Home সারাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোরীসহ ৩জনের লাশ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোরীসহ ৩জনের লাশ উদ্ধার

35

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলছাত্রী আশিকা জাহান সিপা (১৭), ক্লান্ত রঞ্জন শীল-(২২) ও আমির মিয়া-(৩৩) নামে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়া বোর্ডির মাঠ সংলগ্ন পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় কিশোরী, সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রাম ও সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের চাকলাসার থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ক্লান্ত রঞ্জনশীল জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নীহার রঞ্জন শীলের ছেলে। সে সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ডিপ্লোমা-ইন-মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট (ম্যাটস) এর ছাত্র হিসেবে ইন্টারনিশীপ করতো।
অপরদিকে আমির মিয়া সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের চাকলাসার গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহর ছেলে। রবিবার দুপুরে গ্রামের একটি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ক্লান্ত রঞ্জন শীলের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার রঞ্জন হাসপাতালের ডিউটি করে সকালে বাড়িতে ফিরেন। রাতে সে তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেয় “জীবনডাই আফসোস”।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে রঞ্জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব হোসেন জানান, রঞ্জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে সহকারি পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ একটি পুকুর থেকে আমির মিয়ার লাশ উদ্ধার করেন। পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমীর নেশা করতো। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে প্রায়ই সে নিখোঁজ হতেন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়া বোডিং মাঠ পুকুর থেকে আশিকা জাহান সিপা (১৭) নামের এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সিপা জেলা শহরের গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের শাহিন মিয়ার মেয়ে। তারা পরিবারসহ জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিপার টিউশন শিক্ষক ও প্রেমিক বাইজিদ সরকারকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ। আটক বাইজিদ সরকার জেলার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের খিদিরপুরের মুখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষবর্ষে অধ্যয়নরত এবং শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাইজিদ সরকার মুন্সেফপাড়ায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে টিউশনি করান। সিপাকেও তার বাসায় গিয়ে গত তিন বছর ধরে পড়াচ্ছিলেন বাইজিদ। এরই মধ্যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি সিপা বিয়ের জন্যে বাইজিদকে চাপ দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। শনিবার (২৭ আগস্ট) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে সিপা কাউকে কিছু না বলে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অনেক খুঁজাখুজি করে তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে বোডিং মাঠ পুকুরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় প্রেমিক বাইজিদ সেখানে এলে তাকে পিটুনি দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, মরদেহ ভেসে ওঠার খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মেয়েটির প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।