ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের সঙ্গে হার। এমন ‘অঘটনে’ অনেকের শঙ্কা ছিল, প্রথম রাউন্ডের চৌকাঠ পার হতে পারবে তো দুবারের বিশ্বকাপজয়ীরা!

সেই আর্জেন্টিনা ১৮ ডিসেম্বর শিরোপার লড়াইয়ে নামবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এমবাপ্পে-জিরু-গ্রিজমানদের বাধা টপকালেই ৩৬ বছর পর তৃতীয় শিরোপা উঠবে মেসিদের হাতে। ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনার পাশে নাম লেখা হবে মেসিরও।

দেখা গেছে, এবারের বিশ্বকাপ যত সামনে এগিয়েছে, ততই ক্ষুরধার হয়েছে মেসি-আলভারেজদের খেলা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, সর্বোপরি একটি দল হয়ে খেলায় এবারের আর্জেন্টিনার তুলনা নেই। এ যেন হঠাৎ আলোর ঝলকানি। কিন্তু কী রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে। কিছু একটা তো আছেই।

মেসি-মার্তিনেজরা মাঠে খেলেন। আর তাঁরা ‘খেলেন’ টুইটার-ইনস্টাগ্রামে। কখনো উপস্থিত থাকেন গ্যালারি আলো করে। তাঁরা আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের স্ত্রী কিংবা বান্ধবী। তাঁরা কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় তারকা, কেউ মডেল, কেউ অভিনেত্রী, কেউবা সংগীতজ্ঞ। তাঁরাই মেসিদের অনন্ত প্রেরণার উৎস।

এবার তাঁদের সঙ্গে সংক্ষেপে পরিচিত হয়ে আসা যেতে পারে…
আন্তোনেলা রোকুজ্জো আর লিওনেল মেসির পরিচয় সেই সাত বছর বয়স থেকে। দুজনই যেন ‘সোলমেট’। মেসি অনেকবারই বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী আমাকে হৃদয় দিয়ে চেনে।’

সেই কিশোর বয়সেই নিজের দেশ আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে যান মেসি। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে আর্জেন্টিনার তারকা বললেন, ‘তখন আন্তোনেলার সঙ্গে সর্বক্ষণ কথা বলার উপায় ছিল না। আমরা সপ্তাহে এক দিনমাত্র কথা বলতে পারতাম। আমাদের কলও হতো সংক্ষিপ্ত। কারণ, খরচের বিষয় ছিল। কিন্তু আমার সারা জীবনের চিন্তায় ছিল আন্তোনেলা।’

আর্জেন্টিনায় লেখাপড়া শেষ করে রোকুজ্জো একসময় বার্সেলোনা চলে যান, তাঁদের প্রেমকে পরিণতি দিতে। একসঙ্গে থাকা শুরু করেন দুজন। ৯ বছর প্রেমের পর ২০১৭ সালে তাঁদের জন্মশহর রোজারিওতে দুজনের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দেন। এই দুই ‘লাভবার্ডে’র তিন সন্তান থিয়াগো (১০), মাতেয়ো (৭) ও চিরো (৪)।

রোকুজ্জোর রয়েছে দুই কোটি ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার। নানা ধরনের সামাজিক কাজের জন্য পরিচিত রোকুজ্জো তিন সন্তান নিয়ে কাতারে অবস্থান করছেন, বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। আর্জেন্টিনার খেলার দিন গ্যালারিতে তিনি নিয়মিত মুখ।
আর্জেন্টাইন উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়ার স্ত্রী। বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় আছেন হোর্হেলিনাও।

আমরা জানি, দি মারিয়া এখন খেলছেন জুভেন্টাসে। এর আগে রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজির হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। ২০২১–এ আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা শিরোপা জিততে দি মারিয়ার বড় ভূমিকা ছিল।

কীভাবে প্রেম হয়েছিল তাঁদের? মেসির মতো বাল্যপ্রেম হয়নি, তবে দি মারিয়া-হোর্হেলিনার হয়েছিল কিশোর প্রেম। ১৭ বছর বয়সে রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে অভিষেক হয় দি মারিয়ার। আর জর্জেলিনা ছিলেন এই ক্লাবের পাঁড় ভক্ত। এদের খেলা থাকলেই মাঠে চলে যেতেন। এ সময় দি মারিয়ার সঙ্গে তাঁর দেখাসাক্ষাৎ হলেও তেমন আলাপ হয়নি। এক বছর বাদে দি মারিয়ার সুযোগ হয় পর্তুগালের বেনফিকার হয়ে খেলার। সুযোগ কাজে লাগিয়ে একদিন তিনি ইউরোপে পাড়ি জমান।

