Home সাহিত্য ও বিনোদন মূকাভিনয় নবরূপ পেল রিজোয়ানের দেহভাষায়, নির্বাক মুখরতায় মাতল মূকাভিনয় রাজধানী

মূকাভিনয় নবরূপ পেল রিজোয়ানের দেহভাষায়, নির্বাক মুখরতায় মাতল মূকাভিনয় রাজধানী

32

চট্টগ্রাম অফিস: আন্তর্জাতিক মূকাভিনয়শিল্পী রিজোয়ান রাজনের একক মূকাভিনয় প্রদর্শনী ‘আমার চোখেই শুধু ধাঁধাঁ’ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের প্রযোজনায় ও গ্রাজুয়েটস’৯৫ চট্টগ্রাম কলেজের সার্বিক সহযোগিতায় মঞ্চস্থ হয়।

রিজোয়ান সময়, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও কমেডি-ফ্যান্টাসি যুগপৎভাবে মঞ্চে উপস্থাপন করেন। আবেগ-অনুভুতি আর হাসি-কান্নার মিশেলে নবধারার এই প্রযোজনাটি রিজোয়ানের অনবদ্য সৃজনকলা। মূকাভিনয় শুরুরু আগে অ্যাাডভোকেট দিলরুবা আকতার লিজার সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুস্তফা কামরুল আখতার, গ্রাজুয়েট’৯৫ চট্টগ্রাম কলেজের সভাপতি মো. নুরুল আবছার ও সহসভাপতি অ্যাডভোকেট কানিজ কাওছার রীমা বক্তব্য দেন। প্রদর্শনী শেষে প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক সোলেমান মেহেদী ধন্যবাদ জানান সকলকে।

পাঁচটি ভিন্ন মাত্রিক গল্পের এই আয়োজন ‘আমার চোখেই শুধু ধাঁধাঁ’! গল্পগুলো হল ‘প্রাণ প্রকৃতি’, ‘নদী, মাছ এবং একজন হরিশঙ্কর’, ‘বুলেট’, ‘বুড়ো জাদুকরের গপ্পো’, ‘অনিল কাকা’। প্রথম ও সর্বশেষ গল্পটির স্ক্রিপ্ট শিল্পীর নিজের। বাকী তিনটির নবনাট্যায়ন, নামকরণ ও রূপান্তর করেন তিনি। সাধারণত মূকাভিনয়ের গল্প মূকাভিনয়ের শিল্পীকেই তৈরি করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য গল্পগুলোর ভাবনা যথাক্রমে মাইম আইকন কাজী মশহুরুল হুদা, ভারতের বিখ্যাত নট অঞ্জন দেব ও নাট্যশিল্পী মো. রাসেল।

প্রাণ-প্রকৃতি’ মূকাভিনয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে জীব-বৈচিত্র ও মানুষের বেঁচে থাকা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এই বিপর্যয় মানুষেরই সৃষ্টি, এর সমাধানও মানুষের কাছে। ‘নদী, মাছ এবং একজন হরিশংকর’ মূকাভিনয়টি ফ্যান্টাসি নির্ভর। একজন জেলে মাছ ধরতে গিয়ে মাছের পেটের ভিতরে চলে যায়। সেখানে এক অন্য পরিবেশ, সে ভীত হয়ে পড়ে। বুদ্ধি ও সাহস সঞ্চয় করে সেখান থেকে সে বেঁচে ফিরে আসে। ‘বুলেট’ মূকাভিনয়ে চলমান সমাজ ব্যবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার সীমিত হয়ে গেছে, প্রতিবাদ করলে জেল-জুলুম-গুম হওয়ার ভয় আছে। তারপরও মানুষ প্রতিবাদী হয়। ‘বুড়ো জাদুকরের গপ্পো’ মূকাভিনয়টি কমেডি ধাঁচের। এক জাদুকর জাদু দেখাতে গিয়ে প্রায়ই অঘটন ঘটায়। জাদুগুলো ভুল উপস্থাপন হয়। তারপরও দর্শক মজা পায়। এক বার তার সঙ্গীনিকে শূণ্যে তোলার পর আর নামাতে পারে নি, সঙ্গীনি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সেই থেকে জাদুকর আর জাদু দেখান না। ‘অনিল কাকা’ মূকাভিনয়ে অনিল কাকা সংখ্যালুঘু মানুষের প্রতিনিধি। রাজনীতি আর ধর্মীয় সহিংসতায় তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা হৃদয় বিদারক। নিজ দেশেই অনিল কাকারা পরবাসী।

রিজোয়ানের মূকাভিনয় আমাদের দেখা প্রচলিত মূকাভিনয়ের মত নয়। তিনি বাংলা ঐতিহ্যবাহী নাট্যের সমান্তরালে মূকাভিনয় উপস্থাপন করেন। প্রাচীন গ্রিক-রোমান মূকাভিনয়ের ধারাবাহিকতায় তার এই মূকাভিনয়ের চর্চা। তিনি নাট্যের প্রয়োজনে একই সাথে অনেকগুলো চরিত্রের সমাবেশ ঘটান হ্যান্ড প্রপস, পারসোনাল প্রপস কিংবা জেস্চার পরিবর্তনের মাধ্যমে আবার নিজেই চরিত্র থেকে বের হয়ে কথকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রিজোয়ানের এই মূকাভিনয় ভিন্ন স্বাদের আবার ইতিহাসের সাথে একসূত্রে গাঁথা।

প্রযোজনার নেপথ্যে আবহ সঙ্গীতে রাজ ঘোষ, পোশাক পরিকল্পনায় তামিমা সুলতানা, আলোক পরিকল্পনায় মুহাম্মদ ভাই, প্রজেকশনে সোলেমান মেহেদী, আলোক প্রক্ষেপণে রাইদাদ অর্ণব ছিলেন। এছাড়া, শাহীন চৌধুরী ও সায়েম উদ্দীন বিশেষ সহযোগিতা করেন।