Home মতামত ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে গলা ফাটানো প্রথম হিম্মতওয়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক কমরেড কার্ল মার্কস

ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে গলা ফাটানো প্রথম হিম্মতওয়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক কমরেড কার্ল মার্কস

72

সৈয়দ আমিরুজ্জামান:

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে দুনিয়া কাঁপিয়েছিলেন প্রথম হিম্মতওয়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক, শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক চিন্তা ও মতাদর্শের তাত্ত্বিক বিশ্লেষক, মানবজাতির সুমহান প্রতিভা, বিজ্ঞানসম্মত পথের প্রবক্তা মহান দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী কমরেড কার্ল মার্কস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতীয়রা কার্ল মার্কসকে মনীষী হিসেবে মেনে নেবে কেন? ভারতে কি মহাপুরুষদের অভাব পড়েছে যে, একজন বিদেশি চিন্তানায়কের শরণাপন্ন হতে হবে? আর কমরেড কার্ল মার্কস ভারতের জন্য কি ই বা করেছেন? এসব মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, প্রশ্নও আসে৷ আর এসব ধেয়ে আসা কথাবার্তাগুলোই মার্কস’কে নতুন করে জানার আগ্রহ উস্কে দেয়৷ কারো কারো মনে হয় বৈকি- ‘সত্যিই তো, কমরেড কার্ল মার্কস ভারতবর্ষের জন্য কি করেছে’? অন্ততঃ কি লিখেছে? এসব যাদের মনে হয়, তারা আসলে (তত্ত্বকে যদি বাদই দিই) ভারত নিয়ে কমরেড কার্ল মার্কস কি লিখেছেন তা কোনোদিন পড়েননি, পাছে মার্কসবাদী হয়ে যান সেই ভয়ে! সে সব কথা পরে হবে৷ প্রারম্ভে সংক্ষিপ্ত জবাব হলো— ‘মনীষীরা কখনও দেশি-বিদেশি হয়না’৷
ভারত নিয়ে কি লিখেছিলেন কার্ল মার্কস? প্রায় পৌনে দু’শো বছর আগে যখন গোটা বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজ চলছে!
পড়তে বসলেই উস্কে যাবে সব পড়া শেষ করার আগ্রহ৷ আর তখনই মনে হবে কমরেড কার্ল মার্কস’কে না জানলে ভারতকে জানার খানিকটা হলেও অপূর্ণতা থেকেই যায়। পড়া শেষ হলে, আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন, ভারতীয়দের হয়ে ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে গলা ফাটানো দুনিয়া কাঁপানো একজন প্রথম হিম্মতওয়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক কমরেড কার্ল মার্কস৷ ব্রিটিশের লন্ডনে বসে ব্রিটিশেরই মুণ্ডপাত, তাও আবার আন্তর্জাতিকমানের সব কাগজপত্রে এবং একদম চাঁচাছোলা ভাবে৷ একেই তো বলে বুকে বসে দাড়ি ছেঁড়া! সেটা শুধু কমরেড কার্ল মার্কস’ই পেরেছিলেন। ভারতের ইংরাজ শাসককে তিনি সরাসরি হামলাদার, জানোয়ার বলে উল্লেখ করেছিলেন। লক্ষ্যণীয়, তিনি যখন ‘ভারতে ব্রিটিশ শাসন’ শিরোনামে লিখেছেন সেই সময় কালটা তখন ১৮৫৩ (১০ই জুন, ২২শে জুলাই)৷ আর স্মরণযোগ্য যে, সেই সময় ভারতের জাতীয়স্তরে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোন রূপরেখাই গড়ে ওঠেনি৷
