ডেস্ক রিপোর্ট: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি জিতে হোয়াইট ওয়াশ ঠেকালো বাংলাদেশ। এটি ছিলো বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের ৪শ’তম ম্যাচ। আর এমন মাইলফলকের ম্যাচে বাংলাদেশ ১০৫ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারলো টাইগাররা। ওয়ানডের আগে এ সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ।
আজ হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে প্রথম দুই ওয়ানডের মত শেষ ম্যাচেও টস ভাগ্য সহায়ক হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালের। ফলে এবারও প্রথমে ব্যাটিং করতে হয় টাইগারদের।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই চার মারেন তামিম। চতুর্থ ওভারের পরপর দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। পঞ্চম ওভারে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান তামিমের সঙ্গী আনামুল। এরপর আরও দু’টি চারে ৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের রানকে ৪০এ নিয়ে যান আনামুল। তবে নবম ওভারে আনামুলের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন তামিম। ৩০ বলে ১৯ রান করেন তামিম। তামিমের আউটের পর বাংলাদেশের বিপদ বাড়ে। ১০ম ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমকে হারায় বাংলাদেশ। পেসার ব্র্যাড ইভান্সের করা ঐ ওভারের প্রথম বলে শান্ত ও চতুর্থ ডেলিভারিতে বিদায় নেন মুশফিক। দু’জনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। ফলে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ৯০ বলে ৭৭ রানের জুটি বেঁধে বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করেন আনামুল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। জুটিতে মারমুখী মেজাজে ছিলেন আনামুল। ৪৮তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আনামুল। হাফ সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসকে সামনে টেনে নিয়ে গেছেন আনামুল। সেঞ্চুরির কিঞ্চিৎ সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭৩ রানে থামতে হয় আনামুলকে। জিম্বাবুয়ের লুক জংওয়ের বলে খোঁচা দিয়ে খেলে থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন তিনি। তার ইনিংসে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো।
আনামুল যেখানে মারমুখী ছিলেন সেখানে ধীরলয়ে খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। তাতে ৬৯ বলে ৩৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। আনামুলের পর আফিফ হোসেনের সাথে ৫৭ বলে ৪৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ৩৫তম ওভারে দলের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ ফিরলে বাংলাদেশের লড়াকু স্কোর পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে লোয়ার-অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে একাই লড়াই করেছেন আফিফ। ৫৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলেন তিনি।
অর্ধশতকের পর ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশকে লড়াই করার মত পুঁিজ এনে দেন আফিফ। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান করে বাংলাদেশ। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮১ বলে অপরাজিত ৮৫ রান করেন আফিফ। ইভান্স-জংওয়ে ২টি করে উইকেট নেন।
২৫৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের বোলিংকে ঠিকমত সামলাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ওভারে ৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনাকে হারায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসে পরপর দুই বলে দু’টি মূল্যবান উইকেট তুলে নেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পেসার এবাদত হোসেন। ওয়েসলি মাধভেরেকে ১ ও আগের দুই ম্যাচের নায়ক সিকান্দার রাজাকে খালি হাতে সাজঘরের পথ দেখান এবাদত। ফলে ১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
তাইজুল ও মুস্তাফিজ জিম্বাবুয়ের পরের ৫ উইকেট তুলে নেন। তাইজুল ২টি ও মুস্তাফিজ ৩টি উইকেট তুলে নিলে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ৮৩। ফলে ১’শর নীচে জিম্বাবুয়ের গুটিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার ছিলো। কিন্তু শেষ উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন এনগারাভা ও নিয়ুচি। দু’জনে মিলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ৫৮ বলে ৬৯ রানের জুটিতে জিম্বাবুয়ের স্কোর দেড়শ স্পর্শ করে। তাতে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। ৩৩তম ওভারে বাংলাদেশের মুখে হাসি ফোটান মুস্তাফিজ। শেষ ব্যাটার নিয়ুচিকে বোল্ড করেন ফিজ। ১৫১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। নিয়ুচি ৩১ বলে ২৬ রান করেন। ২৭ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন এনগারাভা। মুস্তাফিজ ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন। এবাদত-তাইজুল নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের আফিফ ম্যাচ সেরা ও জিম্বাবুয়ের রাজা সিরিজ সেরা মনোনীত হয়েছেন।