Home মতামত ১২ নভেম্বর ১৯৭০, মধ্যরাত। “দ্যা গ্রেট ভোলা সাইক্লোন”

১২ নভেম্বর ১৯৭০, মধ্যরাত। “দ্যা গ্রেট ভোলা সাইক্লোন”

40

জাকারিয়া আজাদ বিপ্লব:

আঘাত হেনেছিলো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে দ্বীপজেলা ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন ও দৌলতখানের উপর। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলো তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ও তার পশ্চিমা সরকারের অবহেলায়। মনপুরার ২২ হাজার মানুষের ১৬ হাজার মানুষ ও তজুমদ্দিনের ১ লক্ষ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষই প্রাণ হারান এতে।

ইয়াহিয়া খান ১৪ তারিখে চীন থেকে ফিরলেও, ঢাকায় না নেমে সরাসরি পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। অথচ তিনি ১৩ তারিখেই উপদ্রুত এলাকায় আসতে পারতেন। অব্যাহত সমালোচনার মুখে ২৬ নভেম্বর সি-প্লেনে করে ভোলায় যান এবং হেলিকপ্টারে ১০ হাজার মিটার উপর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এর ফলে প্রকৃত ভয়াবহ পরিস্থিতি তিনি এড়িয়ে যাবার সুযোগ পেয়ে যান। এরচেয়ে নির্মম প্রহসন আর কিছু হতে পারে না।

অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলার মাটিতে পা রাখেন ১৪ নভেম্বর। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালান। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে বাঙালি নেতাকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ একই সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কারণে রূপ নেয়। এর ফলাফল আমরা দেখতে পাই ৭০’র নির্বাচনে ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে।

পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের এতোই অবহেলা করতো যে ১২ তারিখ বিকেলেও রেডিওতে কোনো ধরনের সতর্কতা জানানো হয়নি উপকূলের মানুষদেরকে। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। এটি করলে অন্তত ৫ লক্ষ নিরীহ মানুষকে বাঁচানো যেতো। ১৩ তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ দিনে বেশিরভাগ লোক মারা যায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবে। এটি করতে পারলেও আরও ৩-৪ লক্ষ লোক বাঁচানো যেতো। জালেম পাকিস্তান সরকার তেমন কোনো ত্রাণ তৎপরতা চালায় নি বাঙালিদের প্রতি শোষণের মনোভাব নিয়ে।

ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২২৪ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ১৮৫ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বিদ্যুৎ ঝলকানিতে জলোচ্ছ্বাসও হয় সেদিন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে এক নাম্বারে আখ্যায়িত করে দ্যা গ্রেট ভোলা সাইক্লোনকে।