ভারতের তৎকালীন ভূমি বন্দোবস্ত, সামন্ত প্রথার নানা বর্ণনা করেছেন কমরেড কার্ল মার্কস৷ কিভাবে ইংরাজের ভারত জয় ও ভারতীয়দের উপর নির্যাতন চলে, তাঁর লেখায় ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করে গেছেন৷ তিনি এখানেই থেমে ছিলেন না৷ বৃহত্তর ভারতে ভূমি বন্দোবস্তের পরিবর্তনশীল নানা রীতি অধ্যয়নের সময় ঔপনিবেশিকতা, লুন্ঠন এবং ভারতীয়দের দাসত্বকে গুছিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি একটা আস্ত বই ই লিখে ফেলেছিলেন৷ ৬৬৪ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ভারতের ঘটনাবলীর সন তারিখ ধরে লিপিবদ্ধ করে গেছেন৷ যা প্রকাশিত হয়েছে ‘ভারতীয় ইতিহাসের কালপঞ্জী’ নামে৷ ভারত সম্পর্কে তার পড়াশোনার গভীরতা যে কত নিবিড় ছিল তা সহজেই তা অনুমেয়৷ আর সেই সময় তিনি যা লিখেছেন, সমকালীন ভারতের কোন লেখক তা করে উঠতে পারেননি৷ তাঁর কালপঞ্জী দেখিয়েছে কিভাবে ভারতীয়দের নির্মম শাসনের ফলে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটে৷
ভারতে ব্রিটিশ সৃষ্ট ভূমিব্যবস্থা ও রাজস্ব-শোষণকেও পর্যালোচনা করেছেন কমরেড কার্ল মার্কস। তিনি লিখেছেন—“ভারতে বৃটিশ তাদের পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে রাজস্ব ও যুদ্ধের বিভাগটি গ্রহণ করেছিল, কিন্তু পাবলিক ওয়ার্কসটা একেবারেই অবহেলা করেছে”৷
ব্রিটিশদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যে লুন্ঠন, তা এখানে স্পষ্ট। মার্কস একের পর এক তথ্য দিয়ে কৃষক-শোষণের চিত্রকে তুলে ধরেছেন— “রায়তরা (কৃষকরা) জনসংখ্যার ১১/১২ ভাগ ২৩ অর্থাৎ প্রায় নব্বই শতাংশ; ‘যেমন মাদ্রাজ বোম্বাই তেমনি বাঙলায় রায়তরা অসহ্য দুঃস্থ হয়ে পড়েছে;’২৪ ‘মোট নীট রাজস্বের প্রায় তিন পঞ্চমাংশ আসে ভূমি থেকে, এক সপ্তমাংশ আফিম থেকে, এক নবমাংশের কিছু বেশী লবণ থেকে। এইগুলি থেকে একত্রে আসে মোট প্রাপ্তির শতকড়া ৮৫ ভাগ। … রাজস্বের মোট ভাগটা আসে জমি থেকে;’২৫ ‘ভারতের জন্য ব্যয়যোগ্য টাকাটার দুই তৃতীয়াংশ বা শতকরা ৬৬ ভাগ হল সামরিক খরচ আর পাবলিক ওয়ার্কস-এর খরচ মোট আয়ের শতকরা পৌনে তিন ভাগের বেশী নয়।” অর্থাৎ ইংরাজ শোষণের নিষ্ঠুরতম শিকার কৃষকদের কাছ থেকে লুন্ঠিত অর্থ ইংরেজ ব্যয় করত ঔপনিবেশিক যুদ্ধের জন্য। ভারতের জন্য থাকতো না বললেই চলে।
– – -“ভারতে ব্রিটিশ আয়ের প্রধান উৎস ছিল রাজস্ব-শোষণ। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা প্রতিষ্ঠা করেছিল নতুন ভূমিব্যবস্থা”। কমরেড কার্ল মার্কসের লেখা থেকে এটা স্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে যে— ” ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সমস্যা ছিল মূলত কৃষকদের সমস্যা। হস্ত-শিল্প ধ্বংস ও রাজস্ব শোষণ দুটোর ভুক্তভোগী ছিল কৃষক”।
ইংরেজ-সৃষ্ট ভূমিব্যবস্থার সারবস্তু তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে— “জমিদারী, রায়তওয়ারী, ও গ্রামব্যবস্থা এই তিনটে ধরনই হলো কোম্পানীর হাতে রাজস্ব-শোষণের বিভিন্ন উপায় মাত্র’৷ ‘জমিদারী ও রায়তওয়ারি-দুটোই ব্রিটিশ স্বেচ্ছাচারী হুকুমে কার্যকরী কৃষি বিপ্লব এবং পরস্পর বিরোধ – – – -৷
ইংরেজরা পাঁচ সালা, দশ সালা বন্দোবস্তে চরম বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছিল৷ পরে বাধ্য হয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে৷ কমরেড কার্ল মার্কস লিখেছেন— “চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে যে জমিদারগোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছিল, তারা ছিল সমাজের পরগাছা। বাংলায় কৃষকসম্প্রদায় এই জমিদার ও একসারি মধ্যস্বত্বভোগীর শোষণের জাঁতাকলে ছিল নিষ্পেষিত। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল মহাজনের শোষণ। এই মহাজনী শোষণ শুধু বাংলায় নয়, সারা ভারতে কৃষকদের রক্ত চুষে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলত”।
