Home জাতীয় ভাউচার ভিত্তিক চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনশন কর্মসূচীতে গণপূর্তের কর্মচারীরা

ভাউচার ভিত্তিক চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনশন কর্মসূচীতে গণপূর্তের কর্মচারীরা

276

প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকরিপি প্রদান

স্টাফ রিপোটার:দীর্ঘ ২৫ বছরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরনের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারীরা। আজ বুধবার (১৪ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই অনশন কর্মসূচী পালন শুরু হয়েছে। অনশনকারী কর্মচারীরা তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না বলে ঘোষনা দিয়েছে। এর আগে তারা প্রধানন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। কর্মসূচীতে মনির হোসেন শোভন, হাবিবুর রহমান, মো. ইসমাইল খান, মৌ মনির, আনোয়ার পারভেজ ও জিয়াউর রহমানসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
অনশন কর্মসূচী থেকে কর্মচারীরা জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরাধীন দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে অন্তত ১৫১৭ জন কর্মচারী দীর্ঘ ২৫ বছর বা তার অধিক সময়যাবৎ সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে দৈনিক হারে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দেয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। যা দিয়ে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। আমাদের সহকর্মী কেউ মারা গেলে চাঁদা তুলে তাঁর দাফন কার্য সম্পূর্ণ করতে হয়। অর্থের অভাবে আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তুচ্ছতাচ্ছিল্য নিয়ে বেঁচে আছি। তবে দৈনিক ভাউচার ভিত্তিক মজুরীতে নিয়োগকৃত এসব কর্মচারীদের কাজের মেয়াদ ১৩ বছর পূর্ণ হলে তাঁকে রাজস্ব খাতে আনয়নের নীতিমালা রয়েছে। যদিও হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ১৫১৭ জন কর্মচারীর মধ্যে থেকে ৪২ জনকে চাকুরীতে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। সেই আলোকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ২৫.০০.০০০০.০১৪.১১.০০৮.১৯.৪৮৪ নং স্মারক মূলে ২ ডিসেম্বর-২০২০ তারিখে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর কর্মচারীদের তথ্যাবলী সংক্রান্ত নামের তালিকা চেয়ে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে সেই চিঠির কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং পান থেকে চুন খসলেই কর্মচারীদেরকে করা হয় নির্যাতন। ঘুমন্ত অবস্থাতেও চাকুরী হারানোর ভয় তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের ন্যায্য অধিকারের কথাটুকু মুখফুটে বলতেও পারি না।
এ কারনে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ের কথা জানিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে দুই বছর পর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করলে অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রনালয়কে একটি ত্রুটিপূর্ণ তালিকা প্রেরন করা হয়। কিন্তু ওই তালিকাটিও অন্তত ছয় মাস ধরে পড়ে আছে বড় বাবুদের কোন টেবিলের নিচে। এজন্য আমরা এক দফা দাবি নিয়ে এখন অনশন কর্মসূচীতে বসেছি। চাকুরি স্থায়ীকরন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
অনশনকারী কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি অসহায়ের মা জননী, আমাদের অভিবাবক, আপনার একটু সু-দৃষ্টি আমাদের মতো অবহেলিত ১৫’শ পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। এছাড়া চাকুরী-নীতিমালা অনুযায়ী আমাদেরকে চাকুরীতে স্থায়ীকরণের সুযোগ রয়েছে, বিভিন্ন উৎসবে আমাদেরকে বোনাস প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্টও আমাদের ব্যাপারে বলেছেন, যারা রাষ্ট্রের জন্য নিরলস কাজ করে, তাদের জন্য রাষ্ট্রের কিছু করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের জন্য যে পারিশ্রমিক বরাদ্দ দিয়েছেন তার মধ্যে থেকে কালো বিড়ালে একটা বড় অংশ খেয়ে ফেলে। আমরা এটাও জানি, আজকের এই প্রতিবাদ করার কারনে আমাদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসবে। আমরা আপনার সু-দৃষ্টি কামনা করছি।