তখন মাঠে রোজারিওর খেলা দেখতে গিয়ে একধরনের শূন্যতা অনুভব করেন হোর্হেলিনা। কিছু একটা নেই! সেই অনুভূতি থেকে একজন ফ্যান হিসেবে ই–মেইল করেন দি মারিয়াকে। এভাবে হয় তাঁদের যোগাযোগ, এরপর প্রেম। এখন মিয়া ও পিয়া নামে দুই কন্যা নিয়ে তাঁদের সংসার।
তিনি আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজের বান্ধবী। একটি পার্টিতে তাঁদের প্রথম দেখা। দুজনের একজন অভিন্ন বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়। এরপর একে অপরের সম্পর্কে জেনে তাঁরা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। শুরু হয় ডেট। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো তাঁরা সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেন।

মার্তিনেজ সম্পর্কে কিছু বলা যাক। গোল করার ক্ষেত্রে লাওতারো মার্তিনেজ এক বিস্ময়কর প্রতিভা। আর্জেন্টিনার হয়ে ৪১ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। এর মধ্য দিয়ে দেশের পক্ষে গোল করার দিক থেকে অষ্টম অবস্থানে তিনি। ৯৬ গোল করে যে তালিকার ১ নম্বরে লিওনেল মেসি। ক্লাবের হয়েও বড় সাফল্য আছে মার্তিনেজের। ইন্টার মিলানের হয়ে ২০২ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা ৮২।

মার্তিনেজের চেয়ে অগাস্তিনাও কম জনপ্রিয় নন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার এক মিলিয়নের বেশি। বেশ কিছু সুইমস্যুট ব্র্যান্ডের মডেল হয়েছেন তিনি। মূলত ফিটনেস নিয়ে কাজ করে আলোচিত হয়ে উঠেছেন ২৮ বছর বয়সী অগাস্তিনা। ফটোশুট থেকেও অনেক টাকা আয় করেন। পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁ চালান। তাঁর সম্পদের পরিমাণ দুই মিলিয়ন ডলারের মতো। দুই বছর বয়সী মেয়ে নিনাকে নিয়ে মিলানেই সংসার পেতেছেন মার্তিনেজ-অগাস্তিনা জুটি। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি তাঁদের।
অন্য যাঁরা, কেমন তাঁরা
স্ত্রী ও বান্ধবীদের মধ্যে আলোচিত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মুরি লোপেজ বেনিতেজ। তিনি ‘আর্জেন্টিনার কসাই’খ্যাত লিসান্দ্রো মার্তিনেজের বান্ধবী। মুরি লোপেজের ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ারের সংখ্যা ৫০ হাজারের ওপরে। ম্যানইউ তারকার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ১৪ বছর আগে। একজন মডেল হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান এই লাস্যময়ী। আর্জেন্টিনার জার্সি পরে মাঠের নিয়মিত মুখ মুরি লোপেজ উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন পুরো দলকে।

এরপর বলা যায় টিনি স্টলসেলের নাম। বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের বান্ধবী তিনি। আর্জেন্টিনার একজন নামী নৃত্যশিল্পী ও গায়িকা। বর্তমানে রদ্রিগোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে হারার জন্য ভক্তদের অনেকে তাঁকে দায়ী করে থাকেন। রদ্রিগোর সাবেক স্ত্রীর নাম কেমি হোমস। সেখানে তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

সেলস্তের গল্পটা একটু আলাদা। তিনি সেন্টারব্যাক নিকোলাস ওতামেন্দি স্ত্রী। কিশোর বয়সেই তাঁদের প্রেম। তবে ২০১৫ সালে ওতামেন্দি ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁদের প্রেম জানাজানি হয়। তিন সন্তান নিয়ে তাঁদের সংসার। সেলস্তের সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই বললেই চলে। কেবল স্বামীর শেয়ার করা ছবিতেই তাঁকে দেখা যায়।
তরুণ স্ট্রাইকার পাওলো দিবালার বান্ধবী ওরিয়ানা সাবাতিনি। বুয়েনস এইরেসের ঝাঁ–চকচকে পরিবেশে জন্ম নেওয়া সাবাতিনি একজন অভিনেত্রী, শিল্পী ও মডেল। ইনস্টাগ্রামে ছয় মিলিয়ন ও স্ন্যাপচ্যাটে দুই মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে তাঁর। ২০১৫ সালে জুভেন্টাসে অভিষেকের সময় থেকেই দিবালার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।

এ ছাড়া কাতারের মাঠ উজ্জ্বল করে আছেন লিয়ান্দ্রো পারেদেসের বান্ধবী ক্যামি গ্যালান্তে, গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের স্ত্রী আমান্দা গামা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর স্ত্রী ক্যারেন ক্যাভেলার।
শেষে বলতে হয় তরুণ মুখ হুলিয়ান আলভারেজের বান্ধবী মারিয়া এমিলিয়া ফেরেরোর কথা। স্প্যানিশ এই বিউটি কুইন একজন ফিল্ড হকি প্লেয়ার। আলভারেজ এই বিশ্বকাপে নিজেকে চিনিয়েছেন। বিশ্বকাপ শেষে তাঁকে নিয়ে ক্লাবগুলোর কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে সন্দেহ নেই। সব মিলে সামনে তাঁদের প্রেমের রসায়ন আরও জমবে।

সবকিছুই হবে। তবে সবার আগে হাতে ওঠা চাই ট্রফি।
প্রথমআলো