কমরেড কার্ল মার্কস এ প্রশ্নে তাঁর বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণকে প্রগাঢ়ভাবে বর্ণনা করেছেন। বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে যে ইংরেজের দালাল বণিক শ্রেণীই জমিদাররূপী জোঁকে পরিণত হয়েছিল, তাও তাঁর বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে। তিনি লিখেছেন— “আদি জমিদার শ্রেণী কোম্পানীর চাপে অচিরেই অন্তর্হিত হয় এবং তার জায়গা নেয় ব্যবসায়ী ফাটকাবাজেরা। সরকারের খাস তত্ত্বাবধানে দেওয়া মহাল ছাড়া বাংলার সমস্ত জমি এখন এদের হাতে। এই সব ফাটকাবাজেরা … আবার পত্তনিদার নামক ‘বংশানুক্রমিক’ মধ্যস্বত্ব-ভোগী একটা শ্রেণীর সৃষ্টি করেছে… ফলে গড়ে উঠেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের একটা নিখুঁত বহু-ধাপ ব্যবস্থা, যা তার সমস্ত ভার চাপিয়ে দিচ্ছে হতভাগ্য কৃষকদের উপর”৷
রায়তী কৃষকের চরম দুর্দশা ও অধিকারহীনতাকে প্রতিফলিত করে কমরেড কার্ল মার্কস কলম ধরেছিলেন৷ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, যা বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। সেই মন্বন্তর সম্পর্কে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন—
“১৭৬৯ থেকে ১৭৭০ সালের মধ্যে সমস্ত চাল কিনে নিয়ে এবং প্রচুর দাম না পাওয়া পর্যন্ত তা বেচতে অস্বীকার করে একটি দুর্ভিক্ষ বানিয়ে তোলে ইংরেজরা”।
বাংলার তাঁত শিল্প, যা জগৎ বিখ্যাত ছিল৷ সেই তাঁত শিল্পের অনুশোচনা করতে গিয়ে কমরেড কার্ল মার্কস পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন— “১৮১৮ থেকে ১৮৩৬ পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেন থেকে ভারতে সুতা চালানের অনুপাত বৃদ্ধি পায় ১ থেকে ৫২০০ গুণ। ১৮২৪ সালে ভারতে ব্রিটিশ মসলিনের চালান ১০,০০,০০০ (দশলক্ষ) গজও প্রায় নয়, অথচ ১৮৩৭ সালে তা ৬,৪০,০০,০০০ (ছয় কোটি চল্লিশ লক্ষ) গজও ছাড়িয়ে যায়। ঐ একই সময়ে শহরের জনসংখ্যা ১,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) থেকে ২০,০০০ (বিশ হাজার) এ নেমে আসে। বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত এই সব ভারতীয় শহরগুলির অবয়বটুকুই কিন্তু চরম ফলাফল নয়। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে কৃষি ও হস্তশিল্পের যে বন্ধন ছিল ব্রিটিশ বাষ্প ও বিজ্ঞান তাকে নির্মূল করে দিয়েছে।’’
কমরেড কার্ল মার্কস লিখেছেন, ‘‘ব্রিটিশ হামলাদাররা এসে ভারতীয় তাঁত ভেঙে ফেলে, ধ্বংস করে চরকা। ইংলন্ড শুরু করে ইউরোপের বাজার থেকে ভারতীয় তুলাবস্ত্রকে বিতাড়ন করতে। অতঃপর সে হিন্দুস্তানে সুতা পাঠাতে থাকে এবং পরিশেষে তুলার মাতৃভূমিকেই কার্পাস বস্ত্র চালান দিয়ে ভাসিয়ে দেয়।”
গ্রন্থে গভর্নর জেনারেলের ১৮৩৩-৩৪ সালের এক রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে মার্কস লিখেছেন, “ভারতে সৃষ্ট দুর্দশা বাণিজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সুতাবয়নকারীদের অস্থিতে ভারতবর্ষের মাটি সাদা হয়ে পড়ছে।’’
ভারতীয়দের উদাসীনতা সম্পর্কে কমরেড কার্ল মার্কস আক্ষেপ করে লিখেছেন— “যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষ বা মহামারী মড়কে গ্রামগুলি বিধ্বস্ত হলেও একই নাম একই সীমানা একইস্বার্থ এমনকি একই পরিবারসমূহ চলে এসেছে যুগের পর যুগ৷ রাজ্যের ভাঙাভাঙি, ভাগবিভাগ নিয়ে গ্রামবাসীরা মাথা ঘামায়নি; গ্রামটি অখন্ড হয়ে থাকলেই হলো, কোন্ শক্তির কাছে তা গেল, কোন্ সম্রাটের তা করায়ত্ব হলো এ নিয়ে তারা ভাবে না!”
