Home সারাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদলের আনন্দ মিছিলে পদবঞ্চিতদের হামলা, অর্ধশতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদলের আনন্দ মিছিলে পদবঞ্চিতদের হামলা, অর্ধশতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ

37

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কিছুতেই কমছে না। দফায় দফায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষন, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় এই সংগঠনটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নবিদ্ধ। আর এসব সংঘর্ষে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি যুবদল, কৃষকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যোগ দিচ্ছে। এতে করে পরিস্থিতি যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। তবে চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা বিএনপি নীরব। কমিটি ঘোষনার পর থেকে গত ৪ দিন ধরে তুমুল উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে জেলা বিএনপির ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে চলমান বিবাদের মধ্যেই সোমবার সকালে শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠে দু’পক্ষই কর্মসূচী গ্রহন করে। তবে পুলিশের অনুমতি না থাকায় ছাত্রদলের নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দরা শহরতলীর বিরাসার থেকে শুভেচ্ছা মিছিল করতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফোজায়েল চৌধুরীর নেতৃত্বে পদবঞ্চিতরা ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় নতুন কমিটির নেতাকর্মীরাসহ তাদের পক্ষে যুবদল, কৃষকদলের নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এতে দু’পক্ষই দা, ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিরাসার মোড়ে অন্তত ১০টি ককটেল বিষ্ফোরণের পর মুহুর্তেই এলাকাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিরাসার সংলগ্ন খৈয়াসার রোডে দু পক্ষই দা ও ককটেল হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক ককটেল নিক্ষেপে পুরো এলাকায় তীব্র আতংকে মানুষ দিক বেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অবিষ্ফোরিত বেশ কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করে পানিতে ডুবিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পুলিশ এ্যাকশনে যাওয়া মাত্রই উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে। তবে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ শহরের মধ্যপাড়া এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। তবে সেখানেও পুলিশ উপস্থিত হলে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রদলের ৭ সদস্যের আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে শাহীনুর রহমান শাহিনকে আহবায়ক ও সমীর চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির ঘোষনার পর থেকেই শহরের পদবিঞ্চত নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দাবী কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ঠাই দেয়া হয়েছে। এরই জেরে শুক্রবার বিকেলে জেলা ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির আহবায়ক রুবেল চৌধুরী ফোজায়েল, সদস্য সচিব মহসিন মিয়া হৃদয় ও যুগ্ম আহবায়ক সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা শহরের টিএ রোড ও পাওয়ার হাউস রোডে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল শেষে তারা কান্দিপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহবায়ক শাহীনুর রহমান ও কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক কাউসার কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর চালায়। এছাড়াও নবগঠিত কমিটির সদস্যদের জেলা কৃষকদলের আহবায়ক আবু শামীমের কান্দিপাড়া বাড়িতে শুভেচ্ছা দেওয়ার খবরে তার বাড়িতেও দা ও লাঠিশোটা হামলা চালায় পদবঞ্চিতরা। শনিবার রাতেও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ফের ভিপি শামীম, নতুন কমিটির আহ্বায়ক শাহীনসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করে। তবে এসময় তাদের পক্ষের লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিসহ ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
রবিবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান শাহিন এর নেতৃত্বে শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠে শুভেচ্ছা মিছিল এবং সদ্য বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক ফোজায়েল চৌধুরী চলমান লোডশেডিং এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী দেয়। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার সকাল থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম শেখ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরজুড়ে অবস্থান নেয়। তবে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ শহরতলীর বিরাসার পয়েন্ট থেকে আনন্দ মিছিল শুরু করলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে উভয় পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, কমিটি গঠনের প্রতিদ্বন্ধিতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার হতে পারেনা। আমরা শান্তি চাই। উভয় পক্ষের ভুল বুঝাবুঝির নিরসন করে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সমস্যা সমাধানে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষনা করলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। বিরাসার মোড়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কান্দিপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের এসআই শ্রীবাস বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জেলা কৃষকদলের আহবায়ক আবু শামীম মো.আরিফ, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক ফুজায়েল চৌধুরী, সাবেক সদস্য সচিব মহসিন হৃদয়সহ ৩০ জনকে নামীয় সহ ৯০/৯৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায়ও মামলা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।