Home মতামত মানবিকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মানবিকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

109

ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান:

একদিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রয়াস, অন্যদিকে যে কোনো কর্মসূচিকেই বাতিল করে দেয়ার প্রবল প্রচারণা। এতসব ঝঞ্ঝা-বিক্ষোভের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নাম শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী পিতার সন্তান-বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার, তিনি স্বজনহারা এক বঙ্গনারী, যিনি তাঁর বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়-পরিজন সবাইকে হারিয়ে পেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যে ভ্যানে চড়ে নিজ গ্রামে ঘুরেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই ভ্যান চালক ইমাম শেখের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। এরই মাধ্যমে ঘুরে দাড়িয়েছে ইমামের ভাগ্য। এখন থেকে তাকে আর ভ্যানের প্যাডেলে পা রাখতে হবে না। এভাবেই বদলে গেল তার জীবন।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১, নবাব কাটরা ৫ তলা বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা যান। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় কয়েকটি পরিবার। বাড়ির নীচে ক্যামিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। পুরান ঢাকার নিমতলী যেদিন আগুনে জ্বলছিল, সেই রাতে রুনার পানচিনির অনুষ্ঠান ছিল। আর এই মাসেই বিয়ের তারিখ নির্ধারিত ছিল বড় বোন সাকিনা আক্তার রত্নার। একই এলাকার আসমারও বিয়ে ঠিক হয়েছিল। হয়েছিল সব কেনাকাটা। কিন্তু স্বপ্ন-স্বজন সব কেড়ে নিয়েছে আগুন।

দুই বোনের বিয়ের সব প্রস্তুতি যখন চলছে, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবর আসে রত্না-রুনার ঠিক পাশের বাসার আসমা আক্তারের। আসমার মা মারা গেছেন সেদিন। আর পরিবারের সব সদস্য তখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই খবর জানার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুই কন্যার আয়োজন রূপ পেল তিন কন্যায়’। তার আগে লালমাটিয়ায় মহিলা অধিদপ্তরের আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দেখা গেল কেন্দ্রজুড়ে আগের রাতের পায়েহলুদের অনুষ্ঠানের ছোঁয়া। কর্মকর্তারা ছোটাছুটি করে কাজ করছেন। মেয়েদের কাপড় কেটে সেলাই চলছে। বউয়ের সঙ্গে যারা গণভবনে বিয়ের আসরে যাবেন, তাঁদের তালিকা হচ্ছে। সবার মুখে হাসি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সবার একই রকম পোশাক। রুপালী জরির কাজ করা নীল শেরওয়ানি। মাথায় নীল পাগড়ি। কনেপক্ষ যথারীতি আটকে দিয়েছে ফটক। সেই চিরাচরিত বকশিশ দাবি। দরকষাকষি থেকে রীতিমতো বাকরুদ্ধ অবস্থা। হবে না কেন? খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘কন্যা’ বলে কথা। অবশেষে সুরাহা করতে হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই। ৫০ হাজার টাকা বকশিশ পেয়ে বরদের পথ উন্মুক্ত করে দিলেন কনেপক্ষ। সানাইয়ের মূর্ছনা, আলোকসজ্জা, শাড়ি-গয়না, খানাপিনা কোনো কিছুরই ঘাটতি ছিল না বিয়েতে। মহা ধুমধামে ‘তিন কন্যা’র বিয়ে দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে। ফুলে ফুলে সাজানো বিবাহ মঞ্চে বর-কনেদের বসার ব্যবস্থা। আট ভরি করে ২৪ ভরি স্বর্ণের গয়না তিন কন্যাকে পরিয়ে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে। ঘর সাজাতে যা যা প্রয়োজন মা হিসেবে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবকিছুরই আয়োজন করেছেন। তিন দম্পতির প্রত্যেকের জন্য একটি করে খাট, ওয়্যারর্ডোব, সোফাসেট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, ফ্রিজ, ডিনার সেট এমনকি হাঁড়ি-পাতিল সব থরে থরে সাজানো। বরদের জন্য শেরওয়ানি, স্যুট, জুতা সবকিছুই দেওয়া হয়। বর সুমনের হাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসিক ব্যাংকের নিয়োগপত্র তুলে দেন।

বর্তমানে ভালোই আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘তিন কন্যা’ রুনা, রত্না ও আসমা। ওই তিন মেয়ের ঘরে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন নাতি-নাতনী। এদের একজনের নাম আলী মর্তুজা আযান, দ্বিতীয় জনের নাম শ্রদ্ধা এবং তৃতীয় জনের নাম রমাদান। নিমতলী ট্রাজেডিতে রুনা, রত্না ও আসমা আপন জন হারিয়ে নিঃস্ব হলেও আজ আর তারা নিঃস্ব নয়। সেই তিন কন্যার সন্তান ও সংসার দেখে মনে হয় এটা জীবন বদলের গল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তিন নাতিই লেখাপড়া করছে।

করোনাভাইরাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ। জ্যামিতিক হারে বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। সাধারণ ছুটিতে ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় কর্মহীন ছিল বেশিরভাগ মানুষ। কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সরকার ত্রাণ সহায়তা দিয়েছর। বিত্তবান অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি বসতঘর মেরামতের জন্য দুই বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জমানো ১০ হাজার টাকা ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামে বাস করতেন নাজিমুদ্দিন। ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় চলে তার সংসার। বসতঘর মেরামতের জন্য নাজিমুদ্দিন তিলে তিলে টাকা জমিয়েছিলেন। করোনা সংকটে সেটিই কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষদের দিলেন।

নাজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ইউএনওর খাদ্যসামগ্রী দিতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান। সবাইকে চমকে দিয়ে নাজিমুদ্দিন তালিকায় তার নাম না দিতে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে ভিক্ষা করে জমানো টাকা দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পরে নিজে সেই টাকা নাজিমুদ্দিন ইউএনওর হাতে তুলে দেন। এ সময় নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে খাইয়ে-খুইচরে দুই বছরে এ টেহা জড়ো করছি । আমার ঘরডা ভাঙ্গে গেছে গ্যা। এহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। দশে এহন (মানুষ) কষ্ট করতাছে, আমি এ টেহ্যা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। দশেরে দিয়ে দেক, খাইয়ে বাঁচুক।’ মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শেরপুর জেলার সেই ‘ভিক্ষুক’কে পুরস্কৃত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের ত্রাণ তহবিলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের দানের খবরটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে নিজের তহবিল থেকে উপহার হিসেবে জমি, ঘর এবং দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন সেটি মূলত সরকারের খাস জমিতে ছিল। এটি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনও জানতেন না। সরকারের এই খাস জমিটিও ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনও ভিক্ষা করতে না হয় সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসাও করা হয়েছে।

লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, সেটা যেন কখনও ব্যর্থ না হয়ে যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই অর্জনের সুফল যেন বাংলাদেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেতে পারে এবং ভবিষ্যতে প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধি। বাঙালির নিজস্ব সংগ্রামের অগ্রনায়ক হিসেবে আমাদের মুক্তির আন্দোলন এবং আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের দিশারী। উদার মানবিক শেখ হাসিনা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

-লেখক: প্রফেসর, মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।