Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস মারধর, কান ফাটানো, অস্ত্র মহড়ায় জড়িত রোভার স্কাউট সভাপতি !

মারধর, কান ফাটানো, অস্ত্র মহড়ায় জড়িত রোভার স্কাউট সভাপতি !

62

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটের সভাপতির বিরুদ্ধে বহিরাগতকে মারধর, গেস্টরুমে নির্যাতন এবং অস্ত্র মহড়া দেওয়ার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম ফরিদ আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের (সেশন ২০১৭-২০১৮) শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ্ছাসেবী সংগঠন রোভার স্কাউটের ২০২২-২০২৩ সালের কমিটির রোভার ইন কাউন্সিল সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত মঙ্গলবার ২১ মার্চ বিকাল ৬টায় মীর মশাররফ হোসেন হলের গেস্টরুমে এক বহিরাগতকে মারধর ‍ও চাঁদা দাবী, একই দিন রাত ১১ টায় গেস্টরুম নির্যাতনে এক শিক্ষার্থীর কান ফাটানো এবং বুধবার ২২ মার্চ সন্ধ্যায় অস্ত্র মহড়ায় পৃথক তিনটি ঘটনায় ফরিদকে স্বপ্রণোদিত হয়ে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।

গেস্টরুমে উপস্থিত ৪৪ ও ৪৭ ব্যাচের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গেস্টরুম শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত ফরিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো। ৪৮ ব্যাচের তিন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের সময়ও ফরিদ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে নির্যাতনে ৪৮ ব্যাচের সজীব আহমেদের কান ফেটে অসুস্থ হয়ে পড়লে সিনিয়রদের কথামতো ফরিদ তাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়।

এই সজীব আহমেদও জাবি রোভার স্কাউটের একজন সদস্য। সভাপতির উপস্থিতিতে সদস্যকে মারধরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্কাউটের অন্যান্য সদস্যরা।

এর আগে বিকাল ৫টায় এক বহিরাগতকে একই গেস্টরুমে এনে মারধর ও মুক্তিপণ দাবী করা হয়। এসময় ফরিদ সেখানে উপস্থিত ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিনিয়ররা যখন গেস্টরুম থেকে বহিরাগতদের বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তখন জুনিয়ররা তাদের উপর চড়াও হয়। এসময় ফরিদ তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করে হলে ঢুকতে বাধ্য করেন। যার একটি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।

অন্যদিকে সুলতান’স ডাইনে (সাভার শাখা) বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৭ ব্যাচের বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, মার্কেটিং বিভাগের খালিদ হাসান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান সাগরসহ কয়েকজনের সাথে দ্বন্দ্ব হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৪৭ ব্যাচের আইবিএ বিভাগের মাহফুজুর রহমান। এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে দুটি মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ২২ মার্চ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বাংলা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের আহমেদ গালিব মারধরে শিকার হয়। ফলে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৭ ব্যাচ প্রতিশোধ নিতে জুনিয়রদের নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দেয়। তারা রড, লাঠিসোটা, রামদা, কাচের বোতল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা বটতলায় জমায়েত হন। এসময় ফরিদকে জুনিয়রদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

পৃথক তিনটি ঘটনার উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত ফরিদ আহমেদ বলেন, আমি তিনটি পৃথক ঘটনাতে উপস্থিত ছিলাম তবে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। আমি রোভার স্কাউটের সভাপতির পাশাপাশি শাখা ছাত্রলীগের একজন কর্মী। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে হলের সকল ঘটনায় উপস্থিত থাকতে হয়। সেই হিসেবে আমি বহিরাগতকে মারধর ও গেস্টরুমে নির্যাতন এবং অস্ত্র মহড়ায় উপস্থিত ছিলাম। তবে আমি ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সজীবকে যখন কানে থাপ্পড় দেওয়া হয় তখন আমি রুমের বাইরে পানি আনতে গিয়েছিলাম, গেস্টরুমে গিয়ে দেখি সে মাটিতে পড়ে আছে। তখন সে অসুস্থবোধ করায় দ্রুত তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই।’

রোভার স্কাউট লিডার ও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে ঘটনা প্রমাণিত হলে সে নেতৃত্বের দায়িত্ব হারাবে এবং সদস্যপদ বাতিল করা হবে।’