Home জাতীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক অভিযানের নামে স্কুল শিক্ষককে মারধোর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক অভিযানের নামে স্কুল শিক্ষককে মারধোর

41

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক উদ্ধারের অভিযানের নামে স্কুল শিক্ষক নাজমুল হাসানকে মারধর ও হাতকড়া পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। মুচলেকা নিয়ে ওই স্কুল শিক্ষককে ছাড়া পান। গত রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নাজমুল জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সহেদেবপুর গ্রামের মো. আব্দুল হাই ভূঁইয়ার ছেলে। তবে দীর্ঘ ৩৩-৩৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসবাস করছেন নাজমুল। আর ১২ বছর ধরে জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় মৃত আব্দুল আওয়ালের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় নাজমুলের পরিবার। তিনি বিজয়নগর উপজেলার দক্ষিণ পেটুয়াজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নাজমুল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
নাজমুলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কান্দিপাড়ার প্রয়াত আব্দুল আওয়ালের বাড়ির তৃতীয় তলায় বড় ছেলে রাজীব আহমেদ থাকেন এবং একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্কুল শিক্ষক নাজমুল বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন। গত রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাজমুলের বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা আব্দুল হাই ভূঁইয়া (৮০) কাপড় আনতে বাড়ির ছাদে যান। সেসময় আব্দুল আওয়ালের বাড়িতে ডিবি পুলিশের আটজন সদস্য মাদক উদ্ধারের অভিযানে যান। তারা তালা ভেঙ্গে আবদুল আউয়ালের ছেলে রাজিবের ঘরে প্রবেশ করেন। এসময় ডিবি পুলিশের সদস্যরা ছাদ থেকে বৃদ্ধ আব্দুল হাই ভূইয়াকে ডেকে রাজীবের ঘরে নিয়ে যান। সেসময় একজন নিজেকে ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। তিনি ঘরে না ফেরায় ২০-২৫মিনিট পর নাজমুল ছাদের দিকে যান। বৃদ্ধ বাবাকে ডিবি পুলিশ সদস্যের মাঝে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে নাজমুলও রাজীবের কক্ষে যান। তার বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের সদস্যরা ক্ষেপে যান। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশের সদস্যরা বৃদ্ধ বাবার সামনেই নামজুলকে কানে, গালে, কপালে ও পিঠে চর-থাপ্পর ও কিলঘুসি মারেন। পরে দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাজীবের ঘরের বিছায়নায় নামজুলকে বসিয়ে পাশে দুটি মাদকের বোতল রেখে ছবি তুলেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। পরে নাজমুলের কাছ থেকে পুলিশ সদস্যরা একটি মুচলেকা আদায় করেন।
স্কুল শিক্ষক নামজুল হোসেন বলেন, আমার বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। গত দুই দিন আগেও হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাবাকে বাড়িতে এনেছি। ২০-২৫মিনিট হয়ে গেলেও বাবা ঘরে না আসায় আমি ছাদের দিকে যাই। তখনই বাবাকে রাজীবের ঘরে ডিবি পুলিশ সদস্যদের মাঝে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। বাবাকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় বাবা অস্বস্তিবোধ করছিলেন। আমি তখন বলেছি, সাক্ষী হিসেবে বাবার নাম দিতে চাইলে দেন, আমি বাবাকে নিয়ে যাই। প্রয়োজন হলে পরে আসবে বললে তারা আরো ক্ষেপে যান। পরে পুলিশের সদস্যরা আমাকে মারধর করেন। এখনো আমার কান ও মুখের চোয়াল ব্যথা করছে। হাতকড়া পড়িয়ে পাশে দুটি বোতল রেখে ডিবি পুলিশ সদস্যরা আমার ছবি তুলেছে। আমি তাদের কাজে বাঁধা দিয়েছি এবং এতে আমি অনুতপ্ত লিখে তারা আমার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে।
নাজমুলের বাবা আব্দুল হাই ভূইয়া বলেন, ডিবি পুলিশের মারধরে ছেলের মাথা থেকে নামাজের টুপি পড়ে যায়। নাজমুল টুপি তুলে পড়তে চাইলে তারা তা ঢিল ছুড়ে ফেলে দেয়। চোখের সামনেই বিনা কারণে ডিবি পুলিশ সদস্যরা ছেলেকেটা মারধর করেছে। আমি ও আমার পরিবার এখন পুলিশের আতঙ্কের মধ্যে আছি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, ওই ভদ্রলোক (নাজমুল) একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি মাদক উদ্ধার অভিযানে আমাদের বাধা দিয়েছেন। এই মর্মে মুচলেকাও দিয়েছেন। মারধর ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগ সঠিক না।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের মাদক উদ্ধারের অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যদের মাদক উদ্ধারের অভিযান ভিডিও করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযানের পুরো ভিডিও দেখে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।