমানা জটিলতা অজুহাতে এপার-ওপারের দুই থানার ঠেলাঠেলিতে পিষ্ট হচ্ছে এখানের বাসিন্দাদের জীবন। ভূক্তভোগী ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে অভিযোগ করেন, কয়েক বছর ধরে লাঠিয়াল বাহিনীটি কিছুটা নিস্ক্রীয় থাকলেও গত এক মাস ধরে তারা পুনরায় সক্রিয় হয়ে লুটপাট চালাচ্ছে গ্রামবাসীর ওপর। এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দকপুর গ্রামের জাহের সরদার, খায়ের ডাক্তার, দুলাল খন্দকার, মাহবুব সরদার,লিটন ভান্ডারি এবং তাদের সহযোগী ৩০ থেকে ৪০ জন। এরা মেহেন্দীগঞ্জের সীমান্তের বাহাদুরপুরের আদর্শ গ্রামে ঢুকে এখানে বসবাসকারী পরিবারগুলোর ওপর পুনরায় জুলুম চালাচ্ছে। বাহাদুরপুর গ্রামটি মেহেন্দীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। এক থেকে দেড় হাজার পরিবারেরও বেশি পরিবার বাস এখানে। গ্রামটিকে নিজেদের দাবি করে আসছে ভোলার ওই লাঠিয়াল চক্রটি। এনিয়ে দুই জেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। লাঠিয়াল বাহিনীর আনাগোনা দীর্ঘ প্রায় ২০-২৫ বছরের। তবে দীর্ঘদিনও মিটেনি সীমানা বিরোধ। এ এলাকার কৃষকরা সময়মত রোপণকরা ধান ঘরে তোলার আগেই লাঠিয়ালরা তা কেটে নিয়ে যায়। অনেক আগে আন্তঃজেলা সীমানা নির্ধারণ করা হলেও চূড়ান্ত পিলার স্থাপন না হওয়ার সুযোগ নিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরু, জমির ফসল, বাগানের গাছ লুট করে নিয়ে যায়। সরকারি একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে গ্রামটিতে, এর মধো রুকন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শ গ্রাম, মৎস্য ঘের রয়েছে। বাহাদুরপুর আদর্শগ্রামের মৃত কালু মৃধার স্ত্রী লাইজু বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে ভোলার লাঠিয়াল বাহিনী আমাকে মারধর করে আহত করে। জমির চাষকৃত কলই নষ্ট করে, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। মৃত নোয়াব আলী বেপারীর স্ত্রী মুকুল বেগম বলেন একযুগ আগে তিনি বিধবা হয়েছেন। তাঁর গাছ বিক্রির ওপর চাঁদা দাবি করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয় লাঠিয়ালরা।তিনি এখন আতঙ্কে আছেন। শাহে আলম মুন্সির স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, আমার বাড়ির রোপণ করা গাছ কাটতে গেলে চাঁদার দাবিতে তাতে বাধা দেয় ওই লাঠিয়াল ও সন্ত্রাসীরা। তাদের ভয়ে জীবন সংশয়ে আছি আমরা। অপর বাসিন্দা মঙ্গল গাজী বলেন, আমার জমি দখলের প্রতিবাদ করায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায় লাঠিয়াল বাহিনী। কোনো বিচার পাইনি। কার কাছে বিচার চাইবো। এদের লুটপাট থেকে বাদ যায়নি মেহেন্দিগঞ্জরর সরকারী মৎস্য প্রকল্পও। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এক সময়ের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নন্দপুরা, কন্দকপুরা ও মেদুয়ার একটি বিশাল অংশ প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে ভোলাবাসী তাদের দাবি করে আসছে। অথচ প্রায় শত বছরের আগের তৈরি করা সিএস ম্যাপকে কোনো গুরুত্ব না দেওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। চরবাসীর অভিযোগ, ভোলার মৌসুমী লাঠিয়াল বাহিনী তাদের ধান, পুকুরের মাছ লুট, বাগানের গাছ লুট এমনকি হাস,মুরগী ও গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদে করলে লাঠিয়াল বাহিনী ও ভূমিদস্যুরা মিলে প্রায়ই কৃষকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। চরে বসবাসরত কৃষকদের উৎখাতের জন্য বর্ষা মৌসুমে হালে গরু-মহিষ চুরি করে নিয়ে যায়। মেহেন্দীগঞ্জের বাহাদুরপুর ইউপি সদস্য মো. আমীর হোসেন জমদ্দার বলেন,সীমান্তবর্তী ভোলার একদল সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী, লুটপাট ও হামলা চালিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে গ্রামের মানুষদের।এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হওয়ায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায়ই ভোলার লাঠিয়াল বাহিনী আদর্শগ্রাম এলাকা দখল করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ব্যর্থ হয়ে প্রত্যেকবারেই চরের বাসিন্দাদের সম্পদ ও ফসল লুট করে নিয়ে যায়। বহিরাগত লাঠিয়াল বাহিনীর হুমকির মুখে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। সীমান্ত বিরোধ নিরসনের লক্ষে পিলার স্থাপন করা হলেই এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেম্বার হারুন চৌকিদার বলেন, আমরা শুনেছি আমাদের এলাকার কিছু লোক গায়ের জোড়ে মেহেন্দীগঞ্জের বাহাদুরপুর গ্রামে ঢুকে লুটপাট চালায়, ওই গ্রামটি মেহেন্দীগঞ্জের এখানে বিতর্ক করার কোননো সুযোগ নেই। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিথু চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে মাপ হয়েছিলো, সীমানা বিরোধ রয়েছে। তবে আমাকে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেহেন্দীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই জমি সরকারি। এখনো মালিকানা নির্ধারণ হয়নি। যে যার মতো করে দখল করে যাচ্ছে এবং পক্ষ -বিপক্ষ অভিযোগ করে যাচ্ছে। তবে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে। জটিলতা নিরসনে সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।