ভারত একটা সম্পদ সমৃদ্ধ, যথেষ্ট মেধাসম্পন্ন, বৃহত্তর ভূখণ্ডের দেশ, অথচ এই জাতি দীর্ঘ পদানত৷ কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেছেন ভারতে ‘ধর্ম’ শোষণের এবং দাসত্বের অন্যতম উপাদান হিসাবে কাজ করে চলেছে অনন্তকাল ধরেই৷ তিনি লিখেছেন— ” শান্ত সরল গ্রাম গোষ্ঠীগুলি যতই নিরীহ মনে হোক, প্রাচ্য স্বৈরাচারের তারাই দৃঢ় ভিত্তি হয়ে এসেছে চিরকাল, মনুষ্য মানসকে তারাই যথাসম্ভব ক্ষুদ্রতম পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে, তাকে বানিয়েছে কুসংস্কারের অপ্রতিরোধী ক্রীড়ানক, তাকে করেছে চিরাচরিত নিয়মের দাস, হরণ করেছে তার সমস্ত কিছু মহিমা ও ঐতিহাসিক কর্মোদ্যম৷ সে বর্বর আত্মপরতা কোন একটা ক্ষুদ্র ভূমিখন্ড আঁকড়ে শান্তভাবে প্রত্যেক্ষ করে গেছে সাম্রাজ্যের পতন, অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার অনুষ্ঠান, বড় বড় শহরের অধিবাসীদের হত্যাকাণ্ড, প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর চাইতে বেশি কিছু ভাবেনি এদের; এবং দৈবাৎ আক্রমণকারীর লক্ষ্যপথে পড়লে যে নিজেও হয়ে উঠেছে আক্রমণকারীর এক অসহায় শিকার, সে আত্মপরতার কথা যেন না ভুলি৷ যেন না ভুলি যে এই হীন, অচল ও উদ্ভিদ-সুলভ নিশ্চল জীবন, এই নিষ্ক্রিয় ধরনের অস্তিত্ব থেকে অন্যদিকে, তার পাল্টা হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে বন্য, লক্ষ্যহীন অপরিসীম ধ্বংসশক্তি এবং হত্যা ব্যাপারটিকেই হিন্দুস্তানে পরিণত করেছে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে৷ যেন না ভুলি যে ছোট ছোট এইসব গোষ্ঠী ছিল জাতিভেদপ্রথা ও ক্রীতদাসত্ব দ্বারা কলুষিত, অবস্থার প্রভুরূপে মানুষকে উন্নত না করে তাকে করেছে বাহিরের অবস্থার পদানত, স্বয়ংবিকশিত একটি সমাজ-ব্যবস্থাকে তারা পরিণত করেছে অপরিবর্তন প্রাকৃতিক নিয়তি রূপে এবং এই ভাবে তৈরি করেছে প্রকৃতির এমন পূজা যা মানুষকে পশু করে তোলে, প্রকৃতির প্রভূ যে মানুষ তাকে হনুমানকারীদের বানর এবং সবলাদেবী রূপে গরুর অর্চনায় নতুন করে নতজানু করে অধঃপতনের পরিচয় দিয়েছে৷
তিনি আরো লিখেছেন— “দেশটা শুধু হিন্দু আর মুসলমানেই বিভক্ত নয়, বিভক্ত উপজাতিতে, জাতিভেদে, এমন একটা স্মৃতিসাম্যের ভিত্তিতে সমাজটার কাঠামো গড়ে উঠেছিল যা এসেছে সমাজের সকল সভ্যদের মধ্যস্থ একটা সাধারণ বিভাগ ও প্রথাবদ্ধ পরস্পর-বিচ্ছিন্নতা থেকে; — এমন একটা দেশ ও এমন একটা সমাজ, সেকি বিজয়ের অবধারিত শিকার হয়েই ছিল না? হিন্দুস্থানের অতীত ইতিহাসের না জানলেও অন্তত এই একটা মস্ত ও অবিসংবাদী তথ্য তো রয়েছে যে, এমনকি এই মুহূর্তেও ভারত ইংরেজ রাজ্যভুক্ত হয়ে আছে ভারতেরই খরচে পোষিত এক ভারতীয় সৈন্য বাহিনী দ্বারাই”৷
ভাবতেই অবাক লাগে- একটা তেপান্তরের দেশে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও কতটা গভীরে অনুধাবন করলে এমনটা লেখা যায়!! আপাততঃ এখানেই থামি৷
তবে পরিশেষে আবারও বলি- নীতি, সত্য, বিদ্যা, জ্ঞান, তত্ব, সূত্র, ধারণা, উপদেশ, অভিজ্ঞতা, মতবাদের কখনও দেশী- বিদেশী হয় না৷

